পানি নিয়ে বিপাকে তেজতুরি বাজার এলাকার বাসিন্দারা

তেজতুরি বাজার জামে মসজিদের নলকূপ থেকে পানি দেওয়া সম্প্রতি বন্ধ করে দিয়েছে মসজিদ কর্তৃপক্ষ। ছবি: সংগৃহীত

'দুর্গন্ধে ওয়াসার পানি খাওয়া যায় না। এদিকে নলকূপের পানি দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে। জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বেড়ে চলেছে, এর মধ্যে এখন পানি কিনে খেতে হচ্ছে। কেনা পানি বলে কম করে খেতে হচ্ছে। এতে ইউরিন ইনফেকশন দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় দিশেহারা হওয়া ছাড়া কোনো উপায় দেখতে পাচ্ছি না।'

সম্প্রতি রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার পূর্ব তেজতুরি বাজারের পাশের মসজিদে গভীর নলকূপের সুপেয় পানির সরবরাহ হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপরই ওই এলাকার ছাত্রী হোস্টেলে থাকা শিক্ষার্থী জান্নাতুস সুলতানা এমন প্রতিক্রিয়া জানান।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি এখানে দুই বছর ধরে আছি। এতদিন মসজিদ থেকে নলকূপের পানি এনে পান করতাম। তবে এবার ঈদের ছুটিতে বাড়ি থেকে আসার পর জানতে পারি মসজিদ কর্তৃপক্ষ পানি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।'

'ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ থাকায় পানি কিনে খাচ্ছি, যা আমার মতো শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যয়বহুল। এমন হলে আমাদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে যাবে,' বলেন তিনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৩-৪ বছর তেজতুরি বাজার জামে মসজিদ কর্তৃপক্ষ বিনামূল্যে স্থানীয়দের পানি দিয়ে আসছিল। প্রথমে মসজিদ কমিটির সদস্যদের, পরে এলাকাবাসীর জন্য, তারপর সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় মসজিদের গভীর নলকূপের পানির লাইন।

প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সিরিয়াল ধরে খাবার পানি সংগ্রহ করতেন এলাকার বাসিন্দারা। এই এলাকায় এটিই একমাত্র বিশুদ্ধ খাবার পানির উৎস ছিল। তবে এবার রোজার ঈদের পর তা হঠাৎ করেই বন্ধ করে দেওয়া হলে খাওয়ার পানি নিয়ে বিপাকে পড়েন এলাকাবাসী।

এই এলাকার প্রায় ৩৫০-৪০০টি পরিবার ছাড়াও ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসিক হোস্টেল বা মেসের বাসিন্দারা মসজিদের সরবরাহ করা পানির ওপর নির্ভরশীল ছিলেন।

এখানকার একটি বাসায় ভাড়া থাকেন হেলেনা আক্তার। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মসজিদ পানি দেওয়া বন্ধ করার পর থেকে সমস্যায় পড়েছি। ওয়াসার পানি খেয়ে যেমন তৃপ্তি পাচ্ছি না, আবার অসুস্থ বোধ করছি। ওয়াসার পানি দিয়ে গোসলসহ বাকি কাজ করা গেলেও, খাওয়া যায় না। পরিবারের সদস্য বেশি, তাই পানি কিনে পোষায় না। বাধ্য হয়ে ওয়াসার পানি খেতে হচ্ছে।'

'নিয়মকানুন আরোপ করে হলেও মসজিদের পানি দেওয়া অব্যাহত রাখা উচিত ছিল,' বলেন তিনি।

মসজিদের বিপরীত পাশের দোকানদার আব্দুর রহিম ডেইলি স্টারকে জানান, 'মসজিদ থেকে যখন পানি দিত, এখানে ভিড় লেগে যেত। এখানকার পানি নিরাপদ হওয়ায় এলাকার সবাই আসত, সিরিয়াল করে পানি নিতে হতো। অনেক সময় সিরিয়াল নিয়ে ঝগড়া-বিশৃঙ্খলা হতো। এসব নিয়ন্ত্রণ না করতে পেরে পানি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে মসজিদ কমিটি, যার জন্য এখন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।'

তবে মসজিদ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশৃঙ্খলতা এড়াতে নয়, ওয়াসা নিষেধ করায় তারা পানি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মসজিদ সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি ডেইলি স্টারকে জানান, 'আমরা এতদিন ধরে বিনামূল্যে পানি দিয়ে আসছি। তবে এখন ওয়াসা থেকে নিষেধাজ্ঞা আসায় তা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াসার জোন-৫ এর নির্বাহী প্রকৌশলী তৌহিদ এলাহী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উৎপাদন কমে যাওয়ায় মসজিদের নলকূপ থেকে পানি দিতে নিষেধ করা হয়েছে। তা না হলে কয়েকদিন পর পানির সঙ্গে বালি-পাথর উঠে আসবে।'

'ওই এলাকার সব বাসায় ওয়াসার পানির লাইন আছে। এখন পানির কোনো সমস্যা নেই। নলকূপের পানি ছাড়াও ভালো চলছে,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Taskforce report: 8 mega projects cost $7.5b more for graft, delay

The costs of eight mega projects soared by a staggering 68 percent, or $7.52 billion from the initial estimation, mainly due to poor and faulty feasibility studies, corruption, and delays in launch, according to the report of a government-formed task force.

8h ago