‘সন্তানকে বুকে জড়িয়েই পুড়ে মারা যান নাদিরা’

নাদিরা আক্তার ও ছেলে ইয়াছিন রহমান
ট্রেনের বগিতে লাগানো আগুনে পুড়ে নিহত মা নাদিরা আক্তার ও ছেলে ইয়াছিন রহমান। ছবি: পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া

'তার জগতজুড়েই ছিল তার দুই ছেলে। স্বপ্ন ছিল বড় ছেলে ডাক্তার হবে। তাই ছেলের পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত থাকত সে।'

ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন মিজানুর রহমান। স্ত্রী নাদিরা আক্তার (৩২) ও ৩ বছরের ছেলে ইয়াছিন রহমানের মরদেহের জন্য সেখানে অপেক্ষা করছিলেন।

মঙ্গলবার ভোরে রাজধানীর তেজগাঁও স্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ৪ জনের মধ্যে তারা দুজন।

শোকাহত মিজানুর রহমান
ঢাকা মেডিকেল কলেজে শোকাহত মিজানুর রহমান। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে তেজগাঁওয়ের পশ্চিম তেজতুরি বাজারের একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন মিজানুর রহমান। কারওয়ানবাজারের একটি হার্ডওয়্যারের দোকানে ম্যানেজারের কাজ করেন তিনি।

'আমার বড় ছেলে রিয়াদ হাসান ফাহিম স্থানীয় একটি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত। কিছুদিন আগে তার পরীক্ষার ফলাফল দিয়েছে। সে চতুর্থ শ্রেণিতে উঠেছে। দুই ছেলেকে নিয়ে তাদের মায়ের অনেক স্বপ্ন ছিল।'

ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গ
ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গ। ছবি: স্টার

'বড় ছেলে ডাক্তার হবে এটাই সবসময় বলত। আমরা গরীব ঘরের মানুষ। ডাক্তার হতে হলে ছেলেকে ভালো করে পড়াশোনা করাতে হবে। ওর পড়াশোনা নিয়েই আমার স্ত্রী সবসময় ব্যস্ত থাকত। ছেলেদের কী লাগবে না লাগবে এসব নিয়ে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকত সে,' বলেন মিজানুর।

প্রতি বছর বার্ষিক পরীক্ষা শেষে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যান তারা। এবছর ৩ ডিসেম্বর দুই সন্তান নিয়ে স্ত্রী নাদিরা আক্তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনায় যান। সঙ্গে গিয়েছিলেন নাদিরার ভাই হাবিবুর রহমান।

'আমার স্ত্রী, দুই সন্তান ও তাদের মামা গতকাল ট্রেনে ঢাকায় ফিরছিল। গতকালকে ট্রেনে ওঠার পর স্ত্রীর সঙ্গে শেষবারের মতো কথা হয়। কথা ছিল তারা কমলাপুর স্টেশনে নামবে,' বলেন তিনি।

নিহত নাদিরার ভাই ও প্রত্যক্ষদর্শী হাবিবুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তেজগাঁও স্টেশন এসে ট্রেন থামলে কয়েকজন যাত্রী সেখানে নেমে যান। সেসময় আমাদের পেছনের সিটে থাকা দুজনও নেমে যায়। পরে ট্রেন চলতে শুরু করা মাত্রই পেছনের সিট থেকে আগুন জ্বলে উঠে। মুহূর্তেই আগুন পুরো বগিতে ছড়িয়ে পড়ে।'

'আমি দৌঁড়ে ফাহিমকে নিয়ে ট্রেন থেকে নামতে যাই। আমার সামনে নাদিরা ও নাদিরার কোলে ছিল ইয়াসিন। ধোঁয়ার কারণে আমি ফাহিমকে নিয়ে অন্য বগি দিয়ে দ্রুত নেমে পড়ি। নামার পরপরই তাদেরকে খুঁজতে থাকি।'

পুড়ে যাওয়া মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের বগি
পুড়ে যাওয়া মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের বগি। ছবি: এস কে এনামুল হক/ স্টার

আগুন নেভানোর পর নাদিরার পুড়ে যাওয়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তখনও তার কোলেই ছিল ইয়াসিন। অনেক লোকের হুড়োহুড়ির মধ্যে তারা নামতে পারেনি। সন্তানকে বুকে নিয়েই জীবন্ত পুড়ে মারা যান নাদিরা।

উল্লেখ্য, রাজধানীর তেজগাঁওয়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। ট্রেনের একটি বগি থেকে চার জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তাদের মধ্যে দুজনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন—নাদিরা আক্তার পপি (৩৫) ও তার ছেলে ইয়াসিন (৩)। অন্য দুজনের পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি।

Comments

The Daily Star  | English
Anti-Terrorism Act

Banning party activities: Govt amends anti-terror law

The interim government is set to bring the curtain down on the Awami League as a functioning political party.

6h ago