গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে ভোটে সমর্থন দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র

তবে এতে তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। বরং, আগ্রাসন স্থায়ীভাবে বন্ধ করার ‘পরিবেশ সৃষ্টির’ বিষয়ে বলা হয়েছে।
ভোটগ্রহণ বিলম্বিত হওয়ার ফলে ফাঁকা হয়ে পড়ে নিরাপত্তা কাউন্সিলের সম্মেলনকক্ষ। ছবি: রয়টার্স
ভোটগ্রহণ বিলম্বিত হওয়ার ফলে ফাঁকা হয়ে পড়ে নিরাপত্তা কাউন্সিলের সম্মেলনকক্ষ। ছবি: রয়টার্স

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আজ আবারও গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে ভোটগ্রহণ হবে। সংস্থাটি আশংকা প্রকাশ করেছে, ইসরায়েলের নিরবচ্ছিন্ন হামলা গাজাবাসীকে দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

আজ শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।

এই অঞ্চলের পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে। এই অবস্থায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলে পরবর্তী প্রস্তাবের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে, যার ফলে এর মধ্যে একাধিকবার ভোটের দিনটি পিছিয়েছে।

খসড়া প্রস্তাব

জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা টমাস-গ্রিনফিল্ড। ফাইল ছবি: রয়টার্স
জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা টমাস-গ্রিনফিল্ড। ফাইল ছবি: রয়টার্স

এএফপি সর্বশেষ প্রস্তাবের খসড়া হাতে পেয়েছে, যেটি আজ কাউন্সিলে ভোটের জন্য উত্থাপন করা হবে। খসড়ায় বলা হয়েছে, 'গাজায় শিগগির নিরাপদে ও বাধাহীনভাবে মানবিক ত্রাণ পৌঁছানোর উদ্যোগ নিতে হবে এবং এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে, যাতে সব ধরনের আগ্রাসনের টেকসই অবসান ঘটে'। 

তবে এতে তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। বরং, আগ্রাসন স্থায়ীভাবে বন্ধ করার 'পরিবেশ সৃষ্টির' বিষয়ে বলা হয়েছে।

জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা টমাস-গ্রিনফিল্ড ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই প্রস্তাবে সমর্থন জানাবে, যদি 'খসড়ায় যেভাবে লেখা হয়েছে, সেভাবেই প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হয়'।

এর আগে দুইটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে যুক্তরাষ্ট্র। 

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতির আলোচনা

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: রয়টার্স

জাতিসংঘের এই উদ্যোগের পাশাপাশি ইসরায়েল-হামাসের যুদ্ধে নতুন করে বিরতি দিতে আলাদা করে কূটনৈতিক তৎপরতাও একইসঙ্গে অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে আলোচনা করতে ইতোমধ্যে মিশর সফর করে গেছেন হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া। এ ছাড়াও, মোসাদ ও সিআইএর শীর্ষ কর্মকর্তারাও আলোচনায় অংশ নিয়েছেন।

তবে দুই পক্ষের দেওয়া শর্তে রয়েছে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। ইসরায়েল চাইছে সাময়িক যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে জিম্মিদের মুক্তি, আর হামাস বলেছে স্থায়ীভাবে আগ্রাসন বন্ধ না হলে জিম্মি মুক্তি নিয়ে তারা আলোচনা করতেই আগ্রহী নয়।

যার ফলে এই আলোচনায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।  মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মত দেন, 'খুব শিগগির এই আলোচনায় ফল আসবে বলে তিনি মনে করেন না'।

'যুদ্ধবিরতি' শব্দটি নিয়ে ইসরায়েলের রয়েছে ব্যাপক আপত্তি, যা তারা বেশ কয়েকবার উল্লেখ করেছে। এ বিষয়ে তাদেরকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

বুধবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আবারও জানান, হামাসকে 'নির্মূল' করার আগে পর্যন্ত গাজার যুদ্ধে কোনো বিরতি দেওয়া হবে না।

৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালিয়ে প্রায় এক হাজার ২০০ মানুষকে হত্যা করে হামাস। তাদের হাতে জিম্মি হন ২৪০ জন।

এ ঘটনার পর হামাসকে ধ্বংসের সংকল্পে গাজা উপত্যকায় নির্বিচার বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। এই আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আরও হাজারো মরদেহ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে।

গাজায় দুর্ভিক্ষের আশংকা

দক্ষিণ গাজার রাফাহ অঞ্চলের এক লঙ্গরখানা থেকে খাবার সংগ্রহ করছে ফিলিস্তিনি শিশুরা। ছবি: রয়টার্স
দক্ষিণ গাজার রাফাহ অঞ্চলের এক লঙ্গরখানা থেকে খাবার সংগ্রহ করছে ফিলিস্তিনি শিশুরা। ছবি: রয়টার্স

বৈশ্বিক ক্ষুধার মাত্রার ওপর নজর রাখে এমন একটি জাতিসংঘ সমর্থিত সংস্থা বৃহস্পতিবার জানায়, গাজার সমগ্র জনগোষ্ঠী 'শিগগির দুর্ভিক্ষের মুখে পড়ার ঝুঁকিতে' আছে। এ অঞ্চলের অর্ধেকের বেশ মানুষ 'চরম বিপর্যস্ত অবস্থায়' আছে।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক সংস্থার প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস এক্সে বলেন, 'আমরা বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে সবাইকে সতর্ক করছি। এ ধরনের ধ্বংসযজ্ঞের মাঝে গাজার বঞ্চিত জনগণের জন্য একেকটি দিন আরও বেশি পরিমাণে ক্ষুধা, রোগ ও দুর্ভোগ বয়ে আনছে।'

জাতিসংঘের প্রাক্কলন মতে, গাজার ২৩ লাখ মানুষের মধ্যে ১৯ লাখ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

তাদের বেশিরভাগেরই ঘর-বাড়ি ধ্বংস হয়েছে। তারা এখন জনাকীর্ণ আশ্রয়কেন্দ্রে বাস করছেন এবং খাদ্য, জ্বালানি, পানি ও চিকিৎসা সামগ্রীর অভাবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বিভিন্ন সংক্রামক রোগ তাদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে এবং বারবার তারা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হচ্ছেন।

গাজার বাস্তুচ্যুত বাসিন্দারা যুদ্ধবিরতির জন্য হাহাকার করছেন।

দক্ষিণ গাজার রাফাহ অঞ্চলের এক গ্রিনহাউসে আশ্রয় নিয়েছেন ফিলিস্তিনি নাগরিক ফুয়াদ ইবরাহিম ওয়াদি।

তিনি বলেন, 'আমার বার্তা হল, এই অসম্মানজনক পরিস্থিতির অবসান হোক। এই যুদ্ধ ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই আনছে না। আমরা আর সহ্য করতে পারছি না।'

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

8h ago