ইউক্রেনকে দেওয়া অস্ত্র সহায়তায় ‘চাপ পড়ছে’ পেন্টাগনের মজুতের ওপর
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার 'বিশেষ সামরিক অভিযানের' প্রায় শুরু থেকেই আক্রান্ত দেশটিকে অস্ত্র-গোলাবারুদ দিয়ে সহযোগিতা করছে যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধের ৯ মাস পর পেন্টাগন এখন তাদের নিজেদের অস্ত্রের মজুদ নিয়ে ভাবতে বাধ্য হচ্ছে।
পৃথিবীর অন্য কোনো প্রান্তে আরেকটি বড় সংঘাত দেখা দিলে এর মোকাবিলা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যথেষ্ট রসদ রয়েছে কিনা, তাই এখন বড় প্রশ্ন।
গতকাল বৃহস্পতিবার এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা এপি।
পেন্টাগনের পরিকল্পনাবিদদের এখন ২টি বিষয় ভাবতে হচ্ছে। তাদের মতে, রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধ কয়েক বছরও চলতে পারে। পাশাপাশি, চীনের সঙ্গে সম্ভাব্য সংঘর্ষ নিয়েও ভাবতে হচ্ছে তাদেরকে।
প্রতিবেদন অনুসারে, চলমান সংঘর্ষে রাশিয়া দৈনিক ২০ হাজার রাউন্ড গোলাবারুদ খরচ করছে। এর মধ্যে স্বয়ংক্রিয় রাইফেলের বুলেট থেকে শুরু করে ট্রাকের সমান আকৃতির ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র আছে।
যুদ্ধ মোকাবিলায় ইউক্রেনও প্রায় ৭ হাজার রাউন্ড গোলাবারুদ ব্যবহার করছে। এর মধ্যে আছে ১৫৫ মিলিমিটার হাউইটজার কামানের গুলি, স্টিংগার বিমান-প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ও সম্প্রতি, এনএসএএমএস (নাসামস) উড়োজাহাজ প্রতিরক্ষা বারুদ।
এ ছাড়া, ছোট অস্ত্রের হাজারো রাউন্ড গুলিও এর মধ্যে আছে।
ইউক্রেনের অস্ত্রভাণ্ডারের বেশিরভাগই আসছে মার্কিন সরকারের অর্থায়নে। এই অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরাসরি ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হচ্ছে।
গত বুধবার বাইডেন প্রশাসন ইউক্রেনকে আরও অস্ত্র সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর মাধ্যমে কিয়েভের হাতে ছোট আগ্নেয়াস্ত্রের ২ কোটি রাউন্ড বুলেট তুলে দেওয়া হবে।
পেন্টাগনের কম্পট্রলার মাইকেল ম্যাককর্ড সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা কখনো এমন পরিস্থিতিতে পড়িনি। মাত্র অল্প কয়েক দিন ব্যবহারের উপযোগী গোলাবারুদ হাতে আছে। তবে, আমরা এমন এক মিত্রকে সহায়তা করছি, যাদের পরিস্থিতিই এরকম।'
তিনি জানান, বড় আকারের যুদ্ধের জন্য গোলাবারুদের সরবরাহ নিশ্চিত করার মতো পরিস্থিতি মার্কিনিদের নেই। এ যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী স্টিংগার ক্ষেপণাস্ত্রের উৎপাদনও বেশ কয়েকদিন ধরে বন্ধ আছে।
এতে মার্কিন অস্ত্র রিজার্ভের ওপর চাপ পড়ছে। যুদ্ধাস্ত্রের মজুদ যথেষ্ট আছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, যদি এ মুহূর্তে চীন প্রতিবেশী তাইওয়ানকে আক্রমণ করে, তাহলে কি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারবে?
পেন্টাগনের অস্ত্র ক্রয় বিভাগের অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা বিল লাপ্লান্ট গণমাধ্যমকে বলেন, 'তাইওয়ান প্রণালীতে কোনো ঘটনা ঘটলে কী হবে? ৫ বা ১০ বছর পর নয়, যদি আগামী সপ্তাহে এরকম কিছু ঘটে?'
'আমাদের হাতে কোন ধরনের অস্ত্র, কত সংখ্যক আছে? এগুলো কি কার্যকর?—এসব প্রশ্নের উত্তর এখন আমরা জানতে চাই', যোগ করেন তিনি।
মার্কিন সেনাবাহিনীর ক্রয় সংক্রান্ত সহকারী সচিব ডউগ বুশ গত সোমবার সাংবাদিকদের জানান, যেসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ ইউক্রেন যুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে সেগুলোর মজুদ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়েছে।
তিনি হিমার্স ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, স্টিংগার ক্ষেপণাস্ত্র ও ১৫৫ মিলিমিটার হাউইটজার কামানের গোলার কথা উল্লেখ করেন।
মার্কিন সরকার সামরিক সহায়তা প্যাকেজের ক্ষেত্রে নিজস্ব মজুদ ব্যবহার করেছে অথবা শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাছে দেওয়া অর্ডারের সরাসরি অর্থায়ন করেছে, যাতে উৎপাদন প্রক্রিয়া দ্রুততর হয়। এ পর্যন্ত দেশটি প্রায় ১৯ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর মধ্যে আছে ৯ লাখ ২৪ হাজার রাউন্ড ১৫৫ মিলিমিটার হাউইটজার কামানের গোলা, সাড়ে ৮ হাজারের বেশি জ্যাভেলিন ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, ১ হাজার ৬০০ স্টিংগার বিমান হামলা প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও শত শত ড্রোন ও অন্যান্য পরিবহন।
এ ছাড়াও, অত্যাধুনিক বিমান হামলা প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও হিমার্স ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাও সরবরাহ করা হয়েছে।
কংগ্রেসে প্রশ্ন
ইউক্রেনকে এতো অস্ত্র দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসে প্রশ্ন উঠেছে।
এ মাসে বাইডেন প্রশাসন ইউক্রেনের জন্য আরও ৩৭ বিলিয়ন ডলারের সামরিক ও মানবিক সহায়তার অনুমোদনের জন্য কংগ্রেসকে অনুরোধ জানানোর পর প্রস্তাবটি পাস হয়। জানুয়ারিতে রিপাবলিকানরা কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগেই এই অনুমোদন এলো।
মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকান পার্টির নেতা কেভিন ম্যাকার্থি স্পিকার হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, রিপাবলিকানরা ইউক্রেনকে 'ব্ল্যাংক চেক' দেওয়ার পক্ষে নেই।
প্রতিবেদন অনুসারে, নতুন করে অর্থের জোগান হলেও অস্ত্রভাণ্ডার পূর্ণ করা খুব সহজ হবে না। ইউক্রেনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েক ধরনের অস্ত্রের উৎপাদন বেশ কয়েক বছর আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। খুব একটা প্রয়োজনীয় নয়, এমন অস্ত্রের উৎপাদন চালু রাখা ব্যয়বহুল। তাই মার্কিন সেনাবাহিনী বেশি গুরুত্বপূর্ণ খাতে এই অর্থ খরচ করছে।
পেন্টাগন বেসরকারি অস্ত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রেইথিওনকে ১ হাজার ৩০০ স্টিংগার ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনে ৬২৪ মিলিয়ন ডলারের কাজ দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, যন্ত্রাংশ সংকটের কারণে তারা আগামী বছরের আগে উৎপাদন বাড়াতে পারছে না।
পেন্টাগনের সহকারী প্রেস সচিব সাবরিনা সিং জানান, অস্ত্র ও গোলাবারুদের মজুদ নিয়ে উদ্বেগের বিষয়গুলো তারা আমলে নিয়েছেন।
তবে পেন্টাগনের সাম্প্রতিক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, 'আমাদের যদি সক্ষমতা না থাকতো, তাহলে আমরা এসব স্টিংগার ক্ষেপণাস্ত্র (ইউক্রেনকে) দিতাম না।'
Comments