এসি ল্যান্ডের কাপড় ড্রাই ওয়াশের বদলে ধোলাই, লন্ড্রি ব্যবসায়ীকে 'জরিমানা'

চট্টগ্রাম
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনারের (এসি ল্যান্ড) কাপড় ড্রাই ওয়াশের পরিবর্তে ধোলাই করায় এক লন্ড্রি ব্যবসায়ীকে হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি তাকে ভূমি অফিসে ডেকে এনে মুচলেকাও নেওয়া হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সীতাকুণ্ড উপজেলা ভূমি অফিসে এই ঘটনা ঘটেছে।

জরিমানা ও মুচলেকা দেওয়া লন্ড্রি ব্যবসায়ী কিশোর দাশ সীতাকুণ্ড পৌরসভার হাসান গোমস্তা মসজিদ এলাকার সানলাইট লন্ড্রির মালিক। জরিমানা আদায় ও মুচলেকা নেওয়ার সময় এসি ল্যান্ড মো. আশরাফুল আলম কার্যালয়ে ছিলেন না। তার দাবি, কিশোর দাশ ড্রাই ওয়াশের কথা বলে কাপড় ধোলাই করে বাড়তি টাকা নিতেন। এভাবে তিনি দীর্ঘদিন থেকে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন। ভবিষ্যতে তিনি যাতে এটা আর না করেন সে জন্য তার বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে কিশোর দাশ মোবাইলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গতকাল (বুধবার) এসি ল্যান্ডের সহকারী কবির তার দোকানে কিছু কাপড় দিয়ে যান। তখন তিনি পাশের সেলুনে ছিলেন। সেখানে গিয়ে কবির তাকে বলেন, এসি ল্যান্ড সাহেবের কিছু কাপড় ধোলাই ও কিছু কাপড় ড্রাই ওয়াশ করতে হবে।

কিশোর দাশ বলেন, 'আমি বেখেয়ালে ২টি কাপড়ই ধোলাই করে ফেলি। আজ কাপড় নিতে আসলে কবির আমাকে মনে করিয়ে দেন যে, তিনি কাপড়গুলো ড্রাই ওয়াশ করতে দিয়েছিলেন। এরপর ১১টার দিকে কবির আমাকে এসি ল্যান্ডের কথা বলে উপজেলা ভূমি অফিসে যেতে বলে দোকানের শাটার নামিয়ে দেন। পরে আমি অফিসে গেলে ১০০ টাকার স্ট্যাম্পে আমার ভুল হয়েছে বলে মুচলেকা নেওয়ার পাশাপাশি ১ হাজার টাকা জরিমানা নেওয়া হয়।'

কিশোরের ভাষ্য, মুচলেকা ও জরিমানা দিয়ে বেরিয়ে আসার পর দুপুর ১টার দিকে আবার তাকে ডেকে পাঠানো হয় ও জরিমানার টাকা ফেরত দেওয়া হয়। এসি ল্যান্ড আসবেন বলে তাকে সেখানে বসিয়ে রাখা হয় বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত।

মুচলেকায় কিশোর বলেন, 'আমি দীর্ঘদিন সীতাকুণ্ড পৌর সদরে লন্ড্রির কাজ করছি  ভুলবশত কিছু কাপড় আমি ড্রাই ওয়াশ না করে সাবান পানি দিয়ে ওয়াশ করে ফেলেছি। আমি আমার ভুল স্বীকার করে মহোদয়ের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমি ভবিষ্যতে কখনো এহেন কর্মকাণ্ড করিবো না এবং অন্য কাউকে সহযোগিতা করবো না মর্মে অঙ্গীকার করছি। মহোদয়ের নিকট আকুল আবেদন, আমার মুচলেকাখানা সাদরে গ্রহণ করে এবার এই অপরাধের দণ্ড হতে অব্যাহতি প্রদানের মর্জি হয়।'

সীতাকুণ্ড উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, এই ঘটনার নেপথ্যে আছেন কবির ও ফারুক নামে অফিসের ২ অস্থায়ী কর্মচারী। কবির উপজেলা ভূমি অফিসের প্রহরী এবং ফারুক ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হিসেবে কাজ করেন।

এ ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে ভূমি অফিসের প্রধান অফিস সহায়ক সবদের হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিষয়টি আমি জানি না। ফারুক ও কবির এই ঘটনা জানে। আপনি এসি ল্যান্ড স্যারের সঙ্গে কথা বলেন।'

এ বিষয়ে এসি ল্যান্ড মো. আশরাফুল আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি বিষয়টি জানি না। তবে আমাকে অফিস থেকে জানানো হয়েছে। এই লোক দীর্ঘদিন ধরে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল। তাই তার কাছ থেকে লিখিত নেওয়া হয়েছে। জরিমানা করা হয়নি। আমি ছাড়া কেউ তো জরিমানা সাক্ষর করতে পারে না।'

কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে কোনো অভিযোগ ছাড়াই এভাবে অন্য কাউকে দিয়ে মুচলেকা নেওয়া আইনসিদ্ধ কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'বিষয়টি আমি অফিসে গিয়ে খোঁজ নিচ্ছি।'

এ ব্যাপারে সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদাত হোসেন বলেন, 'আসলে কী হয়েছে তা খোঁজ নিয়ে দেখব। কেউ অন্যায় করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে।'

Comments

The Daily Star  | English

COP29 and the stakes for Bangladesh

The distribution of benefits is unequal between buyers and sellers.

3h ago