ওয়াসাকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছেন তাকসিম: গোলাম মোস্তফা

তাকসিম এ খান ও গোলাম মোস্তফা (বাম দিক থেকে)। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান রাষ্ট্রীয় এই সংস্থাটিকে নিজের ব্যক্তিগত সম্পদের মতো পরিচালনা করছেন বলে মন্তব্য করেছেন ওয়াসা চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা।

গতকাল শুক্রবার দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

গোলাম মোস্তফা বলেন, 'বাংলাদেশের আর কোনো সংস্থার এমডি এমন খেয়ালখুশিভাবে সংস্থা পরিচালনা করেন না। সরকারি সব সংস্থার আইন আছে, বোর্ড আছে, সরকারি নিয়মকানুন আছে। সংস্থাগুলো সেই অনুযায়ীই চলে। তাকসিম এ খান তো কিছু মানেন না। নিজের ইচ্ছামতো ওয়াসা পরিচালনা করেন। নিজে যেটি মনে করবেন, সেটিই করেন। তিনি ওয়াসাকে নিজের ব্যক্তিগত সম্পদের মতো করে ব্যবহার করেন। এখানে তিনি রামরাজত্ব কায়েম করেছেন। কারো কথাই তিনি শোনেন না।'

তাকসিম রাষ্ট্রীয় এই সংস্থাটিকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন উল্লেখ করে বুধবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওয়াসা চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা। সেখানে তাকসিমের বিরুদ্ধে আরও কিছু অভিযোগের কথা উল্লেখ করে এসব বিষয়ে সচিবের কাছ থেকে নির্দেশনা চান তিনি।

হঠাৎ কেন চিঠি দিলেন, জানতে চাইলে ওয়াসা চেয়ারম্যান বলেন, 'হঠাৎ করে নয়। দুই-আড়াই বছর পর ধরে তার সঙ্গে বোর্ড ঝগড়া-বিবাদ করে আসছে। আমরা তো চাইনি বিষয়টি এমন পর্যায়ে যাক যাতে সরকার বিব্রতবোধ করে। আমরা চেয়েছিলাম তাকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে লাইনে আনতে। তিনি ওয়াসার আইন মেনে, বোর্ডের ক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করতে দেবে, সবার পরামর্শ শুনে ওয়াসা পরিচালনা করবেন। কিন্তু তিনি এর কোনো কিছুই তিনি করেননি। তাকসিম একা সব কিছু করবেন, বোর্ডের কথা শুনবেন না—এমন তো হতে পারে না। আমরা বোর্ডে বসে তার এজেন্ডা পাস করে যেতে হবে?'

'এবার আমার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। ওয়াসার আইন অনুযায়ী, প্রতি ২ মাসে অন্তত একবার বোর্ড সভা করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ওয়াসার ৩০২তম বোর্ড সভা হয়েছিল গত ১৫ মার্চ। গত ১৬ এপ্রিল আমি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে ৩০৩তম বোর্ড সভা আহ্বান করি। কিন্তু ওই দিন এমডির অনুরোধে সভা স্থগিত করা হয়। এরপর এমডি জার্মানিতে যান। দেশে ফেরার পর তাকসিম আর বোর্ড সভার কথা বলেননি। আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে ১৫ মের আগেই ৩০৩তম সভা করার প্রয়োজন দেখা দেয়। পরে ১৭ মে আবার বোর্ড সভা আহ্বান করি। এমডি তাকসিম ও ওয়াসার সচিবকে সভা আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। কিন্তু ওয়াসার এমডি বা সচিব সভা আয়োজনের কোনো ব্যবস্থা করেননি। তারা ২ জনই বোর্ডকে অবমাননা করেছেন। এর মাধ্যমে তারা ওয়াসা আইন লঙ্ঘন করেছেন।'

গোলাম মোস্তফা আরও বলেন, 'তাকসিম যখন বোর্ডে বাজেট উপস্থাপন করেন, তখন তিনি নিজের মনের করে লামসাম দিয়ে রাখেন। আমরা যখন এ নিয়ে প্রশ্ন করি, তখন তিনি ক্ষুব্ধ হন। তিনি আমাদের বলেন, "আপনারা এত মাইক্রো লেভেলে দেখেন কেন, ম্যাক্রো লেভেলে দেখবেন।" আমরা যেকোনো লেভেলে দেখতে পারি। আমরা জানতে চাই, এ টাকা কীভাবে আসবে, কীভাবে খরচ হবে—সেটা জানতে চাইলে ক্ষুব্ধ হন।'

'গত ৩ বছরে বিভিন্ন কয়েক শ কোটি টাকার কাজ হয়েছে, প্রকিউরমেন্ট হয়েছে, বিভিন্ন কেমিক্যাল, পাম্প প্রকিউরড হয়েছে। বোর্ডকে পাশ কাটিয়ে তিনি এগুলো করেছেন। আইনে বলা আছে, ঢাকা ওয়াসার নিজস্ব ফান্ড থেকে যেসব কাজ হবে, তার সিদ্ধান্ত বোর্ডের মাধ্যমে হবে। ২ বছর চেষ্টা করেও তাকে এসব বিষয়ে বোঝানো যায়নি। আমরা এমডির সীমা নির্ধারণ করতে চেয়েছিলাম। তিনি এসব বোর্ডে উপস্থাপন করতে দেননি। তখন তিনি বলতে শুরু করলেন, "এমডির চাহিদা মোতাবেক এজেন্ডা ছাড়া কোনো বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হবে না"। এটা কোনো কথা? বোর্ড হচ্ছে পরিচালনা পর্ষদ। বোর্ড অব ডিরেক্টরকে তিনি এজেন্ডা দেবেন, তা নিয়ে মিটিং হবে। তার বিরুদ্ধে কোনো অন্যায় ধরলে আনতে দেন না। তিনি ধরা খাবেন, এমন কোনো এজেন্ডা তুলতে দেন না।'

তিনি বলেন, 'আমার নিজস্ব কোনো সচিবালয় নেই, যেটা দরকার। তিনি নিজের লোক দিয়ে আমাদের বোর্ডে কাজ করান। আগে সরকার থেকে একজন সচিব আসতেন। তাকসিম কৌশলে সেই সচিবকে গ্রহণ না করে নিজের পছন্দের ইঞ্জিনিয়ারকে এখানে ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে বসিয়ে রেখেছেন। অথচ তার এখানে থাকার কোনো যোগ্যতা নেই। কারণ আইনে বলা আছে, বোর্ডের সচিবকে ৭ বছরের জন্য উপসচিব হতে হবে।'

'আমি সচিবালয় করতে চেয়েছি, নিজস্ব কর্মকর্তা চেয়েছি। আমরা কেউই ফুলটাইম না। আমি কিছু করি না বলে ঘন ঘন অফিসে গেলে তিনি বেনামে মন্ত্রণালয়ে চিঠি লেখেন। যাতে তিনি লেখেন, "আমি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেই, সিবিএ নেতাদের নিয়ে মিটিং করি"। এসব নিয়ে আমাকে জবাবও দিতে হয়।'

ওয়াসার অভ্যন্তরীণ অবস্থা নিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, 'এখানে শৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। ডিএমডি (মানবসম্পদ) নিয়োগের পর দেখা যায়, ইচ্ছামতো ওয়াসার কর্মকর্তারা অফিসে আসেন, যান। বায়োমেট্রিক সিস্টেমে হাজিরা নিতে চাইলে তাকসিম ক্ষুব্ধ হন এবং বাস্তবায়ন করতে দেননি। যাকে খুশি, তাকেই তিনি যেকোনো পদে পদায়ন করেন। সব পদের জন্য নির্দিষ্ট যোগ্যতা রয়েছে। কিন্তু তিনি পাম্প অফিসারকে রেভিনিউ অফিসার করছেন। পাম্প অফিসার তো রেভিনিউ অফিসের ক্রাইটেরিয়া ফুলফিল করেন না। এমন উদাহরণ আরও অনেক রয়েছে।'

'এসব নিয়ে স্টেপ নিতে গেলে তিনি এজেন্ডা পাশ কাটিয়ে যান। তিনি বোর্ড সভা হতেই দেন না। তার এজেন্ডা না থাকায় বোর্ড মিটিং করতে দেন না।'

তিনি আরও বলেন, 'যারা আমার বিপক্ষে চিঠি দিয়েছেন, তারা চাপের মুখে ও চাকরির ভয়ে এমডির নির্দেশে এটা করেছেন। যেসব সংগঠন চিঠি দিয়েছে, তারা কেউই নিয়মতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নন। ২০১৯ সাল থেকেই এমনটা হচ্ছে। এমডি যাদের নির্বাচিত করেন, তারাই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হয়। ঢাকা ওয়াসা শ্রমিক ইউনিয়ন (সিবিএ) ২টা। একটা সিবিএ কোর্ট থেকে রায় নিয়ে আসার পরও তিনি তাদেরকে কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেননি। নিজের পছন্দমতো সিবিএ তৈরি করেছেন।'

'মন্ত্রণালয়ের উচিত বোর্ডের কথা শোনা এবং যেসব সমস্যা তৈরি হয়েছে, তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া', যোগ করেন গোলাম মোস্তফা।

Comments

The Daily Star  | English

Cyber protection ordinance: Draft fails to shake off ghosts of the past

The newly approved draft Cyber Protection Ordinance retains many of the clauses of its predecessors that drew flak from across the world for stifling freedom of expression.

6h ago