তিস্তা নিয়ে মমতা ব্যানার্জির চিঠি ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার: প্রধানমন্ত্রী

‘আমি এটুকু বলতে পারি যে, ভারতের প্রত্যেকটা দল-মত নির্বিশেষে সকলের সঙ্গে আমার একটা সুসম্পর্ক আছে।’
তিস্তা নিয়ে মমতা ব্যানার্জির চিঠি ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার: প্রধানমন্ত্রী
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

তিস্তা নিয়ে মমতা ব্যানার্জির চিঠি ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে আমার তো নাক গলানোর কোনো দরকারও নাই, কিছু বলার দরকার নাই। আমার সাথে সকলের সম্পর্ক ভালো।

দিল্লি সফর নিয়ে আজ মঙ্গলবার সকালে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

তিস্তা নদীর পানি ভাগাভাগি ও তিস্তা নদীর ব্যবস্থাপনা; তিস্তা নদীর ব্যবস্থাপনা নিয়ে চীনের একটি বড় প্রস্তাব আপনার সামনে আছে, ভারতের সঙ্গেও আপনি কথা বলে এলেন। আপনি আসার পর দিনই তৃণমূল কংগ্রেসের একজন নেতা সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে, কেন্দ্র সরকার এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে কোনো কথা বলেনি। কাল আমরা দেখেছি মমতা ব্যানার্জি একটি দীর্ঘ চিঠি দিয়েছেন কেন্দ্র সরকারকে—তাকে বাইপাস করে তিস্তা-গঙ্গা নিয়ে যে কাজ করা হচ্ছে এটিতে তার সায় নেই। ২০২৬ সালের মধ্যে আমরা গঙ্গা চুক্তি নবায়ন করব, সেখানেও তার মতামত নিতে হবে। এ ব্যাপারে একজন গণমাধ্যমকর্মী জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা তিস্তা প্রজেক্ট নিয়েছি, পুরো নদীটা ড্রেজিং করা, পাড় বাঁধানো, পানি সংরক্ষণ—সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'গঙ্গা চুক্তির মেয়াদ ২০২৬ সালে শেষ হবে। তবে এটা যদি নবায়ন না-ও হয় চুক্তি কিন্তু অব্যাহত থাকবে। যেহেতু চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে, ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তি আমরা করেছিলাম, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন এবং আমরাও বলেছি, একটি টেকনিক্যাল গ্রুপ করা হবে। যেটা মমতা ব্যানার্জি বলেছেন ওটা ওনার ক্ষোভ যে ওনার সঙ্গে আলোচনা করেনি।

'ওনি তো ছিলেন না দিল্লিতে। আমি নিজেই তো যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি; ওনি তখন ছিলেন না। থাকলে নিশ্চয়ই, ওনাকে নিয়ে আমরা আলোচনা করতাম। অন্তত আমি করতাম। আগে ওনার একটা ফোন নম্বর ছিল; ইলেকশনে ওনি যখন জিতেছেন, তখনো চেষ্টা করেছি, পরে শুনলাম এখন আর মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না। যাই হোক, আমার কথা হচ্ছে যে, কাউকে বাদ দিয়ে হবে না। আর এখানে টেকনিক্যাল গ্রুপ আসবে, কথা বলবে, আলোচনা করবে, তারপর সমঝোতা হবে,' বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, 'মমতা ব্যানার্জির যে চিঠি সেটা তো ওনি লিখেছেন ওনার দেশের প্রধানমন্ত্রীকে। এটা তো তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এখানে আমার তো কিছু বলা নাই। এটা সম্পূর্ণ ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এ ব্যাপারে আমার তো নাক গলানোর কোনো দরকারও নাই, কিছু বলার দরকার নাই। আমার সাথে সকলের সম্পর্ক ভালো। মমতা ব্যানার্জির সম্পর্কও খুব ভালো, আবার প্রাইম মিনিস্টার নরেন্দ্র মোদি—তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো। অন্যান্য সব দলের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো। আমি এটুকু বলতে পারি যে, ভারতের প্রত্যেকটা দল-মত নির্বিশেষে সকলের সঙ্গে আমার একটা সুসম্পর্ক আছে।'

তিনি আরও বলেন, 'তিস্তা প্রজেক্ট কিন্তু আজকের না! আমার মনে হয়, সেই যুক্তফ্রন্টের যে একুশ দফা, সেখানেও বোধ হয় এটা দেওয়া ছিল এবং আমাদের আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পরিকল্পনায় ছিল যে তিস্তা প্রজেক্ট করতে হবে। সেই তিস্তা প্রজেক্ট এবার করার জন্য ভারত সহযোগিতা করবে এবং আমাদের যৌথ কমিটি হবে। পানির ভাগাভাগির বিষয়টা না শুধু, গোটা নদীটাকেই পুনরুজ্জীবিত করে আমরা উত্তরাঞ্চলের সেচের ব্যবস্থা করব, অধিক ফসল যাতে হয়। এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত।'

গঙ্গার পানির চুক্তি আবার নবায়ন করার জন্য আলোচনা হবে বলেও এ সময় জানান তিনি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, 'মমতা ব্যানার্জির একটা কথা বলেছেন, যেটা আমি সমর্থন করি; তাদের তো নদীগুলো ড্রেজিং করা উচিত। ফারাক্কায় সিল্ট জমে যাচ্ছে, অন্যান্য নদীগুলোতে সিল্ট জমে যাচ্ছে। ড্রেজিং তারা যদি করতে পারে তাহলে তাদের যে পানির অভাব, বিশেষ করে পানীয় পানির অভাবটা কিন্তু থাকে না। সেটা তিনি কেন্দ্রকে লিখেছেন। আসলে নদী ড্রেজিং করলেই কিন্তু পানির অনেক সমস্যার সমাধান হয়। যেমন আমরা শুরু করেছি আমাদের দেশে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা কিন্তু নদী ড্রেজিং করাতে আজকে বন্যা হলেও ক্ষতিটা আগের মতো হয় না। কারণ নদীতে পানির ধারণ ক্ষমতাটা তো বাড়াতে হবে।'

Comments