সাকিবের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর ইস্যুর নাটকীয় টাইমলাইন

Nazmul Hasan Papon & Shakib Al Hasan
নাজমুল হাসান পাপন ও সাকিব আল হাসান। ফাইল ছবি

সাকিব আল হাসান দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাবেন কি যাবেন না, এই প্রশ্নের যেন চূড়ান্ত কোন উত্তর মিলছিল না। বারবার বদল হচ্ছিল রঙ। দোলাচলে জন্ম হচ্ছিল চরম নাটকীয়তার। সময়ের ফ্রেমে দেখে নেওয়া যাক সেই নাটকীয়তার ধাপগুলো। 

আইপিএলের নিলামের আগ পর্যন্ত যেমন ছিল

গত ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি আইপিএলের নিলামের আগ পর্যন্ত খবর ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট খেলবেন না সাকিব। নিলামের আগে কোন ক্রিকেটার টুর্নামেন্টের কোন ধাপে ব্যস্ত তা জানাতে হয়। সাকিব দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের টেস্ট সিরিজের সময়টায় নিজেকে ফাঁকা (আইপিএলে খেলার জন্য এভেইলেবল) রেখেছিলেন। সে অনুযায়ী দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে কেবল ওয়ানডে সিরিজ খেলার কথা ছিল তার। যা আইপিএলের আগেই শেষ হয়ে যাবে।

কিন্তু দুদিন ব্যাপী আইপিএলের ১৫তম আসরের নিলামে সাকিবকে দলে নেয়নি কেউ। তখন থেকেই প্রশ্ন তৈরি হয় তবে কি দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট খেলবেন এই তারকা?

২৮ ফেব্রুয়ারি- সাকিবের দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট খেলা নিশ্চিত করেন বিসিবি সভাপতি

চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডের সিরিজের শেষ ম্যাচের পর গণমাধ্যমে কথা বলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। সেদিন তিনি জানান,  'আজকে দূর থেকে কথা হয়েছে (জৈব সুরক্ষা বলয়ের কারণে)। আমি ওকে বললাম, দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট খেলে আসার পর তোমার সঙ্গে কথা হবে। ও হেসে বলল, আপনি যা বলেন। এখন পর্যন্ত আমি যা যা জানি, ও খেলবে। একবারও তো বলেনি যে খেলবে না। এরপর কেন এই কথাটা আসছে আমি জানি না। আমি বললাম, ও খেলবে।'

৩ মার্চ ঘোষিত স্কোয়াডে সাকিবের নাম

৩ মার্চ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজের স্কোয়াডে সাকিবকে রেখেই দল ঘোষণা করে বিসিবি। নিউজিল্যান্ড সফরে না যাওয়ায় আগের সিরিজটি খেলা হয়নি তার। এক সিরিজ পর সাকিব টেস্ট ফেরা হয় খবরের শিরোনাম। তখন নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল সাকিবের প্রোটিয়া সফরে যাওয়া। কিন্তু কে জানত নাটকীয়তার বাকি তখনো অনেক।

৬ মার্চ বিমানবন্দরে সাকিবের নাটকীয় মোড়

গত ৬ মার্চ (রোববার) সন্ধ্যায় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের জার্সি উন্মোচন আয়োজনে ছিলেন সাকিব। দলটির হয়ে বড় অঙ্কের চুক্তিতে এবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেটে খেলার কথা তার। অনুষ্ঠান শেষ করে রাতে বিজ্ঞাপনের শ্যুটিংয়ে দুবাই যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের বিমানবন্দরে আমন্ত্রণ জানান সাকিব। সেখানেই তার মুখ থেকে বের হয় বিস্ফোরক কথা। দক্ষিণ আফ্রিকায় যেতে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত নন বলে জানিয়ে দেন তিনি। এমনকি আফগানিস্তান সিরিজ থেকেই ক্রিকেটটা আর উপভোগ করছেন না বলেও জানান। এমনকি লম্বা সময় টেস্ট থেকে দূরে থাকার ইচ্ছার কথাও বিসিবিকে জানিয়েছিলেন বলে নিশ্চিত করেন।

সাকিবের এমন অবস্থানের পর তৈরি হয় চাঞ্চল্য। চমকে উঠে বিসিবি। ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস জানান, সাকিব তার কাছ থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য দুদিন সময় চেয়েছেন।

৭ ও ৮ মার্চ- ক্ষুব্ধ বোর্ড প্রধান, ক্ষোভ টিম ডিরেক্টরের

সাকিবের মত বদলের পর কড়া প্রতিক্রিয়া আসতে থাকে বিসিবির কাছ থেকে। বোর্ড সভাপতি একাধিক গণমাধ্যমে দেন সাক্ষাতকার। গণমাধ্যমের সঙ্গে করেন প্রেস ব্রিফিং। তার কথার সুর ছিল একটাই সাকিব বিসিবিকে আগাম কোন বার্তা না দিয়ে নিজের মতো চলছেন, যাতে করে পরিকল্পনা করতে সমস্যা হচ্ছে। বোর্ড প্রধান জোর গলায় বলেন, 'এই ধরণের জিনিসে আমরা অনেক ছাড় দিয়েছি। কিন্তু একটা পর্যায়ে গিয়ে তো আর সম্ভব হয় না।' তিনি বলেন, অনেকদিন ধরেই সিনিয়রদের পারফরম্যান্স নেই। সাকিব না খেললে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া উচিত। তাতে তাদের কোন সমস্যা নেই। বরং তরুণরা দায়িত্ব নিতে তৈরি।

সাকিবের মানসিক পরিস্থিতি নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছিলেন  বিসিবি সভাপতি,  'এটা কীভাবে জানব? কে জানে? মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকলে আইপিএল খেলতে চাচ্ছিল কেন? আমি বুঝলাম না। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকলে তো বলত, "আমি আইপিএলও খেলব না।" ধরুন, ওকে আইপিএলে নেওয়া হলো। তখন কি ও বলত যে ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত? আমার মাথায়ই ঢুকছে না।'

টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনও ছিলেন বিক্ষুব্ধ, তার কণ্ঠও ছিল ঝাঁজালো, 'আমার মনে হয় এখন হাই টাইম, বোর্ডের একটা ফুলস্টপ করা উচিত। যথেষ্ট হয়েছে। বারবার এমন হতে পারে না যে, আমি চাইলাম খেললাম, চাইলাম খেললাম না। এখন শুধু সাকিবের কথা বলছি না, সবাইকে ছাড়াই ভাবার সুযোগ এসেছে।এখানে সাকিব না খেললেও কোন সমস্যা না, আই ডোন্ট কেয়ার। আমি মনে করি বিসিবিও কনসার্ন না।'

৯ মার্চ- সাকিবকে সব ধরণের ক্রিকেট থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বিশ্রাম

সাকিবকে দেওয়া দুদিনের সময় পেরিয়ে গেলে ৯ মার্চ (বুধবার) বোর্ড প্রধানের বেক্সিমকো কার্যালয়ে বসে সভা। সভা থেকে বেরিয়ে ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান জালাল ইউনূস জানান, সাকিব আগের অবস্থানেই অনড়। দক্ষিণ আফ্রিকায় কোন ফরম্যাটেই তিনি খেলতে চান না। তাই সাকিবের মানসিক ও শারীরিক পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে তাকে তারা ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সব ধরণের ক্রিকেট থেকে বিশ্রাম দিচ্ছেন।

সাকিবকে ছাড়াই দক্ষিণ আফ্রিকায় উড়াল জাতীয় দলের

১১ ও ১২ মার্চ তিন ধাপে ওয়ানডে ও টেস্ট স্কোয়াডের সব ক্রিকেটার ও সাপোর্ট স্টাফ রওয়ানাদেন জোহেন্সবার্গে। স্বাভাবিক কারণেই তাতে ছিলেন না সাকিব।

১২ মার্চ- নাটকীয়তার চূড়ান্ত ধাপ

টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক, ব্যাটিং পরামর্শক জেমি সিডন্সসহ বাংলাদেশ দলের শেষ গ্রুপটি যখন বিমানে চেপেছে, তখন বিসিবিতে আসেন সাকিব। আসেন বোর্ড সভাপতি ও অন্যান্য পরিচালকরা। লম্বা সভা শেষে  সাকিবকে নিয়ে গণমাধ্যমের সামনে আসেন বিসিবি প্রধান। সাকিব নিজের মুখেই এবার দেন দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার ঘোষণা। তিনি জানান আগামী নিয়ে পরিষ্কার চিত্র পাওয়ায় বদলেছেন মত। তবে তার সংকট তো মনে। খেলাটাই যে উপভোগ করছেন না। সাকিবের এবার বলছেন, মনের অসুখের দাওয়াই হিসেবে কাজ করবে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।

১৩ মার্চ দক্ষিণ আফ্রিকার বিমানে চেপে বসার কথা সাকিবের। বিষয়টা নিয়ে এত নাটকীয়তা হয়েছে যে তিনি সত্যিই উড়াল দেওয়ার আগ পর্যন্ত বোধহয় নিশ্চিত করা থাকছে ঝুঁকিপূর্ণ।

Comments

The Daily Star  | English
Yunus condemns lawyer’s murder in Chattogram

Keep calm, refrain from violence

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus yesterday condemned the murder of a lawyer in the port city of Chattogram.

6h ago