মার্কিন নীতি পরিবর্তনের হুমকি, গাজায় ত্রাণ প্রবেশের নতুন পথের ঘোষণা ইসরায়েলের

বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও নেতানিয়াহুর মধ্যে ৩০ মিনিটের ফোন কল হয়। এই কলে ইসরায়েলের প্রতি সামরিক সমর্থন কমানোর হুমকি দেন বাইডেন। তিনি জানান, বেসামরিক মানুষ ও ত্রাণকর্মীদের সুরক্ষিত রাখতে বলিষ্ঠ উদ্যোগ না নিলে মার্কিন নীতিমালা বদলাতে পারে।
রাফাহ শহরে বিনামূল্যে খাবার পেতে একটি লঙ্গরখানায় সারি বেঁধে দাঁড়িয়েছেন ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিরা। ফাইল ছবি: রয়টার্স
রাফাহ শহরে বিনামূল্যে খাবার পেতে একটি লঙ্গরখানায় সারি বেঁধে দাঁড়িয়েছেন ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিরা। ফাইল ছবি: রয়টার্স

আজ শুক্রবার ইসরায়েল ঘোষণা দিয়েছে, তারা দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত উত্তর গাজায় 'সাময়িকভাবে' ত্রাণ প্রবেশ করতে দেবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীকে ফোন কলে ইসরাইল প্রসঙ্গে মার্কিন নীতিমালা পরিবর্তনের হুমকি দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর এই ঘোষণা দেয় দেশটি।

আজ শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।

বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও নেতানিয়াহুর মধ্যে ৩০ মিনিটের ফোন কল হয়। এই কলে ইসরায়েলের প্রতি সামরিক সমর্থন কমানোর হুমকি দেন বাইডেন। তিনি জানান, বেসামরিক মানুষ ও ত্রাণকর্মীদের সুরক্ষিত রাখতে বলিষ্ঠ উদ্যোগ না নিলে মার্কিন নীতিমালা বদলাতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই নীতিমালা বলতে বাইডেন অস্ত্র সরবরাহ ও জাতিসংঘে ইসরায়েলকে সমর্থন জানানোর বিষয়গুলোর দিকে ইঙ্গিত করেছেন।

কয়েক ঘণ্টা পর, জেরুজালেমে যখন মধ্যরাত, তখন ইসরায়েল ঘোষণা দেয়, তারা অবরুদ্ধ গাজায় ত্রাণ প্রবেশের জন্য আরও কয়েকটি পথ খুলে দেবে।

ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা আশদদ বন্দর ও ইরেজ স্থল ক্রসিংয়ের মাধ্যমে 'সাময়িকভাবে' ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। এছাড়া, প্রতিবেশী দেশ জর্ডান থেকে কেরেম শালম ক্রসিংয়ের মাধ্যমে ত্রাণ আসার পরিমাণও বাড়িয়েছে ইসরায়েল।

আশদদ বন্দর দিয়ে ত্রাণ পরিবহণের অনুমোদন দিয়েছে ইসরায়েল। ছবি: রয়টার্স
আশদদ বন্দর দিয়ে ত্রাণ পরিবহণের অনুমোদন দিয়েছে ইসরায়েল। ছবি: রয়টার্স

নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে এসব তথ্য জানানো হয়।

হোয়াইট হাউস এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে এবং বলেছে '(মার্কিন) প্রেসিডেন্টের অনুরোধেই এই উদ্যোগ নিয়েছে ইসরায়েল'।

হোয়াইট হাউস আরও জানায়, '(বাইডেনের বাকি) সব অনুরোধ এখন অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে।

গত ছয় মাস গাজায় নিরবচ্ছিন্ন ও সর্বাত্মক হামলা চালিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র নিন্দার মুখে পরেছে ইসরায়েল। এমন কী, সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির সবচেয়ে বড় মিত্র ও সমর্থক যুক্তরাষ্ট্রের সুরেও এসেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া।

মানবাধিকার সংস্থা অক্সফাম বলেছে, জানুয়ারি থেকে উত্তর গাজার বাসিন্দারা দিনে ২৪৫ ক্যালোরির চেয়েও কম খাবার খেয়ে বেঁচে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন, যা ন্যুনতম চাহিদার ধারে কাছেও নেই।

দাতব্য ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো বারবার অভিযোগ করেছে, গাজায় ত্রাণ প্রবেশে বাধা দিচ্ছে ইসরায়েল। এ সপ্তাহে গাজায় খাদ্য বিতরণ শেষে ফেরার পথে মানবিক ত্রাণ সংস্থা ডব্লিউসিকের কর্মীদের বহনকারী গাড়ি বহরে হামলা চালায় ইসরায়েলি বিমানবাহিনী। এতে সাত বিদেশী মানবিক কর্মী নিহত হন।

নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবিতে জেরুজালেমে বিক্ষোভ সমাবেশ। ছবি: রয়টার্স
নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবিতে জেরুজালেমে বিক্ষোভ সমাবেশ। ছবি: রয়টার্স

'গাজায় মানবিক ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলা ও সার্বিক মানবিক পরিস্থিতি গ্রহণযোগ্য নয়', নেতানিয়াহুকে ফোনে বলে বাইডেন।

বাইডেন নিশ্চিত করেন, চলমান পরিস্থিতি পরিবর্তনে ইসরায়েল তাৎক্ষণিকভাবে যেসব পদক্ষেপ নেবে, তার ওপর নির্ভর করবে গাজা প্রসঙ্গে মার্কিন নীতিমালা ভবিষ্যতে কেমন হবে।

চলমান সংঘাতে এবারই প্রথম প্রত্যক্ষভাবে ইসরায়েলের প্রতি সামরিক সমর্থন কমানোর হুমকি দিলেন বাইডেন। তিনি জানান, বেসামরিক মানুষ ও ত্রাণকর্মীদের সুরক্ষিত রাখতে বলিষ্ঠ উদ্যোগ না নিলে মার্কিন নীতিমালা বদলাতে পারে।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত ও নজিরবিহীন হামলা চালায় হামাস। এতে এক হাজার ১৬০ জন নিহত হন এবং হামাসের হাতে জিম্মি হন প্রায় ২৫০ জন মানুষ। জিম্মিদের মধ্যে ১৩০ জন এখনো গাজায় আছেন এবং ৩৩ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

ত্রাণের আশায় জমায়েত হচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স
ত্রাণের আশায় জমায়েত হচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স

এ ঘটনার পর থেকে হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্যে গাজায় প্রায় ছয় মাস ধরে সর্বাত্মক ও নিরবচ্ছিন্ন হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৩৩ হাজার ৯১ জন মানুষ। নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

Comments