আগামী বছর থেকে নতুন ভেন্যুতে হতে পারে বইমেলা

ছবি: ইমরান মাহফুজ/স্টার

'সোনার বাংলা সাংস্কৃতিক অঞ্চল' গড়ে তোলার জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মাঠ অধিগ্রহণের সরকারি সিদ্ধান্তের কারণে আগামী বছর থেকে সেখানে বইমেলার আয়োজন করার বিষয় নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রাথমিক সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে আমরা নিশ্চিত যে, ২০২৫ সালের বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করতে পারব না। বইমেলার জন্য বিকল্প ভেন্যু খুঁজছে মন্ত্রণালয়।'

তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী ও সংস্কৃতিমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মুক্তিযুদ্ধ, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণ, ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ভাষা আন্দোলনসহ দেশের বিভিন্ন ইতিহাস তুলে ধরতে ২০০০ সালের প্রথম দিকে সাংস্কৃতিক অঞ্চলের কাজ শুরু হয়। শিল্পকলা একাডেমি, শহীদ মিনার, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বাংলা একাডেমি, টিএসসি, শাহবাগ, রমনা পার্ক সবই এই সাংস্কৃতিক অঞ্চলের অংশ।

স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পের তৃতীয় ধাপের অংশ হিসেবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওয়াকওয়ে, ফুড কোর্ট, পানির ফোয়ারা, মসজিদ ও ভূগর্ভস্থ কার পার্ক (নির্মাণাধীন) নির্মাণ করা হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থানগুলোও সংরক্ষণ করা হবে।

বইমেলা আগের জায়গায় নাও হতে পারে—এমন খবর পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন লেখক, প্রকাশক ও বইপ্রেমীরা।

গতকাল বইমেলা প্রাঙ্গণ থেকে হাসনাত শাহীন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার স্কুলজীবন থেকেই বইমেলায় আসছি। এই প্রাঙ্গণ ছাড়া অন্য কোথাও বইমেলা হবে, তা আমরা কল্পনাও করতে পারি না।'

আগামী প্রকাশনীর মালিক প্রকাশক ওসমান গনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তারা একটি সাংস্কৃতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করছে, এটা ঠিক আছে। কিন্তু অমর একুশে গ্রন্থমেলা কি আমাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ নয়? তারা কীভাবে এমন একটি পরিকল্পনা কল্পনা করে?'

অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাজহারুল ইসলাম বলেন, 'অমর একুশে বইমেলা আমাদের ভাষা আন্দোলন, আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। লেখক, প্রকাশক ও বইপ্রেমীরা বছরজুড়েই মেলার অপেক্ষায় থাকেন। বইমেলা অন্যত্র স্থানান্তরিত হলে এর জৌলুস হারাবে, এটা ধ্বংস হয়ে যাবে।'

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলা আয়োজন সম্ভব না হলে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মেলা আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন লেখক ইমদাদুল হক মিলন।

তবে বইমেলা স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত না হওয়ায় আয়োজকরা আশাবাদী যে, পরবর্তী বইমেলাও একই স্থানে অনুষ্ঠিত হবে।

বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব এ কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, 'আমরা প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছিলাম ঐতিহ্যবাহী এই ভেন্যুতেই মেলা আয়োজনের ব্যবস্থা করার জন্য।'

বইমেলার ইতিহাসের শুরু ১৯৭২ সালে, যখন প্রকাশনা সংস্থা মুক্তধারার মালিক চিত্তরঞ্জন সাহা বাংলা একাডেমির সামনে একটি গাছের নিচে মাদুরের ওপর কিছু বই প্রদর্শনের কাজ শুরু করেন।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্টলগুলোতে আসা বইপ্রেমীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমি আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার দায়িত্ব নেয়।

১৯৭৯ সালে প্রকাশক ও পুস্তক বিক্রেতাদের সহযোগিতায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে একটি বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। এর পাঁচ বছর পর বাংলা একাডেমিতে প্রথমবারের মতো অমর একুশে গ্রন্থমেলা অনুষ্ঠিত হয়।

২০১৩ সাল থেকে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে এ মেলার আয়োজন করা হচ্ছে।

এবারের মেলায় ৯৩৭টি স্টলের মধ্যে ৭৬৪টি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ও ১৭৩টি স্টল বাংলা একাডেমিতে।

Comments

The Daily Star  | English

Tanvir takes five as Tigers clinch 2nd Sri Lanka ODI

Bangladesh captain Mehidy Hasan Miraz has won the toss and opted to bat first in the second ODI against Sri Lanka, looking to keep the three-match series alive with a win at the R Premadasa Stadium today. 

14h ago