রক্তঝরা অভ্যুত্থানের ছায়ায় বিপ্লব-শোক-আশার একুশে বইমেলার পর্দা উঠছে আজ বিকেলে

ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

মাসব্যাপী বই উৎসব শুরু হচ্ছে আজ থেকে। অমর একুশে বইমেলা কেবল একটি বইমেলা নয়, বরং ভাষা, সংস্কৃতি ও প্রতিরোধের অমর চেতনার প্রতীক। মাসব্যাপী এই উৎসব বাঙালির লেখালেখির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে বহন করে।

এবারের বইমেলা আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এটি প্রথম বইমেলা। সেই আন্দোলনের প্রতিধ্বনি বইমেলার আবহে প্রতিফলিত হবে। যার মাধ্যমে এটি শুধুমাত্র বইয়ের উৎসব নয়, বরং জনগণের কণ্ঠস্বরের শক্তির প্রতীক হয়ে উঠবে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে সাহিত্য ও প্রতিবাদ একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আর এবারের বইমেলা সেই ঐতিহ্যকেই ধারণ করছে।

আজ শনিবার বিকেল ৩টায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস বইমেলা উদ্বোধন করবেন। একই অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করা হবে।

এবারের মেলার প্রতিপাদ্য বিষয় 'জুলাই গণঅভ্যুত্থান: নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ'।

এ বছর বইমেলার কলেবর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেড়েছে। এ বছর ৭০৮টি প্রকাশনা সংস্থার জন্য ১ হাজার ৮৪টি ইউনিট বরাদ্দ করা হয়েছে। গত বছর ৬৪২টি প্রতিষ্ঠান ৯৪৬টি ইউনিট বরাদ্দ পেয়েছিল।

এবার বাংলা একাডেমি চত্বরে ৯৯টি ইউনিট এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৬০৯টি ইউনিট বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া, প্যাভিলিয়ন রয়েছে ৩৭টি, যার মধ্যে বাংলা একাডেমিতে একটি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৩৬টি।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্ত মঞ্চের পাশে গাছের ছায়ায় স্থাপন করা হয়েছে লিটল ম্যাগাজিন চত্বর। সেখানে ১৩০টি লিটল ম্যাগাজিনকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

শিশু কর্নারের পরিসরও বেড়েছে। ৭৪টি প্রতিষ্ঠানের জন্য ১২০টি ইউনিট বরাদ্দ করা হয়েছে, যেখানে গত বছর ৬৮টি প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ পেয়েছিল ১০৯টি ইউনিট।

এবারের বইমেলার প্রতীকী রং লাল, কালো ও সাদা। লাল বিপ্লবের প্রতীক, কালো শোকের প্রতীক এবং সাদা আশার প্রতীক।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রভাব মেলার পরতে পরতে অনুভূত হবে। বিশেষ করে 'জুলাই কর্নার'-এ। এখানে আন্দোলনের ওপর লেখা সাহিত্য ও ইতিহাস স্থান পাবে।

বইমেলা আয়োজন কমিটির সদস্যসচিব সরকার আমিন জানান, এবারের মেলায় মেট্রোরেল স্টেশনের অবস্থানের কারণে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। বের হওয়ার পথ রমনা কালী মন্দির গেটের দিকে কিছুটা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বইমেলা চলবে। তবে, সরকারি ছুটির দিনে চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।

২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে বইমেলা। শিশুদের জন্য প্রতি শুক্রবার ও শনিবার সকাল ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত বিশেষ আয়োজন থাকবে এবারের মেলায়— ৮ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি ছাড়া।

বাংলা একাডেমি ও অন্যান্য প্রকাশনীগুলো বইমেলায় ২৫ শতাংশ ছাড়ে বই বিক্রি করবে। প্রতিদিন বিকেল ৪টায় মূল মঞ্চে সেমিনার ও সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে।

বাংলা একাডেমি এবারের বইমেলায় ৪৩টি নতুন বই ও ৪১টি পুনর্মুদ্রিত সংস্করণ প্রকাশ করছে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের জন্য আলাদা জায়গার ব্যবস্থাও থাকছে।

বইমেলাকে পুরোপুরি পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। সেইসঙ্গে মেলার প্রবেশ ও বহির্গমন পথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ে স্থাপন করা হয়েছে। পুলিশ, র‍্যাব, আনসার ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মেলার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

বইমেলার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের পাশে খাবারের স্টল স্থাপন করা হয়েছে। মেলায় থাকছে নামাজের জায়গা।

Comments

The Daily Star  | English

‘No room for politics under AL name, ideology’

Nahid Islam, adviser to the interim government, spoke with The Daily Star on the nation's key challenges and the way forward.

13h ago