পূজার বাদ্য ক্রেতা টানছে পোশাকের দোকানে

দুর্গাপূজা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, পোশাক ব্রান্ড, ইলিশ,
রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে একটি আউটলেটে এক নারী পোশাক দেখছেন। ছবি: প্রবীর দাস

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে ফ্যাশন ব্র্যান্ড ও খুচরা বিক্রেতাদের দোকানে ক্রেতাদের আনাগোনা বেড়েছে।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় পূজার আগে বিক্রি নিয়ে সংশয়ে ছিলেন ব্যবসায়ীরা। তবে সেই আশঙ্কা এখন কমেছে।

অনেকে বলছেন, এই বছরের ১০ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাওয়া দুর্গাপূজার আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলে বিক্রি বাড়তে পারে৷

ব্যবসায়ীদের মতে, বাংলাদেশে উৎসব সংশ্লিষ্ট বিক্রির প্রায় ৭০ শতাংশ হয় ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা থেকে। বাকিটা বাংলা নববর্ষ ও পূজার সময়ে হয়।

পোশাকের পাশাপাশি এসময় ভোক্তাদের কাছে ইলেকট্রনিক্স, মিষ্টি ও ইলিশ মাছেরও চাহিদা বাড়ে।

সাধারণত পূজা শুরুর প্রায় দশ দিন আগে থেকে বিক্রি বেশি হয়, যা পূজা শেষের তিনদিন পরও অব্যাহত থাকে। তবে, এবার এমন সময়ে পূজা হচ্ছে যখন মানুষ উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে আছে।

গতকাল প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ২০২৩ সালের মার্চ থেকে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে আছে। এই উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেশের সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়েছে।

এদিকে পোশাকের দাম বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইডেন মহিলা কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী উপমা দে।

তিনি বলেন, 'গত দুর্গাপূজায় আমার খরচ হয়েছিল ৭ হাজার ৮০০ টাকা। কিন্তু এ বছর একই সংখ্যক পোশাকের জন্য প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কাপড়ের মানও কমছে।'

একই কথা বলেন ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী দীপা প্রতিভা দাস। তার ভাষ্য বলেন, পোশাকের দাম আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। গত বছর যে পাঞ্জাবি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় কিনেছিলাম, এখন তার দাম ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা।

আরও ক্রেতার সঙ্গে কথা বললে, তারাও একই কথা বলেন। কিন্তু ক্রেতারা দাম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও খুচরা বিক্রেতারা ক্রেতা পেয়ে খুশি।

শারদীয় দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে ভালো বিক্রি দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন জনপ্রিয় রিটেইল ফ্যাশন ব্র্যান্ড সারা লাইফস্টাইল লিমিটেডের পরিচালক শরিফুন রেবা।

তিনি বলেন, 'এটা আমাদের জন্য বছরের একটি বিশেষ সময়। সব ধরনের পোশাকের বিক্রি বেড়েছে।'

তার তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের দুর্গাপূজার সঙ্গে তুলনা করা হলে বছরওয়ারি বিক্রি প্রায় দুই থেকে তিন বেড়েছে।

'আমরা আশাবাদী আসন্ন উৎসব আমাদের ব্যবসার জন্য একটি সফল মৌসুম হবে,' বলেন তিনি।

ফ্যাশন ওয়্যার, অ্যাকসেসরিজ ও হোম টেক্সটাইলের খুচরা বিক্রেতা কে-ক্রাফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা খালিদ মাহমুদ খান জানান, দেশজুড়ে তাদের ১৬টি আউটলেটে ক্রেতা সমাগম বেড়েছে।

তিনি বলেন, 'গত বছরের দুর্গাপূজার বিক্রির সঙ্গে এবারের তুলনা করলে দেখা যাবে, প্রায় একই অবস্থা।'

দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, 'বিষয়টি ভোক্তাদের আস্থায় কমিয়েছে।'

তবে, পূজার আগের সপ্তাহে বিক্রি বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি।

ব্যবসায়ীরা জানান, শাড়ি ও সালোয়ার কামিজের ভালো চাহিদা আছে। ক্রেতাদের আগ্রহ মূলত কাতান, সিল্ক ও এমব্রয়ডারি করা শাড়িতে। জামদানি শাড়িও চায় কেউ কেউ।

রং বাংলাদেশের ব্যবস্থাপক সৌমিক দাস বলেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও বিক্রি ভালো হচ্ছে।

তবে আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়নি বলে জানান তিনি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে পূজার আগে বিক্রি আরও বাড়বে বলে জানান তিনি।

অবশ্য ভিন্ন কথা বলছেন ঢাকার নিউ মার্কেটে দোকানি মোহাম্মদ রাসেল। তিনি বলেন, 'ক্রেতার উপস্থিতি কমে গেছে। দোকান সারাদিন প্রায় ফাঁকা থাকে।'

একই এলাকার এক শাড়ি বিক্রেতা জানান, এ বছর শাড়ির দোকানে ক্রেতার উপস্থিতি তুলনামূলক কম।

তিনি বলেন, 'আমাদের দাম গত বছরের মতো থাকলেও ক্রেতা সংখ্যা অনেক কমে গেছে।'

রাজধানীর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের এক দোকানি জানান, শাড়ি, পাঞ্জাবি ও নারীদের কুর্তির দাম গত বছরের মতো আছে।

সাধারণত যে কোনো বড় উৎসবের হোম অ্যাপ্লায়েন্স খুচরা বিক্রেতাদের বিক্রি বাড়ে। তবে ইলেক্ট্রো মার্ট লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আফসারের মতে, হোম অ্যাপ্লায়েন্সের কেনাকাটা এখনো পুরোপুরি শুরু হয়নি।

অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে বিক্রি বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি।

খাদ্য ও পানীয় শিল্পও দুর্গাপুজোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, খুচরা বিক্রেতারা বিক্রি বৃদ্ধির প্রত্যাশা করছেন।

ওয়েল ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক শাহ মোস্তাক আহমেদ বলেন, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে মিষ্টি বিক্রি বাড়তে শুরু করেছে।

প্রতি বছরের মতো এবারও দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টিতে ১০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে। তবে বিক্রির উল্লেখযোগ্য উৎস করপোরেট অর্ডার এখনো আসতে শুরু করেনি।

যাত্রাবাড়ী মাছ বাজারের পাইকারি মাছ ব্যবসায়ী খোকন চন্দ্র সমাদ্দার বলেন, সাধারণত দুর্গাপূজার সময় ইলিশের চাহিদা বেড়ে যায়। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সোমবার প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ৫০ টাকা।

তিনি জানান, ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের মাছ এক হাজার ৫০০ টাকা, এক কেজি ওজনের মাছ এক হাজার ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক কেজির বেশি ওজনের প্রতিটি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৭৫০ টাকা কেজি দরে।

Comments

The Daily Star  | English

Crowd control: Police seek to stop use of lethal weapon

The police may stop using lethal weapons and lead pellets for crowd control as their widespread use during the July mass uprising led to massive casualties and global criticism.

8h ago