তাকসিম এ খানের ক্ষমতার উৎস কী

তাকসিম এ খান। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক তাকসিম এ খানকে নিয়ে অনেক বছর ধরেই চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। গত ১৩ বছর ধরে তিনি ঢাকা ওয়াসার এমডি। ৬ বার তার মেয়াদ বৃদ্ধি, ভর্তুকিতে চলা প্রতিষ্ঠানটি থেকে বর্তমানে মাসে সর্বসাকুল্যে ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা বেতন ও আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা নেওয়া এবং গত ১৩ বছরে বেতন-ভাতা হিসেবে ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা নেওয়াসহ আলোচনা-সমালোচনার অভিযোগগুলোর সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে তার ১৪টি বাড়ি থাকা নিয়ে প্রকাশিত সংবাদ। যদিও তিনি এই সংবাদের তথ্য অসত্য বলে দাবি করেছেন।

এত অভিযোগ সত্ত্বেও তাকসিম এ খানকে কেন পদে বহাল রাখা হচ্ছে? ওয়াসার এমডি হিসেবে তিনিই কেন অপরিহার্য? তার ক্ষমতার উৎস কী?

বিষয়গুলো নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদের সঙ্গে।

তাদের মতে, উচ্চপর্যায়ের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া একটি প্রতিষ্ঠানে এভাবে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার সম্ভব হতো না। সেই পৃষ্ঠপোষকতার কারণেই বারবার ওয়াসার এমডি হিসেবে তার মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে।

তাকসিম এ খান ওয়াসাকে একক ক্ষমতার চর্চাকারী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করেছেন বলে মনে করেন ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, 'পুরো প্রতিষ্ঠানেই তিনিই একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী। এখানে বোর্ডের কোনো ভূমিকা নেই বললেই চলে। তাদের কোনো ভূমিকা পালন করতে দেওয়া হয় না। ফলে এই প্রতিষ্ঠান থেকে জনগণের যেই সেবা পাওয়ার কথা, তারা তা থেকে বঞ্চিত। তাকসিম এ খানের বিরুদ্ধে নাগরিক আন্দোলন পর্যন্ত হয়েছে, মানুষ পথে নেমেছে। এসব ঘটনা সবার জানা। কিন্তু, এগুলো কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বলে মনে হয় না।'

বিধিমালা লঙ্ঘন করে বারবার তাকসিমের দায়িত্বের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, 'ওয়াসার বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ এবং সেগুলোর সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে। এগুলো নিয়ে অনেক সংবাদ-গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। এসব বিষয় আলোচিত হয়েছে। কিন্তু, এরপরেও সরকার বা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ফলে আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে তিনি খুবই ক্ষমতাবান। তার যে প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা, যার অপব্যবহার করে তিনি প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছেন, সেটির বাইরেও তার ক্ষমতার বলয় আছে। অন্যথায় এখন তিনি যেমন জবাবদিহিতার বাইরে আছেন, এটা সম্ভব হতো না কিংবা এত সমালোচনা ও অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও নীতি লঙ্ঘন করেও তার মেয়াদ বাড়ানো হতো না।'

উচ্চপর্যায়ের সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতায় তাকসিম এ খান দীর্ঘ বছর ওয়াসার এমডি পদে আছেন বলে মনে করেন অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, 'তাকসিম এ খান আসলে যে দুর্নীতি বা সম্পদ পাচারের দায়ে অভিযুক্ত, এর সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের আরও লোকজন জড়িত আছে। এগুলোর মালিক শুধু তিনি একা নন। ওয়াসার যত রকমের প্রকল্পসহ কাজ আছে, সেগুলোর মধ্যে থেকে প্রচুর পরিমাণ দুর্নীতির যে টাকা, সেই টাকার ভাগিদার উচ্চ পর্যায়ের আরও অনেকে হওয়ায় তাকে এই পদ থেকে সরানো যাচ্ছে না। তা না হলে এত ধরনের খবর প্রকাশের পরেও কেন তাকে সরানো হচ্ছে না? একটা খবরই তো যথেষ্ট ছিল। একটা খবর বা অভিযোগ যদি উচ্চপদস্থ কারো বিরুদ্ধে উঠে, সঙ্গে সঙ্গে সরকারের প্রতিক্রিয়া হওয়ার কথা, দুদকের সক্রিয় হওয়ার কথা বা তার বিরুদ্ধে তদন্ত করার কথা।'

অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ বলেন, 'একেক পর এক খবর, অদক্ষতার প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও উচ্চপর্যায় থেকে যে কিছুই করা হচ্ছে না, তার একমাত্র ব্যাখ্যা হলো উচ্চ পর্যায়ের যারা মূল সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী, তারাও তাকসিম এ খানের ভূমিকায় দুর্নীতির সুবিধাভোগী। একই কারণে বারবার তাকেই উচ্চবেতনে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, আরও বেশি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, তাকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। তাকে যারা সুবিধা দিচ্ছেন, নিশ্চয়ই তারা তার কাছ থেকে কোনো না কোনো সার্ভিস পাচ্ছেন। সেই সার্ভিস আর দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, একটা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ওয়াসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, ভয়ংকর বাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন হচ্ছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Leading univs withdrawing from cluster system

Session delays, irregularities, and lack of central planning cited as reasons

11h ago