বাংলাদেশের মাথাপিছু ঋণ এবং সরকারের মাথাপিছু খরচ কত?

বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু আমরা কি কখনো চিন্তা করেছি যে, আজ বা গতকাল যে শিশুটি জন্ম নিয়েছে তার মাথাপিছু জাতীয় ঋণ কত? আর বাংলাদেশ সরকারই বা জনগণের জন্য মাথাপিছু কত টাকা খরচ করে?

সরকার প্রতিবছর লাখ লাখ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট ঘোষণা করে। আর এই বাজেট বাস্তবায়নের জন্য সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে লাখ কোটি টাকার রাজস্বও আদায় করে। তারপরও বাজেট বাস্তবায়নের সময় টাকার টান পড়েই যায়।

এ চাহিদা মেটাতে সরকার দেশি-বিদেশি বিভিন্ন উৎস থেকে ছোট-বড়, স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী—নানা অংকের ঋণ নেয়। এই ঋণ কিন্তু শোধ করার দায়ভার জনগণের ওপরেই বর্তায়। কারণ জনগণের দেয়া ভ্যাট আর ট্যাক্সের টাকা দিয়েই শোধ হয় এই ঋণ।

বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রনালয় ডেট বুলেটিন নামে একটি প্রকাশনা বের করে, যেখানে সরকার জাতীয় ঋণের তথ্য প্রকাশ করে।

এই ডেট বুলেটিনের সেপ্টেম্বর-২০২১ এর সংস্করণ অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার ১০ লাখ ৬ হাজার ২০২ কোটি টাকা ঋণ করেছিল। পরের অর্থবছরে এই ঋণের পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ৪৪ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা।

আর সরকারি হিসাবে মোট জনসংখ্যা অনুসারে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এসে বাংলাদেশের মাথাপিছু জাতীয় ঋণ দাঁড়ায় ৫৯ হাজার ৮২২ টাকা। পরের অর্থবছরে তা হয় ৬৮ হাজার ৩১ টাকা।

এখন প্রশ্ন দাঁড়ায়, বাংলাদেশ সরকার এত টাকা কার কাছ থেকে ধার নিল? আর বাংলাদেশের তুলনায় মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে কত?

বাংলাদেশ সরকার ২০২১ অর্থবছর পর্যন্ত যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছিলো, তার ৩ ভাগের ২ ভাগই ছিল দেশের বিভিন্ন উৎস থেকে নেওয়া। বাকিটা আসে বিদেশে থেকে।

বাংলাদেশের নাগরিকেরা যে সঞ্চয়পত্র কিনে রেখেছে, তার টাকাটা সরকার বিভিন্ন কাজে লাগায়। তার বদলে জনগণকে বিভিন্ন পরিমাণে সুদ দেয়। এই সঞ্চয়পত্রই হচ্ছে দেশি ঋণের সবচেয়ে বড় উৎস।

আর দেশি ঋণের বাকিটা আসে ট্রেজারি বিল, ট্রেজারি বন্ড ও সুকুক থেকে।

অন্যদিকে ২০২১ অর্থবছরে সরকার বিদেশি যেসব ঋণ নিয়েছিল, তার বড় অংশ এসেছিল বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি, জাপান, রাশিয়া, চীন এবং ভারত থেকে।

এখানে বলে রাখা ভালো যে, বিদেশি ঋণ নিলে সরকার তা পরিশোধ করার জন্য বেশি সময় পায় এবং এই ঋণের সুদের হারও বেশ কম থাকে।

দেশি ঋণের ক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্রের জন্য সরকারকে যে হারে সুদ সাধারণ মানুষকে দিতে হয়, তা যেকোনো বিদেশি ঋণের সুদের হারের চেয়ে অনেক বেশি।

এবার দেখা যাক, বাংলাদেশের পাশ্ববর্তী দেশগুলোর মাথাপিছু ঋণের কি অবস্থা?

দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় দেশ ভারতের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ২০১৯ সালে এসে দাঁড়ায় ১ লাখ ৫ হাজার টাকার উপরে। পরের অর্থবছরে যা ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় পৌঁছায়।

আর পাকিস্তানের মাথাপিছু ঋণ চলতি অর্থবছরের শুরুতে ছিল ৬৮ হাজার টাকা। আগের বছর এর পরিমাণ ছিল ৬১ হাজার টাকা।

আর বর্তমানে ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে চলা শ্রীলংকা কেবল যেসব বিদেশি ঋণ নিয়েছে, তা হিসাবে ধরলে তাদের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ২ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যখন বাংলাদেশের মাথাপিছু ঋণ এক বছরের ব্যবধানে প্রায় ১৪ শতাংশ বেড়ে ৬৮ হাজার টাকা হয়ে গেল, তখন বাংলাদেশের সরকার জনগণের জন্য মাথাপিছু কত টাকা খরচ করেছে?

বাংলাদেশের জনগণের জন্য সরকারের মাথাপিছু খরচ প্রতি বছরই বেড়েছে।

২০১৮ অর্থবছরে সালে বাংলাদেশ সরকার জনগণের জন্য বাজেটের মাধ্যমে মাথাপিছু খরচ করেছে ১৯ হাজার ৫৫৪ টাকা। এর ঠিক পরের বছরে এর পরিমাণ ২০ শতাংশের বেশি বাড়ানো হয়।

তার পরের ২ বছরে আরও ২ দফা বাড়িয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে জনগণের জন্য বাংলাদেশ সরকার মাথাপিছু ২৭ হাজার ৩১২ টাকা খরচ করে।

এখানে অবশ্যই জানা দরকার, এই যে মাথাপিছু ঋণ, তা হিসাব করা হয় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার যত টাকা ঋণ নিয়েছে তার উপর ভিত্তি করে। আর এই রাষ্ট্রীয় ঋণ পুরোটা একসঙ্গে শোধ করা লাগে না। বিধায় প্রতি বছর জাতীয় বাজেটের একটি অংশ সুদ পরিশোধ করার জন্য আলাদা করে রাখা হয়।

আরেকটি কথা না বললেই নয়। ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রেকর্ড বরাবরই ভালো ছিল এবং আছে।

আর বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, করোনাভাইরাসের প্রকোপ আর আর মেগা প্রকল্পগুলোর ঋণের কারণে হয়তো বাংলাদেশের উপর এখন ঋণ পরিশোধের চাপ বেড়েছে। কিন্তু ঋণ নিয়ে বাংলাদেশের এখনই মাথাব্যাথার কিছু নেই।

Comments

The Daily Star  | English

S Alam threatens int'l legal action against govt over asset freezing: FT

Alam says his family's bank accounts were frozen, they were subjected to travel bans, and they lost control of their companies, all while facing investigations for alleged money laundering without formal notification.

30m ago