সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের অবস্থা উদ্বেগজনক: সংসদীয় কমিটি

সংসদ ভবন
ফাইল ফটো

রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের অবস্থা যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলে জানিয়েছে অনুমিত হিসাব সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি।

কমিটি জানিয়েছে, ব্যাংকের অনেক গ্রাহককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকগুলোর ক্ষেত্রে ঋণের বিপরীতে জামানত নেই। ব্যাংকটির বড় খেলাপিদের থেকে বার্ষিক আদায়ের হার এক শতাংশেরও কম।

কমিটির এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।

সোনালী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, ন্যাশনাল ফিন্যান্স লিমিটেড, প্রিমিয়াম লিজিং এন্ড ফিন্যান্স লি.-এর খেলাপি ঋণের আর্থিক অনিয়ম যাচাই বাছাইয়ে ২০২১ সালের ৩ জানুয়ারি সংসদীয় কমিটি একটি সাব কমিটি গঠন করে। কমিটির সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খানকে আহবায়ক করে গঠিত কমিটির অন্য সদস্যরা ছিলেন আহসান আদেলুর রহমান ও খাজিদাতুল আনোয়ার। কমিটি দীর্ঘ যাচাই বাছাই করে আজ সোমবার অনুষ্ঠিত মূল কমিটির বৈঠকে প্রতিবেদন জমা দেয়। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাব কমিটির প্রধান ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, আমরা প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। এটা নিয়ে পরবর্তীতে আলোচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংককে সুপারিশ জানানো হবে।

এদিকে সাব কমিটি তার প্রতিবেদনে ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণ ও ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ঋণ প্রদাণের ক্ষমতা সীমিত করণসহ ১৪ দফা সুপারিশ করেছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী সোনালী ব্যাংকের ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ৫ লাখ ৫০ হাজার খেলাপি ঋণ গ্রাহকের সংশ্লেষ অর্থের পরিমাণ ১৭ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা। ডিসেম্বর ২০২১ এ খেলাপি ঋণ গ্রাহক কমে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৭৬ হাজার। কিন্তু খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে হয় ১৮ হাজার ৭৮৬ কোটি। এ বছর এপ্রিল পর্যন্ত খেলাপি ঋণ গ্রাহক কিছুটা বেড়ে হয় ৩ লাখ ৯৭ হাজার। আর খেলাপি ঋণ কিছুটা কমে হয় ১৮ হাজার ৭১২ কোটি। ২০২০ সালের (৬ দশমিক ২২ শতাংশ) তুলনায় ২০২১ সালে (৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ) খেলাপি ঋণ আদায় কিছুটা বেড়েছে।

ডিসেম্বর ২০২০ সালে ১০ কোটি তদুর্ধ্ব ২৩৭ ঋণ খেলাপির সংশ্লেষ অর্থ ১১ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা। ডিসেম্বর ২০২১ খেলাপির সংখ্যা বেড়ে হয় ৩০৮। একই সাথে খেলাপি ঋণের পরিমাণও বেড়ে হয় ১৩ হাজার ৪৭ কোটি টাকা। এপ্রিল ২০২২ এ খেলাপির সংখ্যা হয় ৩০৯ এবং খেলাপি ঋণের পরিমাণ হয় ১২ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা। ব্যাংকটির মোট ঋণের বিপরীতে খেলাপি ১৬-১৭ শতাংশ। এসব খেলাপি ঋণের মধ্যে বছরে আদায়ের হার এক শতাংশেরও কম। যা মোটেও সন্তোষজনক নয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- বড় ঋণের বিপরীতে রক্ষিত সহজামানতের পরিমাণ ঋণস্থিতির ৬০ শতাংশ, যা অপ্রতুল। ঋণ প্রদানে তথ্য যাচাই-বাছাইয়ে ঘাটতি ছিল। এদিকে ছোট ঋণ খেলাপিদের ক্ষেত্রে জামানত ১৫০ শতাংশের মতো। এসব খেলাপি ঋণ আদায়ের হার ৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ। মোট ঋণ খেলাপির মধ্যে ১০ কোটি তদুর্ধ্ব সংখ্যা মাত্র শূণ্য দশমিক শূণ্য ৮ শতাংশ (০.০৮%)। কিন্তু তাদের কাছে খেলাপি মোট খেলাপির ৬৭ শতাংশ। ব্যাংকটির ছোট খেলাপি ঋণের আদায়ের সম্ভাবনা বড় খেলাপির তুলনায় বেশি বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

সাব কমিটি বলেছে- ব্যাংকটির অনেক গ্রাহকদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকগুলোর ক্ষেত্রে জামানত নেই। জামানত থাকলেও বিক্রির প্রক্রিয়া জটিল। জামানতের পরিমাণ ও আদায়ের হার আপাত দৃষ্টিতে ভালো দেখালেও ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের প্রকৃত অবস্থা যথেষ্ট উদ্বেগজনক।

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের (এসআইবিএল) ১০ কোটি তদুর্ধ্ব ২৭ জন ঋণ খেলাপির এক হাজার ৪৪ কোটি ৪০ টাকার টাকার বিপরীতে এ বছর এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে কোনো আদায় নেই। এটিকে অত্যন্ত হতাশাজনক ও দুর্বল ব্যাংক ব্যবস্থাপনার পরিচায়ক বলে উল্লেখ করা হয়। এ ব্যাংকের বেশিরভাগ ঋণের অনুকূলে জামানত নেই। পার্সোনাল গেরেন্টরের মাধ্যমে ঋণ দেয়া হয়েছে। বড় ঋণ গ্রহীতাদের খেলাপি হওয়ার প্রবণতা বেশি।

ন্যাশনাল ফাইন্যান্স মোট ঋণের (৬৪৩ কোটি) ১৯ শতাংশ শ্রেণিকৃত। শ্রেণিকৃত ঋণের ১০ জন গ্রাহকের কাছে।

ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের এপ্রিল ২২ ব্যাংকের ঋণ ও অগ্রীমের পরিমাণ এক হাজার ৩৮৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১২০ জন খেলাপি ঋণ গ্রহিতার বিপরীতে শ্রেণিকৃত ঋণ এক হাজার ৩৬৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা। যা মোট ঋণের ৯৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এর মধ্যে ১০ কোটি তদুর্ধ্ব খেলাপি ৪৬ জন এবং সংশ্লেষ অর্থের পরিমাণ এক হাজার ৫৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh transition from autocracy to democracy

Transitioning from autocracy to democracy: The four challenges for Bangladesh

The challenges are not exclusively of the interim government's but of the entire political class.

8h ago