মিশরে আলোচনায় হামাস চায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, ইসরায়েল চায় সাময়িক

১৭ ডিসেম্বর গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান চলছে। ছবি: রয়টার্স
১৭ ডিসেম্বর গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান চলছে। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, গাজায় নতুন করে যুদ্ধবিরতি ও আরও ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তি নিয়ে 'অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ' দরকষাকষি চলছে। দুই পক্ষ তাদের শর্আত ও দাবি আলোচনার টেবিলে নিয়ে এসেছে।

আজ বৃহস্পতিবার রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে চলতি আলোচনায় দুই পক্ষ ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে পারবে কী না, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সন্দেহ। দুই পক্ষের শর্তে রয়েছে উল্লেখযোগ্য ব্যবধান। 

ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস জানিয়েছে, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে স্থায়ীভাবে ইসরায়েলি হামলা বন্ধ না করা হলে তারা যুদ্ধবিরতির আলোচনায় অংশ নিতে চায় না। 

হামাসের নেতা ইসমাইল হানিয়া বুধবার মিশর সফর করেন। সেখানে তিনি মিশরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।

আলোচনার বিস্তারিত তথ্য জানেন এমন এক সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছেন, প্রতিনিধিদের আলোচনায় নতুন যুদ্ধবিরতি চলাকালীন সময়ে হামাসের হাতে থাকা কোন কোন ইসরায়েলি জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে, সে বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। 

ইসলামিক জিহাদ নামে অপর এক সশস্ত্র সংগঠনের কাছেও কিছু ইসরায়েলি জিম্মি আটক আছেন। এই সংগঠন জানিয়েছে, তাদের নেতাও আগামী দিনগুলোতে মিশর সফর করে সংঘাত অবসানের সম্ভাবনা নিয়ে আলাপ করবেন।

ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন ইসরায়েলি সেনারা ছবি: রয়টার্স
ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন ইসরায়েলি সেনারা ছবি: রয়টার্স

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কিরবি বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের উড়োজাহাজ এয়ারফোর্স ওয়ানে বসে সাংবাদিকদের বলেন, 'অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ও দরকষাকষি চলছে। আমরা আশা করছি, এতে ফল আসবে'।

হামাস নেতা হানিয়ার গণমাধ্যম উপদেষ্টা তাহের আল-নোনো রয়টার্সকে জানান, তাদের দুইটি শর্ত আছে। গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের অবসান ঘটাতে হবে এবং ফিলিস্তিনি বেসামরিক ব্যক্তিদের জন্য মানবিক ত্রাণের পরিমাণ বাড়াতে হবে। এই দুই শর্ত মানা না হলে তারা নতুন করে আরও কোনো জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আলোচনা করতে ইচ্ছুক নন।

হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া। ছবি: রয়টার্স

কায়রোতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নোনো বলেন, 'এই দুটি বিষয়ের সুরাহা হওয়ার পর জিম্মি মুক্তি নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা হতে পারে। ইসরায়েলি আগ্রাসন অব্যাহত থাকা অবস্থায় আলোচনায় অংশ নেওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। আগ্রাসন বন্ধ হলেই তবে জিম্মি মুক্তির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হতে পারে।'

বস্তুত হামাস ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে সাময়িক বিরতির বিষয়টি আর একমত নয়। তারা শুধু স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় আগ্রহী।

'আমরা মিশরে আমাদের ভাইদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা এই আগ্রাসনের বিপরীতে আমাদের অবস্থানের কথা জানিয়েছি। আমরা বলেছি, এই আগ্রাসন বন্ধ হওয়া এখন সবচেয়ে প্রাধান্যের বিষয়', যোগ করেন নোনো।

দক্ষিণ গাজার রাফাহ অঞ্চলের এক লঙ্গরখানা থেকে খাবার সংগ্রহ করছে ফিলিস্তিনি শিশুরা। ছবি: রয়টার্স
দক্ষিণ গাজার রাফাহ অঞ্চলের এক লঙ্গরখানা থেকে খাবার সংগ্রহ করছে ফিলিস্তিনি শিশুরা। ছবি: রয়টার্স

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র জানায়, বাকি সব নারী ও অসুস্থ পুরুষ জিম্মিদের মুক্তির দাবি করেছে ইসরায়েল।

গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত কয়েকজন ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পেতে পারেন বলেও তিনি জানান।

৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালিয়ে প্রায় এক হাজার ২০০ মানুষকে হত্যা করে হামাস। তাদের হাতে জিম্মি হন ২৪০ জন।

এ ঘটনার পর হামাসকে ধ্বংসের সংকল্পে গাজা উপত্যকায় নির্বিচার বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। এই আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আরও হাজারো মরদেহ ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে আছে।

আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো জানিয়েছে, গাজার ২৩ লাখ মানুষের ৯০ শতাংশই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। যারা এখনো বেঁচে আছেন, তাদের অনেকেই অপুষ্টিতে ভুগছেন। তাদের নেই সুপেয় পানি ও উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা।

বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা খোলা আকাশের নিচে তাঁবু খাটিয়ে রান্না করছেন। ছবি: রয়টার্স
বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা খোলা আকাশের নিচে তাঁবু খাটিয়ে রান্না করছেন। ছবি: রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বুধবার জানান, খুব শিগগির হামাস-ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতির আলোচনা সফল হবে, এমনটা ভাবছেন না তিনি। তবে 'আমরা চাপ অব্যাহত রেখেছি', জানান বাইডেন।

ইসরায়েল এখনো চলমান আলোচনা নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি। তবে তারা স্থায়ী যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে বলেছে, যুদ্ধে মানবিক কারণে সাময়িক বিরতি দেওয়া যেতে পারে। 

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বুধবার আবারও জানান, যুদ্ধও তখনই শেষ হবে যখন হামাস নির্মূল হবে, সব জিম্মি মুক্তি পাবেন এবং গাজা, ইসরায়েলের প্রতি আর কোনো ধরনের হুমকির সৃষ্টি করবে না।

বুধবারে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, 'যারা ভাবছেন আমরা থেমে যাব, তারা বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন। হামাসের সব সদস্যকে মরতে হবে, আজ হোক বা কাল হোক।'

ইসরায়েলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র গত সপ্তাহে আবারও দেশটিকে গাজায় সর্বাত্মক হামলার পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে হামলা চালানোর অনুরোধ জানিয়েছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন 'নির্বিচার বোমাবর্ষণে' পরিবর্তে গোয়েন্দা তথ্য ব্যবহার করে হামাস নেতাদের খুঁজে বের করে তাদের ওপর হামলা চালানোর সুপারিশ করেছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Killing of trader in old Dhaka: Protests erupt on campuses

Protests were held on campuses and in some districts last night demanding swift trial and exemplary punishment for those involved in the brutal murder of Lal Chand, alias Sohag, in Old Dhaka’s Mitford area.

3h ago