বগুড়ায় জমি নিয়ে বাঙালিদের সঙ্গে বর্মণ-তুরিদের সংঘর্ষে আহত ৩০

জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে বগুড়ার শেরপুরে বাঙালি ও বর্মণ-তুরিদের সংঘর্ষ হয়। ছবি: সংগৃহীত

বগুড়া শেরপুরে জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ থেকে বাঙালিদের সঙ্গে স্থানীয় বর্মণ ও তুরিদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা সংঘর্ষে দুই পক্ষের ৩০ জন আহত হয়েছেন।

আজ রোববার সকালে উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের আম্বইল, গোড়তা, বালেন্দা ও ভাদড়া গ্রামের লোকদের সঙ্গে এই সংঘর্ষ হয়।

আম্বইল গ্রামের সন্তোষ কুমার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন তারা বর্মণ ও তুরি  নৃগোষ্ঠীর মানুষ। তিনি বলেন, 'আম্বইল গ্রামে আমাদের চার বিঘা জমি আছে। এই পৈতৃক সম্পত্তির কাগজ-পত্রও আছে। দীর্ঘদিন আমরা এই জমি চাষ করছি। কিন্তু গত ২১ ডিসেম্বর আম্বইল গ্রামের সোলাইমান মাস্টার, মাসুদ রানা, শহিদুল ইসলাম, মালেক মাস্টার ও দুলাল জমির মালিকানা দাবি করে চাষ করতে যায়। এই বিষয়ে আমি থানায় অভিযোগ করি। ইউনিয়ন পরিষদে এই বিষয়ে বৈঠক হয়। এর পরে আমরা ইউএনওর কাছে যাই। ইউএনও বিষয়টি তদন্ত করার আশ্বাস দেন। তিনি আগামী মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে চেয়েছিলেন। সেই পর্যন্ত দুই পক্ষকেই জমিতে যেতে নিষেধ করেন। কিন্তু আজ তারা প্রায় ১০০ জন জমিতে দেশীয় অস্ত্রসহ হাল চাষ করতে আসলে আমরা ৬০-৭০ জন তাদের বাধা দেই। এ সময় লাঠিসোটা এবং দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে আমাদের ১২ জন আহত হন।

আহতদের মধ্যে ১০ জনকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আরও দুইজন শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন। শেরপুর উপজেলা কমপ্লেক্সে ভর্তির সময়ও প্রতিপক্ষের লোকজন তাদের একজনকে মারধর করেছেন বলে অভিযোগ করেন সন্তোষ।

অন্যদিকে স্থানীয় বাঙালিরা বলছেন, তাদের জমি বেদখল হয়ে আছে। আজ নিজেদের জমিতে চাষ করতে গেলে বর্মণ ও তুরিরা বাধা দেন।

আম্বইল গ্রামের সুজন মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখানে খাস জমিসহ অনেক জমি দখলে রেখেছে বর্মণ ও তুরিরা। তারা মাঝে মাঝে সিএস খতিয়ান বের করে আমাদের পৈত্রিক জমি নিজেদের বলে দাবি করে। অনেক সময় আমাদের কেনা জমিও নিজেদের বলে দাবি করে। আজকে আমরা জমিতে হাল দিতে গেলে তারা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বাধা দেয়।'

তার দাবি সংঘর্ষে তাদের পক্ষের ১৪ আহত হয়ে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ২ জন শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন।

জানতে চাইলে শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জমির মালিকানা নিয়ে স্থানীয় মুসলমান এবং বর্মণ-তুরিদের সংঘর্ষ হয়। দুই পক্ষের ১০-১২ জন আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

তিনি আরও বলেন, দুপুরে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি।

এই বিষয়ে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানজিদা সুলতানা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জমির মালিকানা সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে কিছুদিন আগে আমার কাছে বর্মণ ও তুরিরা এসেছিল। বাঙালিরা আসেনি। আমি দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধানের কথা বলেছিলাম। কিন্তু আজ সেখানে সংঘর্ষ হয়েছে। আমি গিয়ে দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। মঙ্গলবার দুই পক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে।'

Comments