সুনামগঞ্জে ২ আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছেনি ত্রাণ, নেই বিশুদ্ধ পানির সুবিধা

সন্তান কোলে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে আশ্রয় নেওয়া এক নারী। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ও অবিরাম বৃষ্টিতে হাওরের পানি উপচে ঢুকে পড়ছে বিভিন্ন এলাকায়। নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে ছুটছেন বন্যার্তরা। তবে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার দুটি আশ্রয়কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত পৌঁছেনি কোন ত্রাণ। পানিবন্দী অধিকাংশ মানুষ খাবার, স্যানিটেশন ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছে।

আজ শুক্রবার বিকেলে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করে দেখা যায়, অনেক গ্রাম পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। উপজেলার হাছননগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ আশ্রয়কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত কোন ত্রাণ পৌঁছেনি। কোনো সুবিধাদি ছাড়াই বানভাসিরা গাদাগাদি করে সেখানে অবস্থান করছেন।

হাসননগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া গৃহবধূ জাহেরুন বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ছোট ৩ সন্তান নিয়ে বুধবার এখানে এসেছি। আজ পর্যন্ত কেউ খোঁজখবর নেয়নি। চাল নেই। কাল থেকে না খেয়ে আছি।'

হাছননগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া বন্যার্ত পরিবার। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

মো. ফয়সল মিয়া (৫০) বলেন, 'আমরা না খেয়ে আছি। কিন্তু কেউ আমাদের দিকে তাকাচ্ছে না। স্ত্রীসহ পরিবারের ৬ সদস্যকে নিয়ে কষ্টে আছি।'

তিনি বলেন, 'শুধু আমি না এখানে ৩০টি পরিবার আছে। কেউ ত্রাণ বা কোনো কিছুই পায়নি।'

সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ৩৫টি পরিবার গাদাগাদি করে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে যারা নতুন করে আসছেন তারা কেউ জায়গা পাননি।

সুলতানপুর থেকে এসে আশ্রয় নিয়েছেন শিল্পী বেগম। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার ঘরের মেঝেতে পানি চলে এসে খাটে উঠেছিলাম। পানি বাড়ছে দেখে গতকাল সকালে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে আসি। কিন্তু থাকার জায়গা এখনো পাইনি। অন্য রুমগুলোর তালা খুলে দেওয়ার কথা বললেও কেউ শুনছে না।'

আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এখনো পৌঁছায়নি ত্রাণ, নেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

নাসিমা আক্তার মঙ্গলবার রাত ২টায় আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন। তিনি বলেন, 'আশ্রয়কেন্দ্রে আসার পর কেউ দরজা পর্যন্ত খুলে দেয়নি। উপায় না পেয়ে আর সন্তানরা যেন না ভিজে যায়, এ জন্য দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করি। তবে তারা এখনো টয়লেট খুলে দেয়নি।'

'এখানে পানির ব্যবস্থা নেই। ত্রাণের কথাও কেউ জিজ্ঞেস করে না। মানুষজন যেখানে সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করছে। নিরুপায় হয়ে এখানে আছি,' যোগ করেন তিনি।

ওই কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া আলেয়া বেগম (৭০) বলেন, 'মঙ্গলবার এখানে এসেছি, কেউ খোঁজখবরও নেয়নি।'

তার মতো একই অভিযোগ করেন মরিয়ম বেগমসহ সেখানে থাকা প্রায় ৩৫টি পরিবার।

ওই কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া দিনমজুর সুলতান আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, 'আমি ৬ সদস্যকে নিয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো সাহায্য পাইনি। না খেয়ে আছি।'

যারা আশ্রয় কেন্দ্রে আছে তারা বিশুদ্ধ পানি এবং টয়লেটের সুবিধা পাচ্ছে না কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ইমরান শাহরিয়ার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিষয়টা খোঁজ নিয়ে দেখছি।'

যোগাযোগ করা হলে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, 'আগামীকাল সুনামগঞ্জ পৌরসভার মাধ্যমে হাছন নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে বন্যায় আশ্রয় নেওয়াদের ত্রাণ দেওয়া হবে।'

আশ্রয়কেন্দ্রে বিশুদ্ধ পানি ও টয়লেটের সুবিধার বিষয়ে প্রশ্ন করলে জেলা প্রশাসক ব্যস্ত বলে ফোন কেটে দেন।

Comments

The Daily Star  | English

July uprising: The wounds that are yet to heal, one year on

This week marks one year since 15-year-old Md Shahin Alam’s life was forever changed -- not by illness or accident, but by a bullet that tore through his left leg during a rally on August 5, 2024.

15h ago