একটি লাইব্রেরি, একটি মহৎ উদ্যোগ

ফুটপাথ ঘেঁষে গড়ে ওঠা লাইব্রেরি। ছবি: স্টার

চট্টগ্রাম নগরীর জামাল খান সড়কের মোড়ে ফুটপাথ ঘেঁষে গড়ে ওঠা একটি লাইব্রেরি বইপ্রেমী মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।

ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কাছে যাত্রী ছাউনির পাশে ফুটপাথের এক চিলতে জায়গা নিয়ে চালু হওয়া এই লাইব্রেরি নিয়ে শিক্ষার্থী ও তরুণ-তরুণীদের উৎসাহী দেখা গেছে।

এটি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর (জামাল খান) ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনের নেওয়া আরেকটি ইতিবাচক উদ্যোগ।

শেখ রাসেল স্মৃতি পাঠাগার নামের এই লাইব্রেরি চালু হয় গত শুক্রবার। পাঠক এখান থেকে বই ধার নিতে পারেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রন্থাগারটিতে উপন্যাস, কবিতা, বিজ্ঞান, আত্মজীবনী, রাজনৈতিক প্রবন্ধ, শিশু সাহিত্যসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির শতাধিক বই রয়েছে।

চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র অর্ক দত্ত যখন রোববার তার মায়ের সঙ্গে স্কুল থেকে ফিরছিল, তখন লাইব্রেরিটি তার নজরে আসে এবং তার মাকে কিছু সময়ের জন্য দাঁড়াতে বলে। ছেলের উৎসাহ লক্ষ্য করে তার মা গ্রন্থাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীকে বই ধার নেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জিজ্ঞাসা করেন।

সকালের শিফটের স্কুল ছুটির সময় হওয়ায় সেদিন বিভিন্ন স্কুলের অনেক শিক্ষার্থীকে লাইব্রেরির সামনে জড়ো হতে দেখা গেছে।

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মনিফা সুলতানা তার ৩ বন্ধুসহ স্কুল থেকে ফিরছিল। তারা লাইব্রেরির কর্মীকে সদস্য পদ প্রাপ্তির নিয়মকানুন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছিল।

এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে মনিফা বলে, সে লাইব্রেরির সদস্য হতে আগ্রহী। এখানে বই ধার নেওয়ার নিয়মও খুবই সহজ।

স্থানীয় বাসিন্দারাও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা বলছেন, শিশু ও তরুণরা ইলেকট্রনিক গেজেটে আসক্ত হয়ে পড়েছে। এই উদ্যোগ তাদেরকে বই পড়তে আগ্রহী করবে।

জামাল খান এলাকার বাসিন্দা অনুপম বড়ুয়া বলেন, 'আমাদের শিশু ও তরুণরা ইলেকট্রনিক ডিভাইসে আসক্ত হয়ে পড়েছে। পাঠ্যপুস্তক ছাড়া অন্য বই পড়ার অভ্যাস তাদের মধ্যে প্রায় নেই বললেই চলে। এখানে একটি লাইব্রেরি স্থাপন করা হয়েছে। রাস্তার ধারে চালু হওয়া এই লাইব্রেরিটি শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে এবং তাদের মধ্যে অনেকেই নিশ্চয়ই নিয়মিত বই পড়তে আগ্রহী হবে।'

বই ধার নেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাইলে লাইব্রেরির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী গোকুল নন্দী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, যে কেউ লাইব্রেরির সদস্য হতে পারেন। এর জন্য রেজিস্ট্রেশন ফি ১০০ টাকা।

তিনি বলেন, 'একজন সদস্য প্রার্থীকে এনআইডি কার্ডের কপি এবং পাসপোর্ট সাইজের ২ কপি ছবি জমা দিতে হবে। যদি তিনি শিক্ষার্থী হন, তাহলে প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র বা জন্ম সনদপত্রের কপি জমা দিতে হবে।'

গোকুল বলেন, 'সদস্যদের প্রতি মাসে ২০ টাকা ফি দিতে হবে এবং সপ্তাহে একটি বই ধার করতে পারবেন। বইটি ফেরত দেওয়ার পর তিনি পরের সপ্তাহে আবার একটি বই ধার করতে পারেন। এভাবে একজন সদস্য মাসে মোট ৪টি বই ধার করতে পারবেন।'

তিনি জানান, লাইব্রেরিটি সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা এবং বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

শৈবল দাশ সুমনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'মানুষ, বিশেষ করে শিক্ষার্থী-তরুণ-তরুণীরা যাতে বই পড়ার প্রতি আগ্রহী হয় সেজন্যই এই উদ্যোগ নিয়েছি। জামাল খান এলাকায় বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং অভিভাবকরা প্রায়শই অভিযোগ করেন যে তাদের সন্তানরা ইলেকট্রনিক গেজেটের প্রতি অতিরিক্ত ঝুঁকে গেছে। এটি জাতির জন্য খুবই সতর্ক সংকেত যে একটি প্রজন্ম বেড়ে উঠছে পাঠ্য বই ছাড়া অন্য বই পড়ার অভ্যাস না করেই।'

তিনি বলেন, 'লাইব্রেরিটি মূল সড়কের পাশে স্থাপন করা হয়েছে যাতে শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাতায়াতের সময় এটি নজরে আসে। আমি যদি লাইব্রেরির মাধ্যমে মাসে ১০ জন নতুন পাঠক পেতে পারি তাহলে বছরে ১২০ জন নতুন পাঠক তৈরি পারবো।'

তিনি আরও বলেন, 'আমার উদ্যোগ খুব সামান্য। আমি একটি উদাহরণ সৃষ্টি করতে চেয়েছি, যাতে অন্যরা এটি অনুসরণ করে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৪০টি ওয়ার্ডে এই ধরনের লাইব্রেরি স্থাপন করা হলে হাজারো নতুন পাঠক পাবো। একটি মানবিক সমাজ গঠনের জন্য তরুণ প্রজন্মের জন্য বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা অপরিহার্য।'

Comments

The Daily Star  | English

Hasina oversaw July protest killings: UN

Human rights office also finds systematic abuse by former ministers, security agency officials, AL leaders

7h ago