ড. ইউনূস আজকে যে উঠেছেন, সেখানে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা আমি করেছিলাম: প্রধানমন্ত্রী

‘শেখ হাসিনা কারো সঙ্গে জেলাসি করে না। শেখ হাসিনা ফাদার অব দ্য নেশনের মেয়ে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

প্রতিবারই মামলা হওয়ার পর কিছু টাকা শোধ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসই ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার বিষয়টি প্রমাণ করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সাম্প্রতিক ভারত সফর নিয়ে আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সংবাদ সম্মেলনে টাইমস ম্যাগাজিনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন বিষয়ে উল্লেখ করে জানতে চাওয়া হয়।

জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমি লেখাটা পড়েছি। যেহেতু মামলা চলছে, আমি কোনো কমেন্ট করতে চাই না। কিন্তু একটা প্রশ্ন তাদেরকে করতে পারেন—আমেরিকা হোক, ইউরোপ হোক, যেকোনো দেশেই, কেউ যদি বছরের পর বছর ট্যাক্স ফাঁকি দেয়, তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা সেই সরকার নেয়। কেউ যদি ট্যাক্স ফাঁকি দেয়, তাহলে কী ব্যবস্থাটা তারা নেয়। তার উত্তরটা কিন্তু এরা দেয়নি। দ্বিতীয় হলো শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে এত কথা হয়, কিন্তু সেই শ্রমিকদের ওয়েলফেয়ার ফান্ডের টাকা, কেউ ব্যবসা করলে ব্যবসার পাঁচ শতাংশ টাকা ওয়েলফেয়ার ফান্ডে দিতে হয়। এখন সেই শ্রমিকদের অর্থ যদি কেউ মেরে খায়, না দেয়, তাদের ন্যায্য পাওনাটা যদি না দেয়, তার বিরুদ্ধে তারা কী ব্যবস্থা নিয়ে থাকে? ইউনূসের বিরুদ্ধে আমরা বা আমাদের সরকার লাগেনি।

'বরং আপনাদের মনে আছে একটা কথা, গ্রামীণ ব্যাংকটা তৈরি করেছিল জেনারেল এরশাদ সাহেবের আমলে। একজন এমডি খোঁজা হচ্ছিল, তখন ড. ইউনূসকে এনে সেই ব্যাংকের এমডি করা হয়। এই ব্যাংক কিন্তু তার নিজের করা না। সে সেখানে এমডি হিসেবে চাকরি করত। এমডি হিসেবে চাকরি করতেন এবং বেতন তুলতেন। আর গ্রামীণ ব্যাংকটা হচ্ছে সরকারের সংবিধিবদ্ধ সংস্থা। ওই টাকা, বেতন সব কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকেই দেওয়া হতো। সরকারের কেউ বাইরে গেলে জিও নিয়ে যেতে হতো। সেই চাকরিরত অবস্থায় সেটাকে তিনি নিজে এমনভাবে প্রচার করেছেন যে এটা যেন তার নিজেরই করা।'

তিনি বলেন, ওই ব্যাংকের আইনে ছিল যে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত একজন এমডি থাকতে পারে চাকরিতে। ৬০ বছরের ওপরেও আরও ১০ বছর তিনি আইন ভঙ্গ করেই ছিলেন। যখন বাংলাদেশ ব্যাংক এই জিনিসটা তার নজরে আনে এবং তাকে আমাদের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী মুহিত সাবেক ও আমার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা গওহর সাহেব তাকে অনুরোধ করেছিলেন, যে আপনার তো বয়স হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে ১০ বছর বেশি আপনি অবৈধভাবে এখানে আছেন। তো আপনি এখানে উপদেষ্টা হিসেবে থাকেন। কিন্তু তিনি এমডি পদ ছাড়বেন না। এমডি পদ তাকে রাখতেই হবে। ড. ইউনূস কিন্তু আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে, অর্থমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের বিরুদ্ধে দুইটা মামলা করেন। এ কথা তো সেই পত্রিকাওয়ালারা লেখেনি। দুইটা মামলা করেন এবং দুইটা মামলাই হেরে যায়। মামলা কিন্তু কখনো সরকার করেনি।

'এখনো তার বিরুদ্ধে যে মামলা, এটা কিন্তু সরকার করেনি। গ্রামীণফোনের ব্যবসাটা আমিই তাকে দিয়েছিলাম। এটাও মনে রাখা উচিত। গ্রামীণ ফোনের ব্যবসাটা তাকে আমি দিয়েছিলাম কারণ গ্রামীণ ব্যাংক তার আমলে প্রায় কলাপস করে যাচ্ছিল। তখন আমার সরকার, আমি নিজে প্রথমে ১০০ কোটি টাকা, এরপরে ২০০ কোটি টাকা, তারপর আরও ১০০ কোটি টাকা, এই ৪০০ কোটি টাকা গ্রামীণ ব্যাংকে আমরা সরকারের পক্ষ থেকে দিয়ে ব্যাংকটা চালু রাখতে তাকে সহায়তা করি। তখন তিনি প্রস্তাব দেন যে গ্রামীণ ফোনের ব্যবসাটা পেলে এর যে প্রফিটটা হবে সেটা গ্রামীণ ব্যাংকে জমা হবে এবং সেটা দিয়ে ব্যাংক চলবে। তাকে জিজ্ঞাসা করা উচিত, আজ পর্যন্ত ওই গ্রামীণফোনের একটি টাকাও গ্রামীণ ব্যাংককে দেওয়া হয়েছে কি না। দেওয়া কিন্তু হয়নি।'

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, শুধু এখানেই না, গ্রামীণ ব্যাংকের বিদেশ থেকে অনেক সময় অনেক অনুদান এসেছে, তার কয়টা টাকা গ্রামীণ ব্যাংকে গেছে। প্রতিটা সময় ওইটা দিয়ে নতুন একটা ব্যবসা খুলে ব্যবসা করেছেন। কিন্তু কোনো ট্যাক্সই দেননি। এই  যে ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েছেন, সেটা তো তিনি নিজেই প্রমাণ করেছেন। কারণ তার বিরুদ্ধে যখনই মামলা হয়েছে, এটা বিদেশে নিয়ম আছে, যখনই মামলা হয়েছে, তিনি কিছু টাকা শোধ দিয়ে বসে আছে। তো যখনই কিছু টাকা শোধ দিলো, তখনই তো প্রমাণ হয়ে গেল যে তিনি ট্যাক্স ফাঁকি দেন। এমনকি ওই টেলিনর, গ্রামীণফোন সেখানে থেকেও কয়েক দফায় তার কাছ থেকে এভাবে টাকা আদায় করা হয়েছে। আর লেবারদের যে ওয়েলফেয়ার ফান্ডের টাকা দেয়নি, ২০০৬ সাল থেকে একটি পয়সাও দেয়নি, তাই লেবাররা মামলা করেছে। মামলা কিন্তু সরকার করেনি। লেবাররা লেবার কোর্টে মামলা করেছে, সেই মামলায় সে শাস্তি পেয়েছে, এখানে আমার কী দোষ।

'বরং আজকে তিনি যে উঠেছেন, সেখানে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা তো আমি করেছিলাম। তার মাইক্রোক্রেডিট সামিট, মাইক্রোক্রেডিট ইন্টারন্যাশনালি খুব গ্রহণযোগ্য ছিল না। আমি কো-চেয়ার হিসেবে অংশগ্রহণ করি, জাতিসংঘে প্রস্তাব আনি এবং আমি সবাইকে বোঝাই, কারণ আমিও ভাবতাম এটা বুঝি খুব ভালো, এটা মানুষকে দারিদ্র্যমুক্ত করে। কিন্তু ধীরে ধীরে আমি পরে দেখলাম এটা দারিদ্র্যমুক্ত না, এটা দারিদ্র্য লালন-পালন করে। আর ওই গরিব মানুষগুলো দিনরাত কাজ করার পর উচ্চহারে সুদ দিতে হয়। প্রথম সুদ যখন দিতে পারে না, তখন আরেকটা লোন দিয়ে আগের লোন পূরণ করে সে আবার দ্বিগুণ সুদের হারে পড়ে, এভাবে করতে করতে পরে ৪০-৪৫ ভাগ সুদ দিতে হতো তাদেরকে।'

তিনি বলেন, এমনকি যশোরের যে এলাকায় হিলারি ক্লিনটনকে নিয়ে যেসব পরিবারকে মাইক্রোক্রেডিট দিয়েছিল, সে পরিবারগুলো কোথায় এখন? খোঁজ করেন। জমিজমা সব বেচে দিয়ে ওখান থেকে তারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। অনেকে আত্মহত্যা করেছে এই সুদের চাপে। আমি তাকে টাকা দিয়ে বলেছিলাম যে, এত সুদ না নিয়ে তারা যেন সহনশীল করে দেয়, যেন মানুষ সত্যিকার অর্থে দারিদ্র্য থেকে উঠে আসতে পারে। এতই যদি করে থাকে, তাহলে দারিদ্র্য বিমোচন হলো না কেন বাংলাদেশে? দারিদ্র্য বিমোচন করলাম তো আমি। আজকে ৪১ দশমিক ছয় ভাগ থেকে নামিয়ে আমি ১৮ দশমিক সাত ভাগে এনেছি মাত্র এই ১৫ বছরে। সেই ক্রেডিটও নেয়। সেটাও কোনো কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা লিখে ফেলে এটা গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক, অমুক-সমুক করে ফেলেছে। আমার প্রশ্ন—আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার আগে দারিদ্র্যের হার কত ছিল, শেখ হাসিনা আসার পর কত কমেছে, সেটা একটু হিসাব করে বলুক না। মাথাপিছু আয় কত ছিল, এখন কত বেড়েছে। গৃহ-ভূমিহীন মানুষের সংখ্যা কত ছিল, আর এখন কত কমেছে। সেটা লিখুক।

নোবেল প্রাইজের প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, আবার লিখেছে নোবেল প্রাইজের জন্য নাকি তার সঙ্গে আমার... আমার সঙ্গে কারো দ্বন্দ্ব নেই। আর আমি জীবনেও নোবেল প্রাইজের জন্য আমার কোনো আকাঙ্ক্ষাও নেই। কারণ আমার লবিস্ট রাখার টাকাও নেই, পয়সাও নেই, আর আমি কখনো এটা চাইনি। হ্যাঁ, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি হওয়ার পরে শুধু আমার দেশে নয়, দেশে-বিদেশে অনেক বিদেশি, নোবেল লরিয়েট আমার জন্য লিখেছে। কই আমি তো কখনো তদবির করতে যাইনি, কারো কাছে বলতেও যাইনি। আমি তো কী পেলাম না পেলাম, ওটা নিয়ে আমি কখন ওগুলো আমার মাথার মধ্যেও নেই। এখন যিনি অর্থনীতি নিয়ে কাজ করলেন, ব্যাংকের একজন এমডি, সে যখন একটা নোবেল প্রাইজ পায়, তার সঙ্গে আমি কনটেস্ট করতে যাব কেন।

'পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি আমি করেছি। পৃথিবীতে যত শান্তি চুক্তি হয়েছে, খুঁজে বের করেন, শান্তি চুক্তি হয়েছে, কিন্তু কয়টা অস্ত্রধারী আত্মসমর্পণ করেছে? আমি পার্বত্য চট্টগ্রামে শুধু শান্তি চুক্তিই করিনি, এক হাজার ৮০০ জন তাদের অস্ত্রধারী ক্যাডার, তারা আমার কাছে অস্ত্র সারেন্ডার করেছে। আমি তাদের সবাইকে সামাজিক-আর্থিকভাবে পুনর্বাসন করেছি। ৬৪ হাজার শরণার্থী ছিল ভারতে। আমি সবাইকে ফিরিয়ে এনেছি। তাদেরকে আমি প্রতিষ্ঠিত করেছি। পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি চুক্তির ফলে আজকে সেখানে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এর আগে সেখানে কী অবস্থা ছিল? শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার আগে পার্বত্য চট্টগ্রামে কতজন যেতে পারতেন? এখানে যদি বিদেশে কেউ আমার নামে প্রস্তাব দেয়, আমরা তো ছুটে যাইনি তাদের কাছে। আমার কাছে অনেকে আসছে, আমি বলেছি না আমার ওসব পুরস্কারের দরকার নাই। আর এই পুরস্কার আমি দেখেছি আন্তর্জাতিকভাবে যারা পায়, এখানে তাদের কতটুকু অবদান সেটা না, এখানে আলাদা একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকে। কাজেই ওর মধ্যে আমার কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই। আর বলে দিলো ওটা নিয়ে নাকি আমি উনাকে... মানে জেলাসি।'

লেবাররা মামলা করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক এলাকায় লেবাররা যখন তাদের দাবি পেশ করেছে, দাবি পেশ করার সঙ্গে সঙ্গে তাদের প্রমোশন চেয়েছে, তাদের স্যাক করে দিয়েছে। সবাই মামলা করেছে। আমি তো জানতামও না এটা এবং লেবার কোর্টের মামলায় শাস্তি পেয়েছে। তো লেবারদের কি কোনো অধিকার নাই? যারা এত লেবার নিয়ে কথা বলে, মানবাধিকার নিয়ে কথা বলে, এতকিছু বলে, তারা কোথায় এখন? তারা চুপ কেন? তারা কি এই লেবারদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে? দাঁড়ায়নি। লেবারদের ন্যায্য পাওনা একজন মেরে খাচ্ছে, চুরি করে খাচ্ছে, সেটা বলেছে কখনো? আর আমেরিকা থেকে শুরু করে ইউরোপ-ইংল্যান্ড কেউ যদি ট্যাক্স ফাঁকি দেয়, সঙ্গে সঙ্গে তাকে অ্যারেস্ট করবে, তার সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে বিক্রি করে দেবে। এটাই তাদের নিয়ম। তো সেটা দেখে না কেন? তিনি সমানে ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছেন, আর প্রতিবার তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে সেটা আদায় করতে হচ্ছে। যারা লিখেছেন, তারা এই অনুসন্ধানটা একটু করুক।

'আরও অনেক বিষয় আছে। আমি সব বলতে চাই না। আমি এটা বলতেও চাইনি কখনো। পলিটিক্যাল পার্টি করতে গিয়েছিল, সেটাও লিখেছে। যখন ২০০৭ সাল, তখন রাজনৈতিক দল করতে গেল। তাহলে ব্যর্থ হলো কেন? রাজনৈতিক দল করতে পারল না কেন? সে যদি গ্রামের মানুষকে এতকিছু দিয়ে থাকে, তাহলে সেই মানুষগুলো তো তার জন্য ঝাঁপিয়ে আসবে। আসবে না? আসেনি কেন? কারণ সুদের চাপে তারা মৃতপ্রায় ছিল। সেজন্য তাকে কেউ সাড়া দেয়নি। সেখানে সে ব্যর্থ হয়েছে। সেই দায়িত্বও কি আমার? আমি তো তখন জেলে। আমাকে অ্যারেস্ট করার পরে তিনি তো কেয়ারটেকার সরকার এবং প্রেসিডেন্টকে এ ডাবল প্লাস দিয়ে আসছে। আমার বিরুদ্ধে তো একটার পর একটা মামলা। আমি যখন বিদেশে আমার বিরুদ্ধে খুনের মামলা দেওয়া হয়েছিল। যখন আমি শুনেছি আমার বিরুদ্ধে মামলা-ওয়ারেন্ট, আমি বলেছি, আমি এখনই দেশে ফিরে যাব এবং মামলা... তখন আমাকে দেশে আসতে দেবে না। আমি তো জোর করে এসেছি। আমার সঙ্গে তো এই তুলনা করা যায় না। তিনি একটা ব্যবসায়ী, সে তার কথা বেচে খায়। আরেকটা প্রশ্ন আমার, আমি কখনো কিছু বলিনি এ পর্যন্ত। এই যে বিদেশে বিদেশে এত বিনিয়োগ করে বেরিয়েছে, টাকাটা কোত্থেকে আসছে? কার টাকা? কীভাবে কামাই করেছে এই টাকাটা? এটার বিনিয়োগ কীভাবে হলো? সেই প্রশ্নটা কি কেউ করেছে কখনো? কাদের টাকা? সেই জবাবটা দিক।'

তিনি বলেন, একটা সরকারি চাকরি, মানে একটা সংবিধিবদ্ধ সংস্থায় চাকরিরত অবস্থায় সে বাইরে বিদেশে ব্যবসা করে। আমাদের আইন কী বলে? তারপরও তাকে সবাই মিলে আমরা তুলেছি, এটা ঠিক। তো এখন সবকিছুর দোষ আমার। কারণ আজকে সবথেকে বেশি যাকে আমিই দিলাম, তার গ্রামীণ ব্যাংক, গ্রামীণ ব্যাংক যখন অচল হয়ে গেল সম্পূর্ণ গ্রামীণ ব্যাংক শেষ হয়ে গেছে, ৯৬-৯৭ সাল, ৯৮-৯৯ সাল, সেই সময় যখন বন্যা, তিন মাস ধরে বন্যায় আমাদের বিপর্যস্ত অবস্থা, কীভাবে মানুষকে বাঁচাবো, সেই ব্যবস্থা... সেই সময় গ্রামীণ ব্যাংক বসে যায়, সেই সময় ৪০০ কোটি টাকা দিয়ে গ্রামীণ ব্যাংক আমি রক্ষা করে দিয়েছি। এটুকু কৃতজ্ঞতা তো মানুষের থাকা দরকার।

'আর তাকে যে টেলিনরের সঙ্গে পার্টনারশিপের ব্যবসাটা আমি দিলাম, আমাকে বললো গ্রামের মেয়েদের ফোন দেবে, সেই ফোন দিয়ে মেয়েরা অর্থ উপার্জন করবে। কয়টা মেয়ে অর্থ উপার্জন করতে পেরেছে? নিজের ফোন দিয়ে বিল ক্লিনটনের সামনে মহিলাদের এনে বসিয়েছে, যা শিখিয়েছে, তাই তারা বলে দিয়ে বলেছে, স্যার কই, স্যারকে ফোনটা ফেরত দিতে হবে। তো আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি যে বললেন এটা আপনার ফোন। বলে যে, আমি ফোন কোথা থেকে পাব। আমেরিকান অ্যাম্বাসিতে অনুষ্ঠান হয়েছিল, অনেক সাংবাদিক যারা ছিলেন, নিশ্চয়ই মনে থাকার কথা।'

শেখ হাসিনা বলেন, সবচেয়ে বেশি যে করে, তার বিরুদ্ধে এখন গীবত গেয়ে বেড়াচ্ছেন। উনাকে জেলাসি, উনাকে জেলাসি করার কী আছে? সে আসুক না, মাঠে আসুক, চলুক আমার সঙ্গে, আমেরিকায় ডিবেট হয় না, চলুক, আসুক কথা বলব। সবথেকে বেশি আর্থিক সুবিধা থেকে সবকিছু পেয়েছে আমার হাত থেকে। ওয়াশিংটনে তার মাইক্রোক্রেডিটে কেউ অংশগ্রহণ করে না। আমি গেছি, যেখানে হিলারি ক্লিনটন এসেছে, কুইন সুফি এসেছে। হ্যাঁ, আমরা তাকে খুবই প্রমোট করেছি, এটা ঠিক। এখন তার কথাটা হচ্ছে, উপকারীকে বাঘে খাক, যাতে উপকারটা স্বীকার করতে না হয়। এটাই তো বাস্তবতা।

'এখন উনার পয়সা আছে, উনি লেখাচ্ছেন। এই যে কতজন নোবেল লরিয়েটসহ তাদের যে বিবৃতিটা, এই বিবৃতিটা কী বিবৃতি? এটা তো বিজ্ঞাপন। তো উনি যদি এতই পপুলার হবেন, তাহলে বিজ্ঞাপন দিয়ে এতজনের নাম দিতে হবে কেন? তার জন্য সারা পৃথিবী ঝাঁপিয়ে পড়বে। কই কেউ তো এসে আমাকে একজনও কেউ বলল না। কেউ তো বলল না। সেই কথাটা একটু চিন্তা করে দেখেন। একটা মামলা চলছে। আমি জানি না এটা সাবজুডিস হবে কি না। আমি কথা বলতে চাই না। কিন্তু যেহেতু প্রশ্ন করেছেন, আমার মনে হয় দুই-চারটা কথা না বললে মানুষ বোধ হয় ভুল বুঝতে থাকবে। শেখ হাসিনা কারো সঙ্গে জেলাসি করে না। শেখ হাসিনা ফাদার অব দ্য নেশনের মেয়ে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে। এই জায়গাটায় কেউ আসতে পারবে না। আর সেটাই আমার গর্ব। প্রধানমন্ত্রী এটা তো একটা সাময়িক ব্যাপার। কিন্তু আমি তো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে। আমি দেশও বেচি না, দেশের স্বার্থও বেচি না। আমি সবসময় দেশের স্বার্থ রক্ষা করেই চলি। তার জন্য অনেকবার ক্ষমতায় আসতেও পারিনি। আমার কিচ্ছু আসে যায় না। আমার দেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব রক্ষা, আমার দেশের মানুষের মাথা যেন উঁচু থাকে, আমার সব সময় সেটাই কাজ। আমি এর-ওর কাছে ধরনা দিয়ে বেড়াই না।'

তিনি আরও বলেন, এখন মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি সে। একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামির পক্ষে এত কথা লেখে কীভাবে? ওই সাংবাদিককে জিজ্ঞাসা করেন। সে যে কনভিকটেড এবং সেটা লেবার কোর্টে, সরকারের কোর্ট না, লেবার কোর্টে। আইএলও কনভেনশন ও প্রটোকলে আমরা সই করেছি। আমরা লেবারের স্বার্থ রক্ষা করতে বাধ্য। এখানে আমাদের কিছু করার নাই।

Comments