রাফায় তীব্র অভিযান শেষের পথে, লেবানন সীমান্তে নজর দেবো: নেতানিয়াহু

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন 'বিবি' নেতানিয়াহু। ছবি: রয়টার্স
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন 'বিবি' নেতানিয়াহু। ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, রাফায় হামাসের সঙ্গে তীব্র যুদ্ধ শেষ হওয়ার পথে। তিনি আরও জানান, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এখন লেবানন সীমান্তের দিকে নজর সরিয়ে নেবে।

আজ সোমবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তে লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর সঙ্গে দেশটির সংঘাতের মাত্রা বেড়েছে।

তবে নেতানিয়াহু অঙ্গীকার করেন, হামাসকে নির্মূল না করা পর্যন্ত তিনি গাজায় অভিযান চালিয়ে যাবেন। দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যম ফোরটিন টেলিভিশনকে তিনি এ কথা জানান।

৭ অক্টোবরের পর ইসরায়েলি গণমাধ্যমকে দেওয়া প্রথম সরাসরি সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু আরও বলেন, 'এর অর্থ এই না যে যুদ্ধের অবসান হতে যাচ্ছে। তবে এখন রাফায় যেভাবে যুদ্ধ হচ্ছে, সেই তুমুল যুদ্ধের পর্যায়টি শেষ হতে যাচ্ছে। এটা সত্য। আমরা অবশিষ্ট সমস্যাগুলোর সমাধান পরে করব।'

গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় স্থল ও বিমানহামলা শুরুর আগেই সেখানে গাজার অন্যান্য অংশ থেকে প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক মহলের আপত্তি ও অনুরোধকে উপেক্ষা করে এই অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। যার ফলে আট লাখ মানুষ রাফা থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। জাতিসংঘের খাদ্য বিষয়ক সংস্থা রাফার পরিস্থিতিকে পারমাণবিক বোমা হামলা পরবর্তী ভয়াবহ পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করেছে।

গত মাসে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী মিশরের সঙ্গে রাফার সীমান্ত ক্রসিং দখল করে নেয়। এর পর থেকেই গাজায় মানবিক ত্রাণ প্রবেশের এই গুরুত্বপূর্ণ পথটি বন্ধ রয়েছে।

রাফা অভিযান শুরুর পর থেকেই এটা বন্ধ করার জন্য নেতানিয়াহুর ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে আন্তর্জাতিক মহল।

গতমাসে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত ইসরায়েলকে তাৎক্ষণিকভাবে এই বিতর্কিত সামরিক অভিযান বন্ধের নির্দেশ দেয়। আদালতের রায়ে বলা হয়, রাফার মানবিক পরিস্থিতি 'বিপর্যয়কর।'

সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু জানান, তিনি হামাসের সঙ্গে 'আংশিক চুক্তি' করতে রাজি। এতে গাজায় আটকে থাকা কিছু জিম্মি মুক্তি পাবেন। তবে তিনি আবারও নিশ্চিত করেন, যুদ্ধবিরতির পরও হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে। কারণ ইসরায়েলের একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হল হামাসকে ধ্বংস করা।

'আমি সেই লক্ষ্য থেকে সরে আসতে প্রস্তুত নই', যোগ করেন নেতানিয়াহু।

রাফায় সামরিক অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ছবি: এএফপি
রাফায় সামরিক অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ছবি: এএফপি

নেতানিয়াহুর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় হামাস বলেছে, 'নেতানিয়াহু যেসব শব্দ ব্যবহার করেছেন, তাতেই বোঝা যাচ্ছে তিনি আংশিক চুক্তি করতে আগ্রহী, গাজার যুদ্ধ বন্ধের আগ্রহ নেই তার।'

হামাস এক বিবৃতিতে জানায়, নেতানিয়াহুর অবস্থান থেকে 'এটা স্পষ্ট ও নিশ্চিত হয়েছে যে তিনি জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের সাম্প্রতিক প্রস্তাব ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রস্তাবিত চুক্তি নাকচ করেছেন।'

হামাস আবারও জানিয়েছে, যেকোনো চুক্তিতে স্পষ্টভাবে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের বিষয়গুলোর উল্লেখ থাকতে হবে।

নেতানিয়াহু চ্যানেল ফোরটিন টেলিভিশনকে আরও জানান, 'রাফার তীব্র যুদ্ধের এই পর্যায় শেষে আমরা আমাদের শক্তিমত্তার খানিকটা অংশ উত্তরে সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাব। এবং আমরা তা করব।'

'প্রথমত, সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য। এবং দ্বিতীয়ত, আমাদের বাসিন্দাদের নিরাপদে বাড়িতে আনার জন্য। আমরা যদি রাজনৈতিকভাবে সেটা করতে পারি, তাহলে খুবই ভালো। আর যদি না পারি, তাহলে অন্যভাবে তা আমাদের করতে হবে। কিন্তু আমরা সবাইকেই বাড়িতে ফিরিয়ে আনবো। উত্তর ও দক্ষিণের সব বাসিন্দাকে', যোগ করেন তিনি।

৭ অক্টোবর হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের পাল্টা হামলা শুরুর এক দিন পর থেকেই হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

ইসরায়েলও পাল্টা জবাব দিয়েছে। এসব হামলায় অসংখ্য হিজবুল্লাহ যোদ্ধা ও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কমান্ডার নিহত হয়েছেন।

সংঘাত এড়াতে উত্তর গাজা থেকে হাজারো ইসরায়েলিকে সরিয়ে অন্য এলাকায় নিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অপরদিকে, দক্ষিণ লেবাননের গ্রামগুলোও খালি করা হয়েছে।

রাফায় সামরিক অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ছবি: এএফপি
রাফায় সামরিক অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ছবি: এএফপি

সাম্প্রতিক সপ্তাহে হিজবুল্লাহ-ইসরায়েলের হামলা-পাল্টা হামলায় এই দুই দেশের মধ্যে বড় আকারে সংঘাত বেঁধে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেক বিশ্লেষক। একে 'গাজা যুদ্ধের মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য অংশ ছড়িয়ে পড়া' হিসেবে অভিহিত করেছে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো।

যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধ থামানোর জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। এতে এক হাজার ১৭০ জন নিহত হন। জিম্মি হন প্রায় ২৫০ জন।

এই হামলার প্রতিশোধ হিসেবে সেদিনই গাজার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন ও নির্বিচার বিমানহামলা শুরু করে ইসরায়েল। পরবর্তীতে স্থলবাহিনীও এতে যোগ দেয়। গত ৭ মাসে ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা অন্তত ৩৭ হাজার ৫৯৮। আহতের সংখ্যা অন্তত ৮৬ হাজার ০৩২। হতাহতের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

Comments

The Daily Star  | English

Killing of trader in old Dhaka: Protests erupt on campuses

Protests were held on campuses and in some districts last night demanding swift trial and exemplary punishment for those involved in the brutal murder of Lal Chand, alias Sohag, in Old Dhaka’s Mitford area.

3h ago