চাঁদপুর সেতুর টোল আদায় নিয়ে বিক্ষোভ, দেড় ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ
নির্মাণের ১৯ বছর হতে চললেও চাঁদপুর সেতুর টোল আদায় কার্যক্রম বন্ধ না করে নতুন করে মোটরসাইকেলে পাঁচ টাকা করে টোল চালু করায় বিক্ষোভ করেছেন সেতু ব্যবহারকারী যানবাহন চালকেরা।
গত সোমবার থেকে চাঁদপুরের মোটরসাইকেল চালকেরা বিক্ষোভ শুরু করলেও আজ শনিবার থেকে সাধারণ যানবাহন চালকরা চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়ে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন।
সকাল ১১টা থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ চলে দুপুর ১টা পর্যন্ত। পরে চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে একদল পুলিশ এসে আন্দোলনকারীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিলে প্রায় দেড় ঘণ্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
ক্ষুব্ধ মোটরসাইকেল চালক নাজমুল হাসান জানান, এই সেতুর টোল আদায় বন্ধে দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন এলাকাবাসী। এ নিয়ে জাতীয় সংসদেও একাধিকবার টোল বন্ধের দাবি তুলে প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু তা বন্ধ না করায় সবাই বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন।
চাঁদপুর সিএনজি অটোরিকশা সমিতির সভাপতি আবুল বাশার বলেন, আমরা এই সেতুতে প্রায় ১৯ বছর ধরে টোল দিয়ে আসছি। এতে অনেকে এই সেতু দিয়ে একাধিকবার যাতায়াত করায় গড়ে প্রতিদিন দেড়শ থেকে ২০০ টাকা টোল দিয়ে আসছে। আমরা বার বার এই টোল বন্ধের দাবি করলেও তা বন্ধ হচ্ছে না।
চাঁদপুর বাগাদী এলাকার জাকির হোসেন হিরু বলেন, আমরা এই সেতুতে আর কোনো ধরনের টোল আদায় হোক চাই না। এ টোল বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
জানা গেছে, ২০০৫ সালে চাঁদপুর সদর উপজেলার গাছতলা এলাকায় ডাকাতিয়া নদীর উপর চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে ১৮ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় 'চাঁদপুর সেতু'।
২০০৫ সালের ১৭ মার্চ এই সেতুর উদ্বোধন করা হয়। ২৪৮ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন হাজারো যানবাহন চলাচল করে। প্রতিবার সেতু ব্যবহার করার সময় টোল দেওয়া লাগে যানবাহন চালকদের।
এতে দেখা গেছে দীর্ঘ ১৯ বছরে সেতু নির্মাণ ব্যয়ের দ্বিগুণ অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা হলেও বন্ধ হয়নি টোল আদায়। এতে যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের পড়তে হচ্ছে বেকায়দায়।
প্রতিদিন চাঁদপুর সেতু দিয়ে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও দক্ষিণাঞ্চলের শতশত যানবাহনে হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে। টোল আদায় বন্ধ না হওয়ায় গাড়ির চালকরা এসব যাত্রীর কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
চাঁদপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মারুফ হোসেন বলেন, এই সেতুতে টোল আদায়ে সব সময়ের মতো এবারও তিন বছরের ইজারা দেওয়া হয়। কিন্তু আন্দোলনকারীরা টোল না দেয়ার পক্ষে আন্দোলন করলেও তারা কোনো প্রকার স্মারকলিপি বা চিঠি দেননি। তবে এর আগে চাঁদপুর-৪ ফরিদগঞ্জ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামছুল হক ভূঁইয়া টোল বন্ধের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু এ নিয়ে আমরা এখনো এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পাইনি।
তিনি জানান, আজকের মানববন্ধনের পর সাময়িকভাবে টোল আদায় বন্ধ আছে।
মোটরসাইকেল থেকে ৫ টাকা করে টোল আদায়ের বিষয়ে বলেন, ইজারাদাররা গত পাঁচ বছর কেন মোটরসাইকেল থেকে টোল আদায় করেননি এবং এখন কেন মোটরসাইকেল থেকে টোল আদায় করছেন এই ব্যাখ্যা ইজারাদাররা দেবেন।
সেতুর ইজারাদার এমআই ট্রেডিং। যার সত্ত্বাধিকারী মোহসিন গাজী। জানা যায়, ৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ইজারা নিয়েছে।
ইজারাদার প্রতিনিধি মো. কাঁকন বলেন, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী চাঁদপুর সেতুতে টোল আদায় করা হচ্ছে। টোল আদায়ের রশিদ সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রতিদিন শত শত সিএনজি-অটোরিকশা যাতায়াত করে, এত দ্রুত সবাইকে রশিদ দেওয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু আমরা বড় যানবাহনগুলোতে রশিদ দিয়ে থাকি।
মোটরসাইকেলের টোল আদায়ের বিষয়ে তিনি জানান, গত ৫ বছর মোটর সাইকেল থেকে কোনো টোল আদায় করা হয়নি। এতে আমাদের ক্ষতি হয়েছে। এখন সরকার থেকে মোটরসাইকেলে টোল আদায়ের জন্য আমাদের চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। তাই মোটর সাইকেল থেকে পাঁচ টাকা করে টোল আদায় করা হচ্ছে।
Comments