তিস্তার ভাঙনে ২ সপ্তাহে বিলীন প্রায় ২০০ বসতভিটা
লালমনিরহাটে তীব্র আকার ধারণ করেছে তিস্তা নদীর ভাঙন। জেলার সদর, আদিতমারী ও হাতীবান্ধা উপজেলায় তিস্তাপাড়ে ১৬টি পয়েন্টে প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
গত দুই সপ্তাহে বিলীন হয়ে গেছে প্রায় ২০০ বসতভিটা ও ৪০০ বিঘার বেশি আবাদি জমি। ভাঙন হুমকিতে রয়েছে সহস্রাধিক বসতভিটা ও প্রায় দেড় হাজার বিঘা আবাদি জমি।
ভাঙনকবলিত এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভাঙন তীব্র হলেও নিষ্ক্রিয় প্রশাসন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা কেবল পরিদর্শন করে চলে যান, ভাঙন ঠেকাতে কোনো উদ্যোগ নেন না।
তারা বলেন, বসতভিটা হারিয়ে অনেক পরিবার সরকারি রাস্তা ও অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের দিন কাটছে খোলা আকাশের নিচে। আবাদি জমি নদী গর্ভে চলে যাওয়ায় অনেকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
আদিতমারী উপজেলার গোবর্ধান গ্রামের গৃহবধূ শ্যামলী বেগম শুক্রবার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এক সপ্তাহ আগেও তাদের আট শতাংশ জমির ওপর তিনটি ঘর ছিল। তিন বিঘা আবাদি জমি ছিল।
'ভাঙনে সব চলে গেছে। খোলা আকাশের নিচে আছি, কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি,' বলেন তিনি।
শ্যামলীর স্বামী আলম হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পানি উন্নয়ন বোর্ড সময় মতো জিও ব্যাগ ফেললে আমরা রক্ষা পেতাম। এক সপ্তাহ আগেও আমাদের পরিবার সচ্ছল ছিল, এখন আমরা চরম দারিদ্র্যতার সঙ্গে লড়াই করছি।'
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মতিয়ার রহমান মতি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত দুই সপ্তাহে গোবর্ধান ও গরিবুল্লাপাড়া গ্রামের অর্ধশতাধিক বসতভিটা ও প্রায় ১৫০ বিঘা আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আরও দুই শতাধিক বসতভিটা ও শতাধিক বিঘা আবাদি জমি ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে।'
তিনি বলেন, 'পানি উন্নয়ন বোর্ডে বারবার যোগাযোগ করছি। কিন্তু জরুরিভিত্তিতে ভাঙন ঠেকাতে তারা কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না।'
গত কয়েকদিন ঘুরে দেখা গেছে আদিতমারী উপজেলার গোবর্ধান, গরিবুল্লাপাড়া, সদর উপজেলার হরিণচড়া, খলাইঘাট ও হাতীবান্ধা উপজেলার পাউয়াবাড়ী গ্রামে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে।
এ ছাড়া, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, গোকুন্ডা, চর গোকুন্ডা, কালোমাটি, আদিতমারী উপজেলার কুটিরপাড়, বালাপাড়া, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্না ও চর গড্ডিমারী এবং পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে পানি উন্নয়ন বোর্ড লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিস্তার কয়েকটি পয়েন্টে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভাঙন ঠেকাতে জরুরিভিত্তিতে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। তবে ফান্ড না থাকায় কোনো পদক্ষেপই নেওয়া যাচ্ছে না।'
'ফান্ডের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। ফান্ড পেলেই আমরা ভাঙন ঠেকাতে কাজ শুরু করব,' বলেন তিনি।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার ডেইলি স্টারকে জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসনে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Comments