প্রচণ্ড গরমে বছরে ঢাকার ক্ষতি ৬ বিলিয়ন ডলার

স্টার ফাইল ফটো

অত্যধিক তাপমাত্রা থেকে গরমে ঢাকা প্রতি বছর ৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের জিডিপি হারাচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে গতকাল শনিবার প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে।

আদ্রিয়েন আরস্ট-রকফেলার ফাউন্ডেশন রেসিলিয়েন্স সেন্টার, রকফেলার ফাউন্ডেশন এবং মানবহিতৈষী অ্যাড্রিয়েন আরস্তের যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, এটি ঢাকার বার্ষিক জিডিপির প্রায় ৮ শতাংশ।

বিশ্বের ১২টি শহরের সঙ্গে তুলনা করে গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকায় তাপমাত্রা অন্য যেকোনো শহরের তুলনায় উৎপাদনশীলতাকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে।

অন্যান্য যে শহরগুলো নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে নয়াদিল্লি, এথেন্স, বুয়েনস আইরেস, ফ্রিটাউন, লন্ডন, লস অ্যাঞ্জেলেস, মিয়ামি, মন্টেরি, সান্তিয়াগো ও সিডনি।

'হট সিটিজ, চিলড ইকোনমিজ: ইমপ্যাক্টস অব এক্সট্রিম হিট অন গ্লোবাল সিটিজ' শীর্ষক গবেষণায় বলা হয়, বৈশ্বিক উষ্ণতা কমাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে ২০৫০ সালের মধ্যে এই ক্ষতির পরিমাণ ১০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যাবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আবুধাবি ও ব্যাংককের মতো শহরও অতি তাপের শিকার। তবে, শ্রমমুখি অর্থনীতির কারণে ঢাকায় এর প্রভাব অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

এতে আরও বলা হয়েছে, ঢাকায় ইতোমধ্যে উচ্চ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার পরিমাণ ৬০ থেকে ৮০ শতাংশের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে চলেছে।

অনিয়ন্ত্রিত উষ্ণায়নের কারণে উত্পাদন খাতগুলো বার্ষিক ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার এবং লজিস্টিকগুলো বার্ষিক ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার হারায়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকায় বছরের উষ্ণতম ১০ দিনের আপাত তাপমাত্রা (তাপ ও আর্দ্রতা উভয়ই বিবেচনা করে) মানব দেহের চেয়ে বেশি গরম থাকে।

ঢাকায় ২০২০ সালের ৩৬ দশমিক ৫ দিন এমন ছিল, যেখানে ২৪ ঘণ্টার গড় তাপমাত্রা ছিল ২৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। ২০৫০ সালের মধ্যে তা বেড়ে হতে পারে ৬৯ দশমিক ৮ দিন।

বর্তমানে সড়কের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, শহরের ভেতরের বড় ও বহুল কর্মময় এলাকাগুলো আশেপাশের গ্রামাঞ্চলের চেয়ে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি উষ্ণ।

এই তাপ দরিদ্রদের ওপর অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রভাব ফেলে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, তৈরি পোশাক, পরিবহন এবং খুচরা বাণিজ্যের মতো খাতে, যেখানে মজুরি গড়ের চেয়ে কম, সেখানে ক্ষতির পরিমাণ ইতোমধ্যে আয়ের প্রায় ১০ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, তৈরি পোশাক বা ইট তৈরির মতো খাতে উৎপাদনে ক্ষতি বিশেষভাবে বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব জায়গায় যন্ত্রপাতি বা ওভেনের সান্নিধ্যে শ্রমিকদের অধিক তাপমাত্রার সম্মুখীন হতে হয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে বসতির ঘনত্ব অনেক বেশি। এই এলাকায় তাপমাত্রা সাধারণত ঢাকার আশেপাশের তুলনায় ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি থাকে।

এই ধরনের তাপমাত্রা স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। 'পৃথিবী জ্বলছে। দুর্ভাগ্যবশত, এটি অত্যুক্তি নয়। জলবায়ুর কারণে সৃষ্ট তাপ আমাদের জীবনযাপন ও কাজ করার পদ্ধতি পরিবর্তন করছে।'

অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব আর্থ অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্সেসের অধ্যাপক আশরাফ দেওয়ান কয়েক দশক ধরে ঢাকার তাপমাত্রা কীভাবে বাড়ছে তা নিয়ে গবেষণা করেছেন।

অধ্যাপক আশরাফ দেওয়ান বলেন, 'ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে তাপমাত্রা ভিন্ন অনুভূত হয়।'

তিনি বলেন, 'সবুজের অভাব এবং ঘরের ছাদে টিন ব্যবহারের কারণে দরিদ্রতম এলাকাগুলোতে বেশি গরম। এগুলো দিনের বেলা সূর্যের তাপ ধরে রাখে এবং রাতে খুব দ্রুত তাপ ছাড়ে না। এই অঞ্চলগুলো উঁচু ভবন বেষ্টিত হওয়ায় সহজে বাতাস প্রবাহিত হয় না। তাই, গরম বাতাস আটকে থাকে।'

তিনি আরও বলেন, 'জলাশয়গুলো থাকলে শহর ঠাণ্ডা থাকতো। কিন্তু আমাদের এখন আর জলাশয় নেই। উপরন্তু, এয়ার কন্ডিশনারের ওপর নির্ভরতার কারণে আশেপাশের বাতাস আরও গরম হচ্ছে।'

অধ্যাপক আশরাফ দেওয়ান বলেন, 'এর পাশাপাশি কাঁচের ভবনগুলো তাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এগুলোতে দিনের বেলা তাপ ও আলো প্রবেশ করে বলে ভবনের ভেতরটা ঠাণ্ডা করতে আরও বেশি এয়ার কন্ডিশনার প্রয়োজন হয়।'

'সবচেয়ে সহজ ও কম খরচে এর সমাধান হচ্ছে, বেশি করে গাছ লাগানো। গাছ বাতাসের তাপমাত্রা বাড়তে দেয় না', যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Grameen Bank ownership, board to see major changes 

The plan has been outlined in the draft of a new ordinance

1h ago