মোদি-বাইডেন বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ কতটা গুরুত্ব পাবে, বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষণ

বাংলাদেশ ও ভারতীয় গণমাধ্যমের সংবাদে বলা হচ্ছে, মোদি ও বাইডেনের বৈঠকে বাংলাদেশের চলমান সংকট নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
মোদি-বাইডেন বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ কতটা গুরুত্ব পাবে, বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষণ
নরেন্দ্র মোদি ও জো বাইডেন। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন। আগামী ২১ জুন তার নিউইয়র্ক পৌঁছানোর কথা আছে। এই সফরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

বাংলাদেশ ও ভারতীয় গণমাধ্যমের সংবাদে বলা হচ্ছে, মোদি ও বাইডেনের বৈঠকে বাংলাদেশের চলমান সংকট নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

নরেন্দ্র মোদির এই সফর বাংলাদেশের জন্য আসলেই কি গুরুত্বপূর্ণ তা নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদের সঙ্গে।

তারা প্রত্যেকেই বলেছেন, এই সফরে ২ দেশের দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। এখানে বাংলাদেশের বিষয়টি আসার সম্ভাবনা তেমন একটা নেই। আর আসলেই যুক্তরাষ্ট্র সেটি কীভাবে নেবে তা দেখার বিষয়।  

আলী ইমাম মজুমদার বলেন, 'এটি তাদের দ্বিপাক্ষিক সফর। বাংলাদেশকে এখানে পক্ষভুক্ত করা হচ্ছে। আমি মনে করি আমাদের এখানে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা না থাকা এবং যথাযথ নির্বাচিত সরকারের অনুপস্থিতি অন্যদেশকে আমাদের দেশ নিয়ে কথা বলার সুযোগ করে দিচ্ছে। আমাদের দেশে যদি নির্বাচিত সরকার থাকতো, যথাযথ নির্বাচন করতে পারতাম তাহলে এসব বিষয় কমে যেত। আমি মনে করি রাজনৈতিক নেতারা পরস্পর আলোচনা করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারলে এই ধরনের দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় আমাদের বিষয় নিয়ে কথা উঠতো না।'

আপনি কি বলতে চাচ্ছেন মোদির সফর বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ না? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'আমি এক কথায় উত্তর দিতে চাচ্ছি না। আমাদের দুর্বলতা থেকেই এসব বিষয় আসছে। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দুর্বলতার জায়গা থেকেই একটার পর একটা দেশ আমাদের বিষয়ে জড়িয়ে পড়ছে।'   

আলী ইমাম মজুমদার। ছবি: সংগৃহীত

ভিসানীতিসহ অন্যান্য বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের যে এক ধরনের টানাপড়েন চলছে বাংলাদেশ সরকার কি ভারতকে দিয়ে সেই সংকট সমাধানের চেষ্টা করছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'অনেকেই বিষয়টির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। আমি মনে করি কেউ না জড়ানো ভালো। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য কেউ জড়ালে তা জোড়ানো উচিত। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যহত করবে এমন বিষয়ে জড়ানো উচিত না।'

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশিরা কথা বললে সরকারের পক্ষ থেকে 'অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ 'না করতে বলা হয় আবার কেউ পক্ষে কথা বললে তা গ্রহণ করা হয়। এই বিষয়টি কীভাবে দেখেন? উত্তরে তিনি বলেন 'বিষয়টি সবসময়ই দ্বিমুখী। যুক্তরাষ্ট্র কিছু বললে এবং বিপক্ষে গেলে বলা হয় তারা হস্তক্ষেপ করছে, ভারত পক্ষে কিছু বললে আবার খুশি হই। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিল না, তখন তারা সরকার বিরোধী কার্যক্রমে জাতিসংঘ, কমনওয়েলথসহ আরও অনেক সংস্থাকে এনেছে। আওয়ামী লীগ বিদেশি শক্তিকে চায়। বিএনপিরও একই অবস্থা। তবে একজন নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি নিজেদের সমস্যা নিজেদেরকেই সমাধান করা উচিত। অন্যদেরকে টানা উচিত না।'

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, 'আন্দাজ করা হচ্ছে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের বিষয়গুলো তুলতে পারেন। কথা হলো যুক্তরাষ্ট্র সেটা কতটা আমলে নেবে তা দেখার বিষয়। তবে চিন্তার বিষয় হলো ভারতীরা তাদের স্বার্থে কথা বলবে। তবে সেই স্বার্থটা সাময়িক না দীর্ঘমেয়াদি তা দেখার বিষয়। মোদি বাংলাদেশের কথা তুললে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য তা বলা যাচ্ছে না। বাংলাদেশে যে সংকট তৈরি হয়েছে তা ভারতের জ্ঞাতসারেই হয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ইস্যু তুলে কতটা গ্রহণযোগ্য হবে তা বলা মুশকিল।'

এম হুমায়ুন কবির। ছবি: সংগৃহীত

সংকট থেকে উত্তরণে বাংলাদেশ সরকার কি ভারতকে দিয়ে সমাধান করার চেষ্টা করছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'আমাদের যে সংকট তার মধ্যে ভিসানীতি একটি ছোটো বিষয়। এখানে বলা হয়েছে কারা এই নীতির মধ্যে পড়বে। এখানে বেশি মনোযোগ দেওয়ার অর্থ হলো কেউ কেউ গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে নেতিবাচকভাবে নেওয়ার চেষ্টা করছে। সামগ্রিক বিষয় নিয়েই আমাদের ভাবতে হবে। নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করতে হবে।'

তিনি বলেন, 'বিদেশিরা কিছু বলায় সরকারের সুবিধা হলে এক ধরনরে কথা বলা হয়, আবার বিপক্ষে গেলে আরেক ধরনের কথরা বলা হয়। এটি নৈতিকভাবে সঠিক না।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, 'ভারতের গণমাধ্যম দেখাতে চায় তারা বড় পজিশনে আছে। তারা বাংলাদেশের রাজনীতির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে আমি কখনই সেভাবে মনে করি না। মোদির সফরের মূল বিষয় হলো, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এক ধরনের টেনশন কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে টানতে চায়। ভেতরে ভেতরে ভারত ও চীনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক অনেকে বেড়েছে। এটাই আমেরিকার বড় মাথা ব্যথা। সেখানে আরেকটি দেশের রাজনীতি নিয়ে কী বা আলোচনা হবে। বাংলাদেশের যে সমস্যা তা বাংলাদেশকেই সামাল দিতে হবে। নরেন্দ্র মোদি এ বিষয়ে কথা বলবে এটা আমার কাছে ঠিক মনে হয় না। ভারত সবসময় ক্রেডিট নিতে চায় তাই এসব কথা বলা হচ্ছে।'

ড. ইমতিয়াজ আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে চলমান সংকট কি ভারতকে দিয়ে সমাধান করার চেষ্টা হচ্ছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'আমার কাছে তা কখনই মনে হয় না। এটা কোনো সিস্টেম না। ভিসা নীতির কথা যে সামনে আসছে বিষয়টি এখানে সীমিত না। এখানে অর্থনৈতিক রাজনীতি জড়িত। ভিসানীতি দিয়েই শুধু বাংলাদেশের গণতন্ত্র ঠিক হবে না। বাংলাদেশের রাজনীতিতে যারা জড়িত তাদের সম্পদ এত বেশি তারা ভিসানীতির কারণে চুপ করে থাকবে বিষয়টা এমন না। ক্ষমতায় না থাকতে পারলে তাদের অনেক ক্ষতি হবে। তারা যেকোনো ভাবে ক্ষমতায় থাকতে চাইবে। ভারত এসব বিষয় নিয়ে কথা বলবে তা আমার কাছে মনে হয় না। যুক্তরাষ্ট্র তাদের স্বার্থ দেখলে ভিসা দেবে। যুক্তরাষ্ট্র মোদির ওপর কিন্তু ভিসার নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। পরে তা তুলে নিয়েছে। আমেরিকা তার জাতীয় স্বার্থ সবসময় দেখবে।'

এই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক বলেন, 'আমি মনে করি না বাংলাদেশ কাউকে দিয়ে চলমান সংকট সমাধানের জন্য চেষ্টা করবে। বাংলাদেশ এখন বহু এগিয়েছে। আমেরিকা জানে বেশি চাপ দিলে বাংলাদেশ অন্যদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়াবে। তারা হয়তবা তেমন চাপ দেবে না। তবে বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক দুর্বলতা তা বাংলাদেশকেই সামাল দিতে হবে।' 

  

Comments

The Daily Star  | English

Unrest emerges as a new threat to RMG recovery

The number of apparel work orders received by Bangladeshi companies from international retailers and brands for the autumn and winter seasons of 2025 dropped by nearly 10 percent compared to the past due to major shocks from the nationwide student movement and labour unrest in major industrial belts over the past two and half months.

9h ago