সীমান্তে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী-আরাকান আর্মি যুদ্ধ, রোহিঙ্গারা ঢুকছে বাংলাদেশে

রোহিঙ্গা
ফাইল ছবি।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনী গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ক্রমাগত আকাশ ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে নতুন করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ শুরু হয়েছে রোহিঙ্গাদের।

২০২০ সালের নভেম্বর থেকে মিয়ানমার সশস্ত্র বাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে সাময়িক যুদ্ধবিরতি চলছিল। কিন্তু চলতি বছরের জুনে মিয়ানমারের রাখাইন ও দক্ষিণ শিনে ২ পক্ষের উত্তেজনা রূপ নেয় সশস্ত্র যুদ্ধে। ভারী অস্ত্র ও বিমান হামলাসহ সশস্ত্র যুদ্ধ চলছে সেখানে। এমনকি সেখানে ব্যবহৃত আর্টিলারি ও মর্টার শেল এসে পড়ছে বাংলাদেশের ভূখণ্ডেও।

এর ফলে রাখাইন রাজ্যের মংডু, রাথেডাং, বুথিডাং ও মরুক-ইউ শহর এবং শিন রাজ্যের পালিতওয়ার নাগরিকরা আতংকিত হয়ে পড়েছেন।

সেখানকার বাসিন্দাদের অনেকে ভারতের মিজরামের সীমান্তবর্তী জেলা লংটলাইতে চলে যাচ্ছেন। অনেকে আবার সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে নাফ নদী অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন।

গত ১০ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালংয়ের মাদুরচোরা ক্যাম্প-১ এ এসে আশ্রয় নিয়েছেন আবু ওয়াদাসহ (৪০) বুথিডাংয়ের আরও অন্তত ১১ জন।

গত আগস্ট থেকে মিয়ানমার বাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান সংঘর্ষে তারা আতংকে দেশ ছেড়েছেন। আবু ওয়াদা বলেন, 'বাংলাদেশে আমাদের আত্মীয়-স্বজন আছেন। আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই ক্যাম্পে এসেছি।'

গত কয়েক সপ্তাহে আরও অন্তত ৩টি পরিবার মিয়ানমারের বুথিডং থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তাদের আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।

নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এমনই একটি পরিবারের একজন সদস্য কথা বলেছে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।

তিনি বলেন, 'সেনাবাহিনী ও স্থানীয় বৌদ্ধরা আমাদের ওপর আক্রমণ করে। তারা আমাদেরকে সেখান থেকে মংডুতে চলে যেতে বলে। আমরা জীবনের ভয়ে তখনই সেখান থেকে চলে যাই।'

তারা প্রথমে কুতুপালং ক্যাম্পে আশ্রয় নিলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের খুঁজতে শুরু করে। পরবর্তীতে তারা অন্য ক্যাম্পে চলে যান। তবে, তারা কোন ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন তা তিনি জানাননি।

নতুন এই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কুতুপালং রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের ক্যাম্প ২-ই এর ইনচার্জ মোহাম্মদ আকতার হোসেন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

কুতুপালংয়ের অপর একটি নিবন্ধিত ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. শায়েদ ইকবাল বলেন, 'নতুন করে কোনো রোহিঙ্গা এসে আশ্রয় নিয়েছে, এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। ক্যাম্পে নতুন কোনো রোহিঙ্গাকে প্রবেশ করতে না দেওয়ার বিষয়ে আমাদের কাছে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।'

কক্সবাজারের আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন-৮) কমান্ডিং অফিসার আমির জাফর বলেন, 'আমরা জানতে পেরেছি যে একটি পরিবার বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, কিন্তু তারা ঠিক কোথায় আছে সেটা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি।'

বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে রাখাইনের সাহাববাজার এলাকায় কিছু রোহিঙ্গা পরিবার এসে একত্রিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী।

গত মঙ্গলবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তারা বাংলাদেশে আসার অপেক্ষায় আছে, সুযোগ পেলেই ঢুকে পড়বে। ইতোমধ্যেই চলে এসেছে কি না, সেটা জানি না।'

রোহিঙ্গা ক্যাম্প সূত্রও একই তথ্য জানিয়েছে। বেশকিছু রোহিঙ্গা পরিবার টেকনাফের শাহ পরীর দ্বীপের বিপরীতে সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছে।

এ ছাড়া, তারা প্রধানত চৌধুরী পাড়া, লেদা বাজার, লোম্বাবিল, জাদিমুরা ও বোরোতোলি পয়েন্টগুলোর মধ্যকার রুট ব্যবহার করে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে। কেননা, এই পয়েন্টগুলোতে নাফ নদীর প্রস্থ তুলনামূলকভাবে কম।

এম গফুর উদ্দিন জানান, সীমান্তের ২ পাশে কিছু দালাল রয়েছে, যারা রোহিঙ্গা পরিবারগুলোকে নদী পারাপারে সহায়তা করে।

এই প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দ্য ডেইলি স্টারের নিজস্ব প্রতিবেদক (কক্সবাজার) মোহাম্মদ আলী জিন্নাত

Comments

The Daily Star  | English

No one too poor to dream, no dream too big to achieve: Yunus

He says in his keynote speech at Earthna Summit 2025 in Doha

10m ago