কৃষকদম্পতির ভাগ্য ফেরালো পুদিনাপাতা

লালমনিরহাটে বাণিজ্যিকভাবে পুদিনাপাতা চাষ করছেন রুহুল আমিন বাবু-আনোয়ারা বেগম দম্পতি। ছবি: এস দিলীপ রায়

বাণিজ্যিকভাবে পুদিনাপাতা চাষে স্বাবলম্বী হয়েছেন লালমনিরহাটের সীমান্তবর্তী মোগলহাট ইউনিয়নের কর্ণপুর গ্রামের কৃষকদম্পতি রুহুল আমিন বাবু এবং আনোয়ারা বেগম।

তারা গত ১৮ বছর ধরে মাত্র ১০ শতাংশ জমিতে পুদিনাপাতা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে আশানুরূপ আয় করছেন।

তাদের উৎপাদিত পুদিনাপাতা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে।

পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে ১০ শতাংশ জমিতে উৎপাদিত পুদিনাপাতা বিক্রি করে প্রতি বছরে ২ লাখ টাকা আয় করছেন এই কৃষকদম্পতি। তারা প্রতি বছরে ১৩০০-১৪০০ মণ পুদিনাপাতা উৎপাদন করছেন। প্রতি কেজি পুদিনাপাতা ১৫০-২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

রুহুল আমিন বাবু (৫৮) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রায় ২০ বছর আগে পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়লে স্থানীয় এক চিকিৎসক পুদিনাপাতার রস খাওয়ার পরামর্শ দেন। আশপাশে কোথাও পুদিনাপাতা না পেয়ে বগুড়া থেকে এ পাতা সংগ্রহ করি। পরে নিজের প্রয়োজনে কয়েকটি পুদিনাপাতার গাছ বাড়ির পাশে রোপণ করি।'

তিনি জানান, এরপর তার পাশাপাশি আশপাশের লোকজন পুদিনাপাতা থেকে উপকার পেতে থাকেন। ওষুধি এ গাছের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাড়ির পাশে ১০ শতাংশ জমিতে পুদিনাপাতা চাষ শুরু করেন।

'পুদিনাপাতা বিক্রি করে প্রথম দিকে বছরে ১৫-২০ হাজার টাকা আয় হতো। বর্তমানে গড়ে ২ লাখ টাকা আয় করছি। মাত্র ১০ শতাংশ জমির পুদিনাপাতা বিক্রি করে সারা বছরের সংসার খরচ যোগাড় করছি,' বলেন রুহুল আমিন বাবু।

'সবজি বিক্রেতারা সরাসরি আমার খেত থেকে পুদিনাপাতা কিনে নিয়ে যান। এ ছাড়া, বেশ কয়েকটি হোটেল-রেস্টুরেন্ট মালিক আমার কাছ থেকে নিয়মিত পুদিনাপাতা কিনছেন।'

'দেশের বিভিন্নস্থানে আমার ক্রেতা আছে। তারা টাকা পাঠিয়ে দিলে আমি পুদিনাপাতা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেই,' যোগ করেন তিনি।

ছবি: এস দিলীপ রায়

রুহুল আমিন বাবু আরও বলেন, 'পুদিনাপাতা চাষে তেমন খরচ নেই। শুধু নিয়মিত নজরদারি ও যত্ন নিতে হয়। বর্ষাকাল ছাড়া সারা বছরই পুদিনাপাতা উৎপাদন করা যায়। বর্ষাকালে পুদিনাপাতা মরে যায়। সেসময় কিছু গাছ বিশেষ উপায়ে সংরক্ষণ করি। বর্ষা শেষে তা জমিতে রোপণ করি। মাত্র ২ সপ্তাহের মধ্যে পুদিনাপাতা বড় হয়ে উঠে।'

আনোয়ারা বেগম (৫০) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নিয়মিত পুদিনার যত্ন নিই। গ্রামের অনেক মানুষ বিনামূল্যে পুদিনাপাতা নিয়ে যান। পুদিনাপাতাই আমাদের সংসারকে সচ্ছল রেখেছে। এর বিক্রির টাকা দিয়ে সংসার, ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনা চলছে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমাদের বাড়ির পাশে ৬০ শতাংশ জমি রয়েছে। আমরা সে জমিতে বিভিন্ন ফসল চাষ করছি।'

লালমনিরহাট শহরের হার্বাল চিকিৎসক রমেশ চন্দ্র বর্মণ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পুদিনাপাতা ওষুধ জাতীয় ফসল। পুদিনাপাতার তৈরি বোরহানি সবার প্রিয়। বড় ধরনের পারিবারিক অনুষ্ঠান ও বড় হোটেল-রেস্টুরেন্টে পুদিনাপাতার বোরহানি তৈরি করা হয়। পুদিনাপাতা ভর্তা করে খাওয়া যায়। পুদিনাপাতা দিয়ে শরবত খান অনেকে। পুদিনাপাতা পেটের পীড়া, শরীর ব্যথা, আমাশয়সহ নানা রোগের উপকারে আসে।'

রংপুর শহরের এক হোটেল-রেস্টুরেন্ট মালিক আফতাব উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখানে সবসময় পুদিনাপাতার বোরহানির ব্যবস্থা থাকে। এখানে আসা অধিকাংশ ক্রেতাই বোরহানির ভক্ত। পুদিনাপাতা লালমনিরহাটসহ বিভিন্ন স্থানে কৃষকের কাছ থেকে সংগ্রহ করি।'

লালমনিরহাট শহরের সবজি বিক্রেতা নজরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পুদিনাপাতা দোকানে বিক্রি করে না। ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী পুদিনাপাতা কৃষকের কাছ থেকে সংগ্রহ করি।'

লালমনিরহাটে শুধু রুহুল আমিন বাবু-আনোয়ারা বেগম কৃষকদম্পতি বাণিজ্যিকভাবে পুদিনাপাতা উৎপাদন করছেন। তাদের কাছ থেকে পুদিনাপাতা সংগ্রহ করে ক্রেতাদের সরবরাহ করা হয়।

লালমনিরহাট সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ইফতেখার সিদ্দিকা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পানি জমবে না এমন উঁচুস্থানে পুদিনাপাতা চাষ করতে হয়। দুই-একজন ছাড়া কেউ পুদিনাপাতা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন না। অনেক কৃষক নিজের প্রয়োজনে বাড়ির আশেপাশে পুদিনাপাতার গাছ লাগিয়ে রেখেছেন। এ অঞ্চলের মাটিতে পুদিনাপাতার ফলন বাম্পার হয়ে থাকে। ওষুধি গাছ উৎপাদন করতে শুধু জৈবসার দিতে হয়। রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না।'

Comments

The Daily Star  | English

Local mechanics rev up the road, now govt needs to catch up

Amid the worldwide development of electric vehicles, which is changing the traffic landscape away from fossil fuels, Bangladeshi mechanics brought their humble version of an e-vehicle to the road: a battery-run rickshaw -- awkwardly wired, with visible battery units slinging on the back.

14h ago