একসঙ্গে এত রক্ত স্বাধীনতার পর এ দেশে আর কখনো ঝরেনি
ছয় দিনে নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে ১৫৪। (২৫ জুলাই ২০২৪, দ্য ডেইলি স্টার)
মাটিতে রক্তের দাগ রেখে চিরবিদায় নিয়েছেন এই মানুষগুলো। ডেইলি স্টারের তথ্যানুযায়ী, মাত্র ছয় দিনে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৫৪ জন। এই সময়ে রক্ত ঝরিয়ে আহত হয়েছেন শত না হাজার, সঠিক হিসাব নেই। কোনোদিন সঠিক হিসাব পাওয়া যাবে, তারও নিশ্চয়তা নেই। সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, 'আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আক্রমণ করলে তারা তো গুলি করবেই। এতে হতাহত হওয়াটাই স্বাভাবিক।'
১৬ জুলাই রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদকে পুলিশ ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করে। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, আবু সাঈদ পুলিশের থেকে বেশ দূরে ছিলেন। কোনোভাবেই তিনি পুলিশকে আক্রমণ করেননি। তাকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে। সরকারি ভাষ্যের সঙ্গে এই হত্যাকাণ্ডের কোনো মিল নেই, বড় রকমের বৈপরীত্য আছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনও কোনো আন্দোলনে মাত্র পাঁচ-ছয় দিনে এত সংখ্যক মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হননি। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের নয় বছরেও এত মানুষ নিহত হননি। বলে রাখা দরকার, স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনই স্বাধীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আন্দোলন। সেই আন্দোলনও সহিংস ছিল। ভাঙচুর, আগুন —সবই হয়েছে। বিদ্যুতের পোল ভেঙে, সেই পোল দিয়ে সচিবালয়ের দেওয়াল ফুটো করে ফেলার ঘটনাও ঘটেছে সেই আন্দোলনে।
২০১৩-১৪ সালের নির্বাচন প্রতিহতের আন্দোলনে নিহত-আহতের নির্ভরযোগ্য সঠিক তথ্য অজানা।
এখন প্রশ্ন মূলত একটি—কেন পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ ও রক্তাক্ত হয়ে উঠল?
এই প্রশ্নের উত্তরের আগে বলে নেওয়া দরকার, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিলেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ছিল সেই আন্দোলন। ৫ জুন আদালত কোটা বাতিলের পরিপত্র বাতিল করে দেন। ফলে কোটা ব্যবস্থা আবার ফিরে আসে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে বাতিল করা হয় সব ধরনের কোটা। গত ১৪ জুলাইয়ের সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন, 'খুব বিরক্ত' হয়ে 'কোটা বাতিল' করে দিয়েছিলেন তিনি। সরকার পরিপত্র জারি করে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সেই পরিপত্র বাতিল করে দেন।
সরকার এর বিরুদ্ধে আপিল করে ৬ জুলাই। তাতে আস্থা না রেখে পরিপত্র পুনর্বহাল বা কোটা সংস্কারের দাবিতে আবার আন্দোলন শুরু হয়। ৯ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত পরিপত্র বাতিলের রায়ে ১০ জুলাই স্থিতাবস্থা দিলেও আন্দোলন চলমান থাকে। আপিল বিভাগে শুনানির দিন ধার্য করেন ২১ জুলাই।
এই সময়কালে আইনমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী আন্দোলন বিষয়ে নানা রকমের কথা বলতে থাকেন। আন্দোলনকারীরা আইন মানে না, সংবিধান মানে না, আদালতের মাধ্যমেই সমাধান হতে হবে, আদালতকে পাশ কাটিয়ে সরকার কিছু করবে না ইত্যাদি কথা বলতে থাকেন। কোনো কোনো মন্ত্রীর বক্তব্যে আন্দোলনকারীদের বিষয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের প্রকাশ পায়। তখন পর্যন্ত আন্দোলন শতভাগ শান্তিপূর্ণ ছিল।
সেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেই সহিংসতা, ভাঙচুর, আগুন ও রক্তের ঝরনা বয়ে গেল।
কেন?
উত্তর খোঁজার জন্য খুব বেশি দূরে যাওয়ার দরকার নেই। সাত-আট দিন আগে গেলেই চলবে। ১৪ জুলাই আন্দোলনকারীরা রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দিয়ে জানায়, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের দাবি না মানলে সর্বাত্মক আন্দোলন শুরু করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতিপুতিরাও (চাকরি) পাবে না? তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে? সেটা আমার প্রশ্ন।' (দ্য ডেইলি স্টার, ১৪ জুলাই ২০২৪)
এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিছিল করেন। রোকেয়া ও শামসুন্নাহার হলের মেয়েরা মিছিলের নেতৃত্ব দেন। মিছিলের স্লোগান ছিল, 'আমি কে তুমি কে, রাজাকার রাজাকার'। শিক্ষার্থীদের এই স্লোগানের তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। শিক্ষার্থীরা যদিও বলেছেন, তাদের পুরো স্লোগান ছিল 'আমি কে তুমি কে, রাজাকার রাজাকার। কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার'।
১৫ জুলাই ওবায়দুল কাদের বলেন, 'আন্দোলন থেকে আত্মস্বীকৃত রাজাকার ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের প্রকাশ পেয়েছে। এর জবাব দেওয়ার জন্য ছাত্রলীগ প্রস্তুত।' (দ্য ডেইলি স্টার)
সেদিনই ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, 'ছাত্রলীগ রাজনৈতিকভাবে এটা (কোটা সংস্কার আন্দোলন) মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।' (দ্য ডেইলি স্টার)
ওই দিন বিকেল থেকে ছাত্রলীগ কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা শুরু করে।
পরের দিন ১৬ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে দুপুর ১২টায় আন্দোলনকারীরা সমাবেশের ঘোষণা দেয়। ছাত্রলীগও একইস্থানে বিকেল ৩টায় সমাবেশের ঘোষণা দেয়। আন্দোলন আরও সহিংস হয়ে ওঠার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
কোটা আন্দোলনকারীরা ঘোষণা অনুযায়ী রাজু ভাস্কর্যের সামনে সমবেত হতে শুরু করলে ছাত্রলীগ হামলা করে। নিরস্ত্র আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠি-রড-হকিস্টিক, রামদা-পিস্তল-শটগান নিয়ে হামলা শুরু করে ছাত্রলীগ। কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের এই হামলা চলতে থাকে। বহু সংখ্যক শিক্ষার্থী আহত হয়। ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় কোটা আন্দোলনকারীরা। বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থান নেয় কার্জন হল ও শহীদ মিনার এলাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ছাত্রলীগ, পুলিশ, বিজিবি।
রাতে পুলিশের সহায়তায় ঢাবি, রাবি, জাবির হলগুলোতে ছাত্রলীগ কোটা আন্দোলনকারীদের খুঁজে খুঁজে মারধর করে। অনেককে হল থেকে বের করে দেয়।
এতে আন্দোলনকারীরা আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। ১৬ জুলাই রাতে ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের নির্দেশ দেয়।
পরেরদিন ১৭ জুলাই কোটা আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা শিক্ষার্থীদের লাঠি হাতে শহীদ মিনারে জমায়েত হওয়ার আহ্বান জানান। এই প্রথম আন্দোলনকারীরা হাতে লাঠি নেয় ছাত্রলীগের লাঠি-হকিস্টিক-রামদা, পিস্তল-শটগানের বিপরীতে। পুলিশ, ছাত্রলীগ অস্ত্রধারীদের সঙ্গে নিয়ে একের পর এক আক্রমণ করে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর। একই ঘটনা পরিলক্ষিত হয় জাবি ও রাবিতেও। উল্লেখ, জাবি ও রাবিতেও রাতে কোটা আন্দোলনকারী খুঁজে নির্যাতন করে ছাত্রলীগ।
সংখ্যায় অনেক বেশি হওয়ায় আন্দোলনকারীদের প্রতিরোধও হয় সমানতালে। কোথাও কোথাও ছাত্রলীগ পিছু হটতে থাকে। বিকেলের দিকে ছাত্রলীগ কোণঠাসা হয়ে পড়ে। শুধু রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নিয়ে থাকে ছাত্রলীগ। রোকেয়া হলের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের মুখোমুখি অবস্থান নেয়।
প্রথম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রলীগ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক মোটরসাইকেলে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যায়। সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যায় অন্যান্য নেতারাও। যার প্রভাব পরে ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগরসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে।
সমাবেশ শেষে রাজু ভাস্কর্যের সামনে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা যখন বিরিয়ানি খাচ্ছিলেন, তখন ঢাবি-জাবির হলগুলো তাদের হাতছাড়া হচ্ছিল।
রাতে রোকেয়া ও শামসুন্নাহারসহ মেয়েদের হলগুলো থেকে ছাত্রলীগ নেত্রীদের বের করে দেওয়া শুরু হয়। ছেলেদের সবগুলো হল থেকে ছাত্রলীগ নেতারা চলে যান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলে কোটা আন্দোলনকারীদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সময় কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতার রুমে ভাঙচুর চালানো হয়।
কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কোটা আন্দোলনকারীদের প্রতিরোধের মুখে ঢাকা, জাবি, রাবি ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের থেকে বিচ্ছিন্ন ছাত্রলীগ।
তখন সব হলে কোটা আন্দোলনকারীরা অবস্থান করছিলেন। অনেকে সকালেই হল ছেড়ে চলে যায়। আন্দোলনকারীরা হল ছেড়ে যাবেন না বলে ঘোষণা দেন।
বিকেল থেকে পুলিশ, বিজিবি, গোয়েন্দারা রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ে ক্যাম্পাসে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করে। তারা হলে হলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বের করে দেয়। শিক্ষার্থীদের যাওয়ার সময় নীলক্ষেত ও শাহবাগে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত ছাত্রলীগ তাদের অনেককে নাজেহাল করে।
শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সহিংস হয়ে ওঠার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে ছাত্রলীগকে দিয়ে আন্দোলন দমনের চেষ্টা এবং পুলিশ-বিজিবির বিবেচনাহীন গুলি চালানো। ছাত্রলীগের হেলমেট বাহিনী লাঠি-হকিস্টিক ব্যবহার করেছে। ছাত্রলীগের সঙ্গে রামদা-পিস্তল-শটগান হাতে যারা শিক্ষার্থীদের গুলি করলো, গণমাধ্যমে যাদের ছবি প্রকাশিত হলো, তারা কারা? তারা কি ছাত্রলীগ?
তাদের ছবি পর্যালোচনা করে বোঝা যায়, তারা সম্ভবত সরাসরি ছাত্রলীগের নেতাকর্মী নয়। তবে তারা ছাত্রলীগের হয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে। ধারণা করা হয়, এরা বহিরাগত সন্ত্রাসী। এই বহিরাগত সন্ত্রাসীদের গুলিতে, রামদার কোপে বহু শিক্ষার্থী হতাহত হয়েছে। এটা কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আরও বিক্ষুব্ধ করেছে।
পুলিশ রাবার ও প্রাণঘাতী বুলেট চালিয়েছে আন্দোলনকারীদের বুক বরাবর। বিজিবিও গুলি চালিয়েছে বুক বরাবর। ভিডিও চিত্র ও সংবাদপত্রে প্রকাশিত ছবি যার প্রমাণ। এটা আন্দোলন দমানোর নিয়ম-রীতি বিরুদ্ধ। উপরের দিকে গুলি চালিয়ে আন্দোলনকারীদের ভয় দেখিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া পুলিশ-বিজিবির উদ্দেশ্য ছিল বলে মনে হয়নি। মনে হয়েছে, শরীরে গুলিবিদ্ধ করাই মূল লক্ষ্য। ফলে হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে ভয়ানকভাবে।
কোটা আন্দোলনে সরকার 'তৃতীয় পক্ষ'র প্রসঙ্গটি বারবার সামনে এনেছে। তার আগে কোনো কোনো গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানও এমন কথা বলেছেন যে কোটা আন্দোলনে 'অনুপ্রবেশকারী' ঢুকেছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। মূলত অরাজনৈতিক এই আন্দোলনে সমর্থন ছিল সব মত-পথের শিক্ষার্থীদের। নিশ্চয় এই আন্দোলনের ভেতরে ছাত্রদল, শিবির ও বাম সংগঠনের কর্মীরা ছিলেন। ছিলেন ছাত্রলীগের কর্মীরাও। এই আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে ছাত্রলীগের ৫০ জনের বেশি নেতা পদত্যাগ করেছেন। অর্থাৎ সর্বস্তরের শিক্ষার্থীদের সমর্থন ও অংশগ্রহণ ছিল। কিন্তু নেতৃত্ব ও অংশগ্রহণে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল সাধারণ শিক্ষার্থীরাই। নেতৃত্ব কখনও ছাত্রদল বা শিবিরের হাতে যায়নি।
কিন্তু সরকার কঠিন-কঠোর ও নিষ্ঠুরভাবে আন্দোলন দমনের চেষ্টা করে হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। ছাত্র রাজনীতি থেকেই তিনি উঠে এসেছেন। এক সময় সাংবাদিকতাও করেছেন। তার মতো একজন রাজনীতিক এত বড় ও জনসমর্থিত আন্দোলন কেন ছাত্রলীগকে দিয়ে মোকাবিলা করতে চাইলেন? তার বক্তব্যের পর ছাত্রলীগ যেভাবে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করলো, সারা দেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লো, একটি আন্দোলনে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি মানুষ নিহত ও আহত হলেন—এই দায় ওবায়দুল কাদের কোনোদিন এড়াতে পারবেন না। এই দায়ের ইতিহাস বারবার ফিরে আসবে।
বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে পারেননি অভিজ্ঞ আইনজীবী ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও। তিনি যখন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়েছেন, আপিল শুনানির তারিখ এগিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছেন, তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। আবু সাঈদকে হত্যার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর গুলিতে হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। গুলি চালানোর আগেই যদি আলোচনায় বসতেন, শুনানির তারিখ এগিয়ে আনতেন, তাহলে পরিস্থিতি হয়তো অন্য রকম হতে পারতো।
প্রেম ও বিপ্লবের কবিখ্যাত পাবলো নেরুদার 'আই অ্যাম এক্সপ্লেইনিং অ্যা ফিউ থিংগস' কবিতার সঙ্গে অনেকেই কমবেশি পরিচিত। সেই কবিতার কয়েকটি লাইন এমন:
'কাম অ্যান্ড সি দ্য ব্লাড ইন দ্য স্ট্রিটস
কাম অ্যান্ড সি
দ্য ব্লাড ইন দ্য স্ট্রিটস
কাম অ্যান্ড সি দ্য ব্লাড
ইন দ্য স্ট্রিটস!'
একসঙ্গে এত রক্ত স্বাধীনতার পর এ দেশে আর কখনো ঝরেনি।
mortoza@thedailystar.net
Comments