শপথ নিয়েই জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব বাতিল করতে চান ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

গত নভেম্বরে বিজয়ের পর আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা নিতে চলছেন এক কালের আবাসন ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম দিনই ২০০ নির্বাহী উদ্যোগে সইয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প।

আজ সোমবার এই তথ্য জানিয়েছে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। 

প্রথম দিনই ২০০ নথিতে সই করবেন ট্রাম্প

দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর আগের দিন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর আগের দিন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

শপথ নিয়েই এসব নির্বাহী উদ্যোগে সই করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি সমর্থকদের জানান, 'ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুতবেগে ও শক্তিমত্তার সঙ্গে' এগিয়ে যাবেন তিনি।

তবে এই ২০০ উদ্যোগের প্রতিটিই 'আদেশ' নয়।

নির্বাহী আদেশগুলো আইনের সমতুল্য হলেও বাকিগুলো প্রেসিডেন্সিয়াল ঘোষণা ও নির্দেশনা হিসেবে থাকবে। সেগুলো আইন নয়।

গতকাল ওয়াশিংটন ডিসির অ্যারেনায় বিজয় সমাবেশে তিনি বাইডেন প্রশাসনের 'ভুলে ভরা' সব আদেশ বাতিলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

পাশাপাশি অভিবাসন, বাণিজ্য ও পররাষ্ট্রনীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একাধিক আদেশে সই দেবেন ট্রাম্প।

অভিবাসন ও সীমান্ত

দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর আগের দিন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর আগের দিন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

অবৈধ অভিবাসন নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় উচ্চকণ্ঠ ছিলেন ট্রাম্প। তিনি এবার ঘোষণা দিয়েছেন—অবৈধ অভিবাসীদের 'ঘাড় ধরে' নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর সবচেয়ে বড় কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন।

ট্রাম্পের দাবি, তার উদ্যোগ যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নজিরবিহীন।

সবচেয়ে বড় অবৈধ অভিবাসনবিরোধী অভিযান

ফক্স নিউজ জানিয়েছে, ট্রাম্প সীমান্তে জরুরি অবস্থা জারি করবেন। সামরিক বাহিনীকে মেক্সিকোর সঙ্গে দেশটির দক্ষিণ সীমান্ত সুরক্ষিত রাখার নির্দেশ দেবেন।

মার্কিন আইন অনুযায়ী, গির্জা ও স্কুলে কেন্দ্রীয় অভিবাসন কর্তৃপক্ষ কোনো অভিযান পরিচালনা করতে পারে না। দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা এই আইন বাতিলের কথা জানিয়েছেন ট্রাম্প।

হোয়াইট হাউসের কাছে একটি দোকানে ট্রাম্পের ছবিযুক্ত মগ বিক্রি হচ্ছে। ছবি: রয়টার্স
হোয়াইট হাউসের কাছে একটি দোকানে ট্রাম্পের ছবিযুক্ত মগ বিক্রি হচ্ছে। ছবি: রয়টার্স

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন—অবধারিতভাবে, এ ধরনের কোনো অভিযানে লজিসটিক সমস্যা দেখা দেবে। পাশাপাশি, হাজার কোটি ডলার খরচ ও আইনি ঝামেলাও চলতে থাকবে।

'মেক্সিকোতেই থাকো'

প্রথম মেয়াদে 'মেক্সিকোতেই থাকো' (রিমেইন ইন মেক্সিকো) নীতির মাধ্যমে ৭০ হাজার মানুষকে মেক্সিকো ফেরত পাঠিয়েছিলেন। এই নীতির আওতায়, মেক্সিকো থেকে কেউ যুক্তরাষ্ট্রে এসে আশ্রয় চাইলে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে আশ্রয় না দিয়ে আবারও মেক্সিকো ফেরত পাঠানো হয়। শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে পারেন না। প্রথম মেয়াদে চালু এই নীতি প্রচুর সমালোচনা হয়। ২০২১ সালে বাইডেন প্রশাসন তা বাতিল করে। ট্রাম্প আবারও তা চালুর ঘোষণা দিয়েছেন।

জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল

প্রায় ১৫০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে জন্ম নেওয়া শিশুরা 'জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব' পেয়ে আসছেন। ট্রাম্প এই সাংবিধানিক অধিকারকে 'হাস্যকর' বলে অভিহিত করেছেন। তার মেয়াদের প্রথম দিনই এই আইন বাতিলের কথা জানিয়েছেন।

তবে নির্বাহী আদেশেই কার্যসিদ্ধি হবে না বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। মার্কিন সংবিধানে পরিবর্তন না এনে এই আইন বাতিল করা সম্ভব নয় বলেই তাদের মত।

মাদকচক্রকে 'জঙ্গি' তকমা

ট্রাম্প মাদকচক্রগুলোকে হামাস ও আল-কায়েদার মতো 'বিদেশি জঙ্গি সংগঠনের' তকমা দিতে পারেন। এই আদেশের ফলে মেক্সিকোয় মাদকচক্রকে শায়েস্তা করতে ট্রাম্প সেনা মোতায়েনের সুযোগ নিতে পারবেন।

বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ট্রাম্পের ছবি ও বাইবেলের উক্তি সম্বলিত 'ভুয়া' ডলার বিতরণ করছেন এক ট্রাম্প সমর্থক। ছবি: এএফপি
ট্রাম্পের ছবি ও বাইবেলের উক্তি সম্বলিত 'ভুয়া' ডলার বিতরণ করছেন এক ট্রাম্প সমর্থক। ছবি: এএফপি

ক্ষমতা গ্রহণের আগেই ট্রাম্পের বাণিজ্য ও অর্থনীতি সংক্রান্ত চিন্তাধারা সাড়া ফেলেছে। অনেকের মত, ট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকির যুতসই জবাব দিতে না পারা কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রূডোর পতনের অন্যতম কারণ। প্রথম দিনেই অর্থ-বাণিজ্য বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি আদেশে সই করতে পারেন ট্রাম্প।

আমদানিতে শুল্কের বোঝা

ইতোমধ্যে ট্রাম্পের 'শুল্ক যুদ্ধ' বা 'ট্রাম্প শুল্ক' নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে। নতুন প্রেসিডেন্টের অঙ্গীকার আমদানি করা সব পণ্যকে দামি বানিয়ে মার্কিন পণ্য বিক্রিতে উৎসাহ দেবেন তিনি। মার্কিন শিল্পকে দেবেন অগ্রাধিকার।

প্রথম মেয়াদে চীনা পণ্যের ওপর বড় আকারে শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। বাইডেন সরকার তা অব্যাহত রাখে।

এবার ট্রাম্প বলছেন, সব আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন।

আলাদা করে কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর ২৫ এবং চীনা পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন ট্রাম্প।

জানিয়েছেন, প্রথম দিন থেকে এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর করার নির্বাহী আদেশে সই করবেন তিনি।

তবে এসব শুল্ক আরোপে ভোক্তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠবে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে বড় আকারে বাড়তে পারে মূল্যস্ফীতি। ইতোমধ্যে কানাডা ও মেক্সিকোর মতো কয়েকটি দেশ প্রতিশোধমূলক পাল্টা শুল্ক আরোপের কৌশল বিবেচনা করছে।

ক্রিপ্টোকারেন্সিতে আস্থা

ক্রিপ্টোকারেন্সিকে আনুষ্ঠানিক মুদ্রা হিসেবে চালু করতে পারেন ট্রাম্প। তিনি বরাবরই ক্রিপ্টোকারেন্সির পক্ষে কথা বলেছেন। তার নির্বাচনী প্রচারণার সময় জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েনের মূল্য বেড়েছে ৩০ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞদের মত, ট্রাম্প দ্রুত কেন্দ্রীয় 'বিটকয়েন রিজার্ভ' তৈরি করবেন। এটি স্বর্ণ ও তেলের রিজার্ভের মতো যুক্তরাষ্ট্রের অপর কৌশলগত রিজার্ভে পরিণত হবে।

ট্রাম্পের মতে, এটি 'সব মার্কিনিদের জন্য জাতীয় সম্পদে' পরিণত হবে।

পররাষ্ট্রনীতি

ট্রাম্পের আগমন উপলক্ষ্যে আলোকে সজ্জিত হোয়াইট হাউস। ছবি: রয়টার্স
ট্রাম্পের আগমন উপলক্ষ্যে আলোকে সজ্জিত হোয়াইট হাউস। ছবি: রয়টার্স

বাইডেন প্রশাসনের চার বছরের বড় অংশ কেটেছে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে ব্যস্ততায়।

বিশেষত, গত দুই বছর ইউক্রেন ও গাজার যুদ্ধ পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের প্রায় পুরোটা সময় এবং প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কার্যদিবসের বড় অংশ দখল করে রেখেছিল।

ট্রাম্প এই পরিস্থিতি বদলানোর আভাস দিয়েছেন।

ইউক্রেন যুদ্ধ

ট্রাম্পের দাবি, শপথ নিয়েই তিনি ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধ করবেন। তবে ছয় মাস সময়ের কথাও জানিয়েছেন তিনি।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম কর্মদিবসে ইউক্রেন নিয়ে কী করবেন ট্রাম্প, এখনো তা স্পষ্ট নয়। তবে ট্রাম্প এ ক্ষেত্রে চমকপ্রদ সিদ্ধান্ত বা উদ্যোগ দেখা গেলে অবাক হওয়ার কারণ নেই।

কিউবা-ভেনেজুয়েলা

বাইডেন প্রশাসন সম্প্রতি জঙ্গি রাষ্ট্রের তালিকা থেকে কিউবাকে বাদ দিয়েছে। ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত পালটে দিতে পারেন ট্রাম্প।

তার প্রথম মেয়াদেও এই দুই দেশকে তার আগ্রাসী মনোভাবের লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছিলেন ট্রাম্প।

বিজয় উদযাপন অনুষ্ঠানে ট্রাম্প-মেলানিয়া। ছবি: এএফপি
বিজয় উদযাপন অনুষ্ঠানে ট্রাম্প-মেলানিয়া। ছবি: এএফপি

গাজায় ইসরায়েল হামাসের যুদ্ধ 

যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় গাজায় হামাস-ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চালুর পর ২৪ ঘণ্টাও পার হয়নি। যদিও দীর্ঘদিন ধরে এই আলোচনা চলছিল, তবুও এই চুক্তির কৃতিত্ব দাবি করেছেন ট্রাম্প। বলছেন, তিনি চাপ না দিলে এই চুক্তি বাস্তবায়িত হোত না। 

সব মিলিয়ে বলা যায়, ২০ জানুয়ারি শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয় পুরো বিশ্বের জন্য ঝঞ্জাবিক্ষুদ্ধ্ব দিন হতে যাচ্ছে।

Comments

The Daily Star  | English

Polls could be held by year end ‘at the earliest’: Yunus

Chief Adviser Muhammad Yunus has stated that the next general election in Bangladesh could be held at the end of this year at the earliest

1h ago