নতুন বাসভাড়া: ‘টাকাটা শেষ পর্যন্ত মালিকের পকেটেই যাবে’

স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি চালুর পর প্রথমবারের মতো গত মার্চে ডিজেলের দাম লিটারে কমেছিল ৭৫ পয়সা। এপ্রিলে ডিজেলের দাম লিটারে ২ টাকা ২৫ পয়সা কমানো হয়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) বাসভাড়া নির্ধারণ কমিটিও বৈঠক করে বাস-মিনিবাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে তিন পয়সা কমানোর সুপারিশ করেছে, যা কার্যকর হয়েছে ২ এপ্রিল থেকে।

নতুন ভাড়া অনুযায়ী একজন যাত্রী ৩৩ কিলোমিটার পথ ভ্রমণ করলে তার এক টাকা সাশ্রয় হবে।

প্রশ্ন হলো—নতুন এই ভাড়া কতটা বাস্তবায়নযোগ্য? যদি নতুন ভাড়া বাস্তবায়ন করাও যায়, তাহলে যাত্রীরা এর সুফল কতটা পাবেন?

বিষয়টি নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) উপদেষ্টা ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম এবং বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরীর সঙ্গে।

জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের পর বাসভাড়া কিলোমিটারে তিন পয়সা কমানোর সিদ্ধান্তকে 'লোক দেখানো ও তামাশার' বলে অভিহিত করে অধ্যাপক শামসুল আলম ও মোজাম্মেল হক—দুজনই বলছেন, যে পদ্ধতিতে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের পাশাপাশি নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে সেই পদ্ধতিতেই গলদ আছে।

তাদের ভাষ্য, এই ভাড়া কমানোর সুফল জনগণ পাবে না। ভাড়া বাড়ানো হলে পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা তা আদায়ে যেরকম তৎপর থাকেন, ভাড়া কমানো হলে তা বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না।

এ ক্ষেত্রে ২০১৬ সালের উদাহরণ হাজির করেন তারা। সেবারও বাসভাড়া তিন পয়সা কমানো হয়েছিল।

অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, 'এই টাকাটা (যা কমানো হয়েছে) শেষ পর্যন্ত বাস মালিকদের পকেটেই গেল বা যাবে। অতীতেও একবার বাসভাড়া কিলোমিটারপ্রতি তিন পয়সা কমানো হয়েছিল। তাতে কোনো লাভ হয়নি।'

ক্যাবের এই উপদেষ্টার ভাষ্য, 'বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে এ ধরনের অন্যায় ও অযৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে যে বিরুদ্ধ জনমত তৈরি হয়েছে, সেটা আমলে নিয়ে অভিযোগ নিষ্পত্তি না করে বরং ত্রুটি-বিচ্যুতি এবং লুণ্ঠনকে সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে।'

তিনি এর কারণ হিসেবে বলেন, 'বিদ্যুৎ ও জ্বালানির যে দাম এখন আছে তা কতখানি যৌক্তিক, আবার আন্তর্জাতিক বাজারে দাম যতটা কমেছে, সে অনুসারে দেশের বাজারে কতটা কমানো হলো—সেসব বিষয় যাচাই-বাছাইয়ের অধিকার থাকতে হবে ভোক্তার।'

শামসুল আলম বলেন, 'রাষ্ট্র সেই অধিকার নিশ্চিত করেছে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন তৈরি করে। বিইআরসি বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে মূল্য নির্ধারণ করবে এবং জনগণের প্রতিনিধি বা ভোক্তা প্রতিনিধিদের শুনানি শুনবে। এটাকেই রেগুলেটরি কালচার বলে। কিন্তু এক ধাক্কায় বিইআরসি আইন পরিবর্তন করে এখন নির্বাহী আদেশে যখন খুশি তখন যা খুশি তাই করা হচ্ছে। এটা ভয়াবহ রকমের অরাজকতা, নৈরাজ্য এবং অন্যায় ছাড়া আর কিছু না।'

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হকের বক্তব্য, এবার বাসভাড়া যেভাবে কমানো হয়েছে সেই পদ্ধতিটাই ত্রুটিপূর্ণ।

তিনি বলেন, 'আমরা যারা ভাড়া দেই অর্থাৎ যাত্রী এবং নাগরিক সমাজের কোনো প্রতিনিধি বিআরটিএর কমিটিতে ছিল না। তাদের রাখাও হয় না। কোনো মতামত দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় না। সরকার বাস মালিকদের একচেটিয়া সুবিধা দিতে চায়। কারণ, পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি ও নৈরাজ্যের যে নেক্সাস, তা থেকে কোনো কোনো রাজনৈতিক শক্তি লাভবান হয়।'

তিনি আরও বলেন, 'ভাড়া নির্ধারণে অনেক ফাঁকি আছে। ভাড়া নির্ধারণের টেবিলে যখন তৃতীয় পক্ষকে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয় না, অর্থাৎ যারা ভুক্তভোগী তাদের কোনো স্পেস দেওয়া হয় না, তখন তারা ইচ্ছেমতো সবকিছু করতে পারে।'

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে মোজাম্মেল বলেন, 'ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে কিলোমিটার হিসেবে। আমাদের দেশের দূরপাল্লার বাসগুলো ৪০ আসনের। কিন্তু ভাড়া বাড়ানো হয় চালকসহ ৫১ আসন ধরে। চালকের ভাড়াও যাত্রীরা দেন। আবার ভাড়া কমানোর ক্ষেত্রে ধরা হয় ৪০ আসন। ভাড়া বাড়ানো হয় এক পদ্ধতিতে, আর কমানো হয় অন্য পদ্ধতিতে। এটা মালিকদের পক্ষে যায়।'

তিনি বলেন, 'আমরা এখন আসলে হীরক রাজার দেশে আছি। এখানে সাধারণ মানুষের কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। পৃথিবীর দেশে দেশে আন্তর্জাতিক ক্রেতা-ভোক্তা অধিকারের যে স্বীকৃত আইনটি আছে, সেখানে যাত্রী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিকে দর কষাকষির সুযোগ দেওয়ার বিধান আছে। আমরা সেটা লঙ্ঘন করছি। ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়াচ্ছি, কমাচ্ছি।'

যে তিন পয়সা ভাড়া কমানো হলো সেটাও বাস্তবায়নযোগ্য কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে মোজাম্মেল বলেন, 'এটা কোনোভাবেই বাস্তবায়নযোগ্য না। নির্ধারিত নতুন ভাড়ায় ঢাকা-চট্টগ্রামের ৬৮০ টাকার টিকিটের দাম ৬৭০ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু এখনই ঈদকে সামনে রেখে কাউন্টারগুলোতে ৬৭০ টাকার টিকিট ৭০০, ৮০০ টাকাও নেওয়া হচ্ছে। অন্য রুটগুলোতেও একই অবস্থা। একদিকে ঈদকে সামনে রেখে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চলছে, অন্যদিকে সরকার ভাড়া কমানোর নামে জনগণের সঙ্গে তামাশা করছে। এর কোনো প্রভাবই যাত্রীদের ওপর পড়েনি।'

Comments

The Daily Star  | English
Proper audits can ensure social compliance in the RMG industry

US top remittance source in Nov, Dhaka top recipient

The biggest source of all the remittance received by Bangladesh last November was the US, according to the latest report of Bangladesh Bank (BB)..Moreover, Dhaka secured the lion’s share of the foreign currencies..Bangladeshi migrants sent home $2,199.99 million in November. Of it, $

3h ago