গাজায় ৬ মাসে ইসরায়েলি হামলায় ৩৩,১৩৭ ফিলিস্তিনি নিহত

রাফায় ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া একটি গাড়ির ওপর থেকে পাথর সরাচ্ছে এক শিশু। ছবি: রয়টার্স
রাফায় ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া একটি গাড়ির ওপর থেকে পাথর সরাচ্ছে এক শিশু। ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ আজ রোববার সপ্তম মাসে পা দিয়েছে। গত ছয় মাসে নিরবচ্ছিন্ন ইসরায়েলি হামলায় ৩৩ হাজার ১৩৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। 

ইতোমধ্যে, কায়রোতে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য মধ্যস্থতাকারীরা আবারও যুদ্ধবিরতি ও বন্দি-জিম্মি বিনিময় চুক্তি নিয়ে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে।

আজ রোববার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।

মিশরের স্থানীয় গণমাধ্যম আল-কাহেরা নিউজ জানিয়েছে, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর বিল বার্নস ও কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মেদ বিন আবদুলরাহমান বিন জাসিম আল-থানি মিশরীয় মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে যোগ দেবেন। ইসরায়েল ও হামাসের প্রতিনিধিদের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনায় অন্যান্যদের সঙ্গে বার্নস ও আল-থানি মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন।

হামাস নতুন এই আলোচনার আগেই নিশ্চিত করেছে, তাদের মূল দাবি গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার।

রাফায় তাঁবু খাটিয়ে অস্থায়ী স্কুল বানানো হয়েছে। সেখানে পড়াশোনা করছে ফিলিস্তিনি শিশুরা। ছবি: রয়টার্স
রাফায় তাঁবু খাটিয়ে অস্থায়ী স্কুল বানানো হয়েছে। সেখানে পড়াশোনা করছে ফিলিস্তিনি শিশুরা। ছবি: রয়টার্স

নতুন করে যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরুর আগে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এক বিরল ঘটনায় তাদের ভুল স্বীকার করে নিয়েছে। সম্প্রতি গাজার দুর্ভিক্ষ পীড়িত অঞ্চলে খাবার সরবরাহ করে ফেরার পথে সাত ত্রাণকর্মী ইসরায়েলি বিমানহামলায় নিহতের জেরে দুই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করতে যাচ্ছে দেশটি।

তা সত্ত্বেও, আন্তর্জাতিক মহল থেকে গত ১ এপ্রিল মার্কিন মানবিক ত্রাণসংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের (ডব্লিউসিকে) কর্মী নিহতে ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি রয়েছে।

স্প্যানিশ বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক, সেলেব্রিটি শেফ ও ডব্লিউসিকের প্রতিষ্ঠাতা হোসে আন্দ্রেস এবিসি নিউজকে বলেন, 'ছয় মাস ধরে তারা (ইসরায়েল) কাউকে বা কোনো কিছুকে নড়তে দেখলেই সেখানে হামলা চালাচ্ছে।'

'এই পর্যায়ে এসে মনে হচ্ছে এটা মানবতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ', যোগ করেন তিনি।

ত্রাণকর্মীরা নিহত হওয়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ফোনে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে হুশিয়ারি দেন।

বাইডেন 'অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির' আহ্বান জানান এবং প্রথম বারের মতো এই যুদ্ধে মার্কিন সমর্থন অব্যাহত রাখার শর্ত হিসেবে বেসামরিক মানুষের মৃত্যু ঠেকানো ও মানবিক পরিস্থিতির উন্নয়নের কথা উল্লেখ করেন।

মূলত, ইসরায়েলের প্রতি সামরিক সমর্থন কমানোর হুমকি দেন বাইডেন। তিনি জানান, বেসামরিক মানুষ ও ত্রাণকর্মীদের সুরক্ষিত রাখতে বলিষ্ঠ উদ্যোগ না নিলে মার্কিন নীতিমালা বদলাতে পারে।

রোববারের আলোচনার আগে বাইডেন মিশয়র ও কাতারের নেতাদের উদ্দেশ্যে একটি বার্তা পাঠান। তিনি তাদেরকে অনুরোধ করেন হামাসের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় করতে যাতে তারা 'চুক্তির শর্তে রাজি হয় এবং তা মেনে চলে'। বাইডেন প্রশাসনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এএফপিকে এই তথ্য জানান। 

নভেম্বরে সর্বশেষ যুদ্ধবিরতির সময়সীমা শেষের পর বেশ কয়েক দফা আলোচনা ও দরকষাকষি হলেও এতে ফল আসেনি। এখনো সর্বাত্মক ও নিরবচ্ছিন্ন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।

বৃহস্পতিবার বাইডেন ও নেতানিয়াহুর ফোন কলে চুক্তি সম্পন্ন করতে 'মধ্যস্থতাকারীদের নিরপেক্ষভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়ার' বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কারবি।

এখন পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি চুক্তি না হওয়ার জন্য ওয়াশিংটন হামাসকে দায়ী করেছে। কাতার বলেছে, ইসরায়েল বাস্তুচ্যুত গাজাবাসীদের তাদের নিজ এলাকায় ফিরে যেতে দেওয়ার শর্তে রাজি না থাকায় চুক্তি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে জো বাইডেন ইসরায়েলকে বড় আকারের সামরিক ত্রাণের বিষয়ে বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছেন।

ইসরায়েলের নির্বিচারে বেসামরিক মানুষ হত্যা চালিয়ে যাওয়ার তীব্র সমালোচনা ও এ বিষয়ে বাইডেনের অবলম্বন করা 'অন্ধ সমর্থন' নীতির সমালোচনায় মুখর হয়েছে তার দলেরই প্রগতিশীল সমর্থক ও নেতা-কর্মীরা।

তেল আবিবে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছেন ইসরায়েলিরা। ছবি: রয়টার্স
তেল আবিবে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছেন ইসরায়েলিরা। ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েল জানিয়েছে, তাদের সামরিক বাহিনীর দুই কর্মকর্তার ধারাবাহিক ভুলের কারণে ডব্লিউসিকের কর্মীদের ওপর ড্রোন হামলা চালানো হয়।

তারা জানায়, একজন কমান্ডার 'ভুল করে ধরে নেন' হামাস ত্রাণকর্মীদের পরিবহনগুলো দখল করে নিয়েছে।

এই ঘটনার পর গাজায় ডব্লিউসিকের ত্রাণ কার্যক্রম বন্ধ আছে। আরও বেশ কিছু বৈশ্বিক ত্রাণসংস্থাও বলেছে এ অঞ্চলে ত্রাণ কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পরেছে।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত ও নজিরবিহীন হামলা চালায় হামাস। এতে এক হাজার ১৬০ জন নিহত হন এবং হামাসের হাতে জিম্মি হন প্রায় ২৫০ জন মানুষ। জিম্মিদের মধ্যে ১৩০ জন এখনো গাজায় আছেন এবং ৩৩ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ ঘটনার পর থেকে হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্যে গাজায় প্রায় ছয় মাস ধরে সর্বাত্মক ও নিরবচ্ছিন্ন হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৩৩ হাজার ১৩৭ জন মানুষ। নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আজ রোববার জানিয়েছে, গাজায় স্থল অভিযান শুরুর পর থেকে মোট ২৬০ সেনা হারিয়েছে দেশটি।

Comments

The Daily Star  | English

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

11h ago