রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদন

চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের হস্তক্ষেপ চেয়ে ইসকনের বিবৃতি দেওয়ার দাবি মিথ্যা

ছবি: রিউমর স্ক্যানার

জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে দায়েরকৃত রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গত ২৫ নভেম্বর গ্রেপ্তার হন বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও ইসকন থেকে বহিষ্কৃত নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী। পরদিন ২৬ নভেম্বর পুলিশ তাকে চট্টগ্রাম ষষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে হাজির করলে তিনি আদালতে জামিন আবেদন করেন। তবে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপর গত ৩ ডিসেম্বর চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের শুনানি থাকলেও তার পক্ষে আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় তা পিছিয়ে আগামী ২ জানুয়ারি ধার্য করেন আদালত। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক রয়েছেন।

এদিকে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে যে, তাকে আটকের পর ভারতের হস্তক্ষেপ চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে ইসকন বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম।

বাংলাদেশের তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারের ঘটনায় ইসকন কর্তৃপক্ষ ভারতের হস্তক্ষেপ চেয়ে কোনো বিবৃতি দেয়নি। প্রকৃতপক্ষে ভারতের কৃষ্ণ কনশাসনেস সোসাইটি (KCS) নামের ভিন্ন একটি সংগঠনের এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্টের ভিত্তিতে এই দাবিটি প্রচারিত হয়েছে।

রিউমর স্ক্যানার দেখেছে, গণমাধ্যমগুলো 'Iskcon,Inc.' নামের এক এক্স অ্যাকাউন্টের প্রকাশিত পোস্টকে এই দাবির সূত্র হিসেবে উল্লেখ করেছে।

২৫ নভেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায় ওই অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্টে দাবি করা হয়, আমরা অত্যন্ত উদ্বেগজনক খবর পেয়েছি যে,  ঢাকা মহানগর পুলিশ ইসকন বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ নেতা শ্রী চৈতন্য কৃষ্ণ দাসকে আটক করেছে। ইসকনের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের কোনো সম্পর্ক আছে—এমন ভিত্তিহীন অভিযোগ অত্যন্ত নিন্দনীয়। অবিলম্বে বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে এই বিষয়টি সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে এবং ইসকনের শান্তিপূর্ণ ও ইতিবাচক ভূমিকা তুলে ধরতে আমরা ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।'

তবে, 'Iskcon,Inc.' নামের এই এক্স অ্যাকাউন্টটি আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন)-এর অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট নয়।

নেত্র নিউজের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, 'Iskcon,Inc.' নামের এক্স অ্যাকাউন্টটি ভারতের রাজস্থানের জয়পুরভিত্তিক কৃষ্ণ কনশাসনেস সোসাইটি (KCS) নামের ভিন্ন একটি সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্কিত। ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনটি পরিচালনা করেন এইচ জি গৌরাঙ্গ সুন্দর দাস।

প্রতিবেদনে Kelley v. Gupta মামলার আইনগত নথির বরাতে জানানো হয়, 'Iskcon,Inc.' এবং আন্তর্জাতিক ইসকনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের লং আইল্যান্ডে সম্পত্তি অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। এই বিরোধ এবং সংগঠনগুলোর কার্যক্রম স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, 'Iskcon,Inc.' এবং আন্তর্জাতিক ইসকন দুটি পৃথক এবং পরস্পরবিরোধী সংগঠন।

রিউমর স্ক্যানারের পর্যবেক্ষণেও দেখা গেছে, 'Iskcon,Inc.' নামের ওই এক্স অ্যাকাউন্ট এবং একই নামের ফেসবুক পেজ থেকে কৃষ্ণ কনশাসনেস সোসাইটি (KCS)-এর লোগো সম্বলিত বিভিন্ন ফটোকার্ড নিয়মিতভাবে প্রচারিত হচ্ছে, যা এই এক্স অ্যাকাউন্টের সঙ্গে KCS সংগঠনের সম্পর্ককে নিশ্চিত করে।

এদিকে, ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস (ইসকন)-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক পেজে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারের পর ভারতের হস্তক্ষেপ চেয়ে কোনো বিবৃতি প্রকাশিত হয়নি। একইভাবে সংস্থাটির ইউটিউব অ্যাকাউন্টের 'অ্যাবাউট' সেকশনে সংযুক্ত এক্স অ্যাকাউন্টেও এমন কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি। বরং ২৮ নভেম্বর ইসকন থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানানো হয় যে, তারা বাংলাদেশে হিন্দুদের সুরক্ষা ও উপাসনাস্থল রক্ষার জন্য চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অধিকারকে সমর্থন করে। তবে ইসকন স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে যে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস সংগঠনটির আনুষ্ঠানিক প্রতিনিধি নন এবং এই তথ্যটি পূর্বেও একাধিকবার জানানো হয়েছে।

এ ছাড়া, ইসকন বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে যে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে গত জুলাই মাসে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
 
'Iskcon,Inc.' নামের ওই এক্স অ্যাকাউন্টের বিষয়ে রিউমর স্ক্যানার ইসকন বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ইসকন কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে যে, অ্যাকাউন্টটি ইসকনের কোনো অফিশিয়াল অ্যাকাউন্ট বা মুখপাত্র নয়।

এই প্রসঙ্গে ইসকন বাংলাদেশের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হৃষীকেশ গৌরাঙ্গ দাস রিউমর স্ক্যানারকে জানিয়েছেন, ইসকন বাংলাদেশ ভারত সরকারকে কোনো বিষয়ে আবেদন জানায়নি। 

তিনি আরও বলেন, 'ইসকন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা কখনো কোনো রাষ্ট্রীয় বিষয়ের মধ্যে হস্তক্ষেপ করি না। ইসকন একটি সম্পূর্ণ ধর্মীয়, মানবিক ও সামাজিক সংগঠন, যা কোনো রাজনৈতিক বিষয় দ্বারা প্রভাবিত হয় না।'

'চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে আটকের পর ইসকন বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম ভারতের হস্তক্ষেপ চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে' দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে জানিয়েছে রিউমর স্ক্যানার।

Comments

The Daily Star  | English

Polythene ban: A litmus test for will and eco-innovation

Although Bangladesh became the first country in the world to announce a complete ban on the use of polythene bags in 2002, strict enforcement of the much-lauded initiative has only started taking shape recently.

14h ago