শেখ হাসিনা এই দেশকে বিক্রি করে না: প্রধানমন্ত্রী

যোগাযোগ ব্যবস্থা খুলে দেওয়ায় দেশের মানুষই সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সাম্প্রতিক ভারত সফর নিয়ে আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।

প্রশ্নোত্তর পর্বের শুরুতে ভারতের সঙ্গে রেলবিষয়ক চুক্তি বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে 'দেশকে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে' বলে সমালোচনা প্রসঙ্গও আসে। জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমার একটা প্রশ্ন আছে, ওজনটা কীসে মাপছে? কোনো কিছু বিক্রি হলে ওজন মাপা হয় না? এখন তো অবশ্য ইলেকট্রনিক মেশিন আছে, আগে তো দাঁড়িপাল্লায় হতো। তো কীসে মেপে বিক্রি হচ্ছে? বিক্রিটা হয় কীভাবে?

তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ। মুক্তিযুদ্ধ করে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। যারা এই সমালোচনা করে তাদের জানা উচিত, সারা পৃথিবীতে একটি মাত্র মিত্র শক্তি যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, নিজেদের রক্ত ঝরিয়ে এই দেশ স্বাধীন করে দিয়েছে। আমাদের সব মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে ট্রেনিং পেয়েছে। পৃথিবীতে যারাই কোনো যুদ্ধে মিত্র শক্তির সহযোগিতা পেয়েছে, তারা কিন্তু সেই দেশ ছেড়ে কোনোদিন ফেরত যায়নি। এখনো জাপানে আমেরিকান সৈন্য, জার্মানিতে রাশিয়ান সৈন্য আছে। এখানে ভারত কিন্তু ব্যতিক্রম। তারা মিত্র শক্তি হিসেবে আমাদের পাশে যুদ্ধ করে এসেছে। কিন্তু যখনই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চেয়েছেন তারা (ভারতের সৈন্য) দেশে ফেরত যাক, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়েছেন এবং তাদের ফেরত নিয়ে গেছেন। তারা যুদ্ধের সরঞ্জাম সবকিছু নিয়েই এখানে যুদ্ধে এসেছিল। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সারেন্ডার করেছিল তাদের কাছে। কিন্তু আমরা স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র পেয়েছি। কারণ তারা ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করেছে। 

'এরপরও যারা কথা বলে যে, ভারতের কাছে বিক্রি হয়ে যাবে, এরপরও বিক্রিটা হয় কীভাবে? সেটাই তো আমার প্রশ্ন। আসলে যারা এটা বলে তারা নিজেই ভারতের কাছে বিক্রি করা। কারণ আমরা দেখেছি যখনই মিলিটারি ডিক্টেটররা (সামরিক স্বৈরাচার) এসেছে জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া ওপর দিয়ে ভারতবিরোধী কথা বলেছে, আর ভারতে যেয়ে তাদের পা ধরে বসে থেকেছে। এগুলো আমার নিজের দেখা, জানা। কাজেই এই ধরনের কথা বলার কোনো অর্থ হয় না।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ। যত ছোট হোক, এটা আমাদের সার্বভৌম দেশ। আর সেই সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও স্বকীয়তা বজায় রেখেই আমরা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেই কাজ করছি। আজকে এই যে আমরা সব যোগাযোগ ব্যবস্থা খুলে দিলাম, সব থেকে বেশি লাভবান তো আমাদের দেশের মানুষ। তাদের যোগাযোগ করতে হয়, যেতে হয়, চিকিৎসার জন্য যায়, পড়াশোনার জন্য যায় বা অন্যান্য কাজে যায়, হাটবাজার করতে যায়, আজমির শরীফে যায়, বিভিন্ন জায়গায় যায়। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রটা তো আরও উন্মুক্ত হবে। কাজেই এখানে বিক্রি আমরা করি না। যারা কথা বলে, তারা বেচার জন্য অথবা 'ইউজ মি' মানে ব্যবহার করুন আমাকে এই নিয়ে বসেই থাকে। এটা হলো বাস্তবতা। শেখ হাসিনা এই দেশকে বিক্রি করে না। কারণ আমরা এই দেশ স্বাধীন করেছি। এটা তাদের মনে রাখা উচিত। আর যে কষ্টটা আমরা ভোগ করেছি, এটা আমরা জানি। যারা বিক্রির কথা বলে, একাত্তরে তারা পাকিস্তানের দালালি করেছে, আর কী করেছে।

তিনি আরও বলেন, একটা দেশের মধ্যে অন্য দেশের ট্রানজিট দিলেই বা ক্ষতি কী? আর রেল যেগুলো বন্ধ ছিল (ভারতের সঙ্গে), আমরা সেগুলো আস্তে আস্তে খুলে দিচ্ছি। তাতে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ হচ্ছে। ওই অঞ্চলের মানুষগুলো উপকৃত হচ্ছে। তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার সুযোগ হচ্ছে। যেসব জিনিস আমাদের দেশে হয় না, সেগুলো আনার সুযোগ হচ্ছে। অর্থনীতিতে এটা বিরাট অবদান রেখে যাচ্ছে। আমরা বাংলাদেশে কি চারদিকে দরজা বন্ধ করে থাকব? সেটা হয় না। আজকে ইউরোপের দিকে তাকান, সেখানে কোনো বর্ডার নেই। সেখানে কি এক দেশ আরেক দেশের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে?

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh’s population hits 175.7 million, majority of working age

Bangladesh's population has reached 175.7 million, two thirds of which, around 115 million, are of working age, between 15 to 64..The estimation was made by the United Nations Population Fund's (UNFPA) annual flagship publication, the State of World Population (SWOP) 2025..UNFPA Repr

32m ago