সব ধরনের ক্রিকেট থেকে দুই মাসের বিশ্রাম পেলেন সাকিব
নানান নাটকীয়তার পর শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে পুরোপুরি বিশ্রাম পেলেন সাকিব আল হাসান। তাকে আগামী এপ্রিল মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত সব ধরণের ক্রিকেট থেকে বিশ্রাম দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে বিসিবি।
বুধবার বেক্সিমকোতে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসানের কার্যালয়ে এক সভা শেষে এমনটা জানিয়েছেন ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান জালাল ইউনূস, 'আপনারা জানেন যে সাকিব আল হাসান বিদেশে যাওয়ার আগে জানিয়ে গেছেন যে সে মানসিক ও শারীরিকভাবে শ্রান্ত। যাওয়ার আগে আমাকে ফোন করে আমাকে বলেছে যে সে এখন ক্রিকেট উপভোগ করছে না। এজন্য তাকে বলছিলাম দুদিন সময় নাও। আজ তার সঙ্গে কথা হয়েছে। সে বলছে এখনো মনে করে সে মানসিক ও শারীরিকভাবে আনফিট।'
'সেজন্য সে সাউথ আফ্রিকা সিরিজে সে যেতে চাচ্ছে না। সে স্কিপ করতে চাচ্ছে। আজ এখানে আমরা বসেছিলাম বোর্ড সভাপতির সঙ্গে। আমি ছিলাম, সিইও (নিজামউদ্দিন চৌধুরী) সাহেব ছিলেন। সাকিব যেহেতু বলছে মেন্টালি ও ফিজিক্যালি আনফিট তাকে বিশ্রাম দেওয়া দরকার। আমরা তাকে এপ্রিলের ৩০ তারিখ পর্যন্ত সব ধরনের ক্রিকেট থেকে বিশ্রাম দেওয়ার সম্মতি দিচ্ছি।'
সাকিব দুবাই যাওয়ার বলেছিলেন, ওয়ানডে সিরিজটা বিশ্রাম দিলে পরে তিনি দেখবেন টেস্ট খেলা যায় কিনা। তবে সেই অবস্থানেরও বদল এসেছে বলে জানান জালাল, 'আজও আমাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। সে বলেছে পুরো দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজেই সে থাকতে চাচ্ছে না।'
সাকিবের সম্মতিতেই তাকে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের টেস্ট ও ওয়ানডে দুই সংস্করণের দলে রাখা হয়েছিল। কিন্তু গত রোববার রাতে বিজ্ঞাপনের শ্যুটিংয়ে দুবাই যাওয়ার আগে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন সাকিব। তিনি জানান, আপাতত ক্রিকেট উপভোগ করছেন না। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে তিনি প্রস্তুত। এই অবস্থায় খেললে সতীর্থদের সঙ্গে প্রতারণা করা হবে।
তবে সেদিনই সফরে না যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেননি তিনি। ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান তাকে চিন্তা করার জন্য দুদিন সময় দিয়েছিলেন। দুদিন পরও ভাবনার বদল হয়নি। বরং আরও লম্বা সময়ের বিশ্রাম পেলেন তিনি।
দুবাই যাওয়ার আগে বিমানবন্দরে গণমাধ্যমকে সাকিব তার ওই অবস্থান জানানোর পরদিন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান বিসিবি সভাপতি। কেউ খেলতে না চাইলে তাকে জোর করে খেলানো হবে না বলেও হুঙ্কার দেন তিনি।
একই রকম তীব্র প্রতিক্রিয়া আসে টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনের কাছ থেকে। তিনি বলেন, 'সাকিব না খেললে না খেলুক, আই ডোন্ট কেয়ার।'
গত নিউজিল্যান্ড সফরেও শেষ মুহূর্তে নিজেকে দল থেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন সাকিব। সেবার পরিবারকে সময় দিতে আমেরিকা যাওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। তবে বাংলাদেশ দল নিউজিল্যান্ড যাওয়ার পর বেশ অনেকদিন পরিবার ছাড়া তাকে দেশেই বিজ্ঞাপনের শ্যুটিং করতে দেখা যায়। এর আগে শ্রীলঙ্কা সফরে টেস্ট খেলতে যাননি আইপিএলের কারণে।
বারবার সাকিবের জাতীয় দলের খেলার সময় সাকিবের এমন আচরণে ক্ষোভ ও হতাশার কথা জানালেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি বিসিবি। এবারও শেষ পর্যন্ত সাকিবের দাবিই মেনে নেওয়া হলো।
এই ব্যাপারে জালাল ইউনুস জানান, তারা নতি স্বীকার করছেন না, এই পরিস্থিতিতেই কাউকে জোর করা যায় না, 'কেউ যখন বলে সে মানসিক ও শারীরিকভাবে ফিট না তাকে তো জোর করে খেলানো যায় না।'
এবারের আইপিএলের নিলামের আগে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট সিরিজের সময়টায় নিজেকে ফাঁকা রেখেছিলেন সাকিব, তাতে সায় ছিল বিসিবিরও। কিন্তু আইপিএলের নিলামে তাকে কেউ নিতে আগ্রহী না হওয়ায় তৈরি হয় নতুন প্রেক্ষাপট। বিসিবি সভাপতি সাকিবের সঙ্গে আলাপ করেই নিশ্চিত করেছিলেন তার প্রোটিয়া সফর। দল ঘোষণার পর নাটকীয়ভাবে নিজেকে আবারও বাংলাদশের হয়ে খেলা থেকে দূরে রাখলেন দেশের এই শীর্ষ অলরাউন্ডার।
Comments