বঙ্গবাজারের পোড়া শাড়িতে নারায়ণগঞ্জে দুর্গাপূজার মণ্ডপ
ষষ্ঠী পূজার মধ্যদিয়ে আজ শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। দুর্গাপূজায় প্রতিবারই জমকালো আয়োজন থাকে নারায়ণগঞ্জ শহরে। এখানকার পূজামণ্ডপগুলোর ভিন্নধর্মী সজ্জা আকর্ষণ করে দর্শনার্থীদের।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এ শহরের জাকজমকপূর্ণ পূজার আয়োজন দেখতে আসেন অসংখ্য মানুষ। আয়োজকরাও উৎসাহের সঙ্গে বিভিন্ন থিমে মণ্ডপ সাজান। এর মধ্যে ব্যতিক্রমী সজ্জা হলে আলাদা করে নজর কাড়ে সবার।
ভিন্নধর্মী ভাবনা থেকে এবার শহরের টানবাজার সাহাপাড়া পূজা কমিটি মণ্ডপ সাজিয়েছে বঙ্গবাজারে পুড়ে যাওয়া শাড়ি দিয়ে।
গত এপ্রিলে রাজধানীর বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তায় ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
২০ বছর আগে প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিবছরই ভিন্ন ভিন্ন থিমে পূজামণ্ডপ সাজিয়ে থাকে সাহাপাড়া পূজা কমিটি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরিবেশবান্ধব ও সহজে পচনশীল প্রাকৃতিক উপাদান যেমন সুতা, বাঁশ, মাটির তৈরি পাত্র, কাগজের তৈরি ফুল ইত্যাদি ব্যবহার করে মণ্ডপ সাজাতে দেখা গেছে।
পূজা কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক সুমন সাহা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা এ বছর আমাদের ২০তম বার্ষিকী উদযাপন করছি। এ কারণে ভিন্ন ধরনের কিছু করার কথা ভাবছিলাম। গত বছর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এ বছর মণ্ডপ সাজাতে শাড়ি ব্যবহার করব। সজ্জায় প্রাধান্য দেব নারীশক্তিকে।'
'বঙ্গবাজার ট্র্যাজেডির পর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করে তাদের কাছ থেকে আগুনে পুড়ে যাওয়া শাড়ি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই,' যোগ করেন তিনি।
বিভিন্ন রঙের শাড়ির পাশাপাশি কালো রঙের শাড়িও ব্যবহার করা হয়েছে জানিয়ে পূজা কমিটির আরেক যুগ্ম-সম্পাদক সৌরভ সাহা বলেন, 'সাধারণত মণ্ডপের সাজে কালো রঙ ব্যবহার করা হয় না। কিন্তু বঙ্গবাজার ট্র্যাজেডিকে স্মরণ করে আমরা কালো রঙের শাড়িও ব্যবহার করেছি।'
বুধবার বিকেলে সরেজমিনে সাহাপাড়া গিয়ে দেখা যায়, মণ্ডপের সাজসজ্জা ও আলোকসজ্জার শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে। মণ্ডপের চারপাশ সাজানো হয়েছে নানা রঙের কাতান শাড়ি দিয়ে। সাজসজ্জার জন্য পাটখড়িও ব্যবহার করা হয়েছে। শাড়ি ও পাটখড়ি ব্যবহার করে বিভিন্ন বয়সের নারীদের প্রতিকৃতি মণ্ডপে প্রদর্শিত হয়েছে।
সৌরভ বলেন, 'আমরা বিশ্বাস করি, নারী হলো শক্তির আরেক রূপ। তারপরও আমাদের সমাজে নারীরা অবহেলিত ও লাঞ্ছিত। এ কারণে এবার আমরা মণ্ডপ সাজিয়েছি নারীদের অগ্রাধিকার দিয়ে। সবার কাছে নারীশক্তির বার্তা পৌঁছে দিতে চেয়েছি। নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার আহ্বান থাকবে এবারের সজ্জায়।'
এই পুজামণ্ডপের সাজসজ্জায় তিন শতাধিক শাড়ি ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
আয়োজকরা জানান, মণ্ডপে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করছেন। গত বছরও তারা পাটজাত বিভিন্ন সামগ্রী ব্যবহার করে মণ্ডপ সাজিয়েছিলেন।
সুমন সাহা বলেন, 'গত ৭-৮ বছর ধরে আমরা পরিবেশের দিকে নজর রেখে প্লাস্টিক ও প্লাস্টিকজাত কর্কশিটের ব্যবহার এড়িয়ে যাচ্ছি। আমাদের মণ্ডপের পাশেই শীতলক্ষ্যা নদী। দিন দিন এ নদী দূষণে নষ্ট হচ্ছে। এটা মাথায় রেখে দূষণে আর অংশীদার না হওয়ার সিদ্ধান্ত নেই।'
নারায়ণগঞ্জের পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন ডেইলি স্টারকে জানান, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এ উৎসব উপলক্ষে এ বছর জেলাজুড়ে ২২৪টি মণ্ডপ স্থাপন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, 'দুর্গা উৎসবের আয়োজন আগেই শুরু হয়েছে। আমাদের প্রস্তুতি প্রায় শেষ। আমরা নারায়ণগঞ্জ শহরের মানুষ সবসময় অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী এবং ভবিষ্যতেও থাকব। এখানে সব ধর্মের মানুষ সহাবস্থানে থেকে বিভিন্ন উৎসব পালন করে থাকে।'
নারায়ণগঞ্জে দুর্গোৎসবকে সামনে রেখে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছে।'
Comments