মন জয় করছে আশ্বিনা আম, রপ্তানির সম্ভাবনা

আশ্বিনা আম। ছবি: স্টার

বছর ৬ আগেও আশ্বিনা আম কোনো খাবার টেবিলে খুব কমই দেখা যেত। একাধারে টক, কালো হয়ে যাওয়া চামড়া এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে পোকার আক্রমণ থেকে এই আম রক্ষা করা কঠিন হতো। প্রক্রিয়াজাত খাদ্য হিসেবেই সীমাবদ্ধ ছিল আশ্বিনা আমের ব্যবহার।

বড় আকারের এই আম অবশেষে মানুষের হৃদয় জয় করতে শুরু করেছে এবং চাহিদা বেড়েছে। ২০১৬ সালে আম চাষে ব্যাগিং পদ্ধতি চালু হওয়ার পর থেকে এই আমের স্বাদ যেমন বেড়েছে, তেমনি এর রঙ উন্নত হয়েছে। কীটপতঙ্গ থেকে আমগুলো রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে।

আশ্বিনা আম এখন সারা দেশের ভোক্তাদের মুগ্ধ করছে। চাহিদা বৃদ্ধির ফলে আশ্বিনা আমের দাম মৌসুমের শেষদিকে প্রতি মণ ১৬ হাজার টাকায় পৌঁছে যায়।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রখ্যাত আম গবেষক ড. সরফ উদ্দিন বলেন, 'ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম চাষে এই আমের ভাগ্য যেমন পাল্টে গেছে, তেমনি আম চাষিদের ভাগ্যও বদলে গেছে।'

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশের মোট বার্ষিক আম উৎপাদন প্রায় ১২ লাখ টন। এর প্রায় ১৫ শতাংশই আশ্বিনা আম।

আশ্বিনা আমের মোট বার্ষিক উৎপাদনের মধ্যে অন্তত ৪০ শতাংশ আসে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে এবং বাকি অংশ আসে রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও অন্যান্য জেলা থেকে।

২০১৬ সালের আগে, আশ্বিনা আম মূলত আচার তৈরিতে ব্যবহৃত হতো। উৎপাদিত আমের বেশিরভাগই নষ্ট হতো। আশ্বিনা আম কখনো প্রতি মণ ২ হাজার ৪০০ টাকার বেশি দামে বিক্রি হয়নি।

সরফ উদ্দিন জানান, বাংলা আশ্বিন মাসে আশ্বিনা আম পাড়ার সঠিক সময়। কিন্তু সময়ের আগে আম পেড়ে খাওয়ার কারণে এর স্বাদ টক হতো।

বাংলা আশ্বিন মাস ইংরেজি সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হয়। কিন্তু গোপালভোগ, খিরসাপাত, হিমসাগর ও ল্যাংড়ার মতো সর্বাধিক জনপ্রিয় আমের জাতগুলোর মৌসুম আগস্টের মাঝামাঝিতে শেষ হয়ে যায়।

সরফ বলেন, 'আমের চাহিদা থাকায় মাঝের এক মাস সময়ে আম পাড়া কেউ বন্ধ রাখতে পারে না। আশ্বিনা আমের সঠিক সময় আসার আগে তাড়াতাড়ি পেড়ে ফেলার কারণে আমের স্বাদ টক হতো।'

এ ছাড়া, যারা সঠিক মৌসুমের জন্য অপেক্ষা করতেন তাদের আমে পোকার আক্রমণ হতো। ফলে এর দাম কমে যেত।

তিনি আরও বলেন, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে আশ্বিনা আম কালো হতো। কারণ এই জেলাগুলোতে সাধারণত আগস্টের শেষের দিকে এবং সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে ভারি বৃষ্টিপাত হয়।

'অত্যধিক বৃষ্টিতে আশ্বিন আমের চামড়া কালো হয়ে যেত', সরফ উদ্দিন বলেন।

আমের ব্যাগিং পদ্ধতি। ছবি: স্টার

২০১৬ সালে যখন এই আমগুলোতে ব্যাগিং পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়, তখন ৩টি বড় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।

প্রথমটি ছিল স্বাদের পরিবর্তন। আমগুলো সময়ের আগে পাড়া না হওয়ায় এর মিষ্টতা নিশ্চিত হয়। দ্বিতীয়টি ছিল রঙের পরিবর্তন। বৃষ্টিতে না ভেজার কারণে এর রং অক্ষুণ্ণ থাকে। তৃতীয়টি, ব্যাগের কারণে আমে পোকামাকড়ের আক্রমণ হয় না।

বর্তমানে আশ্বিনা আম উচ্চ মূল্যে বিক্রি হওয়ার কারণ, সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে এটি ছাড়া অন্য কোনো জাতের আম বাজারে থাকে না।

কানসাট আম ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক টিপু বলেন, 'ব্যাগিং এই আমকে খুব দামি আমে পরিণত করেছে। দাম বৃদ্ধির কারণে সবাই এখন এই আমের কদর করে।'

টিপু জানান, ২০১৬ সালে কিছু কৃষক সরকারি কর্মকর্তাদের সহায়তায় সফলভাবে প্রথম ব্যাগিং পদ্ধতি ব্যবহার করার পর এই পদ্ধতির ব্যবহার চাষিদের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

আম উৎপাদনকারী আনোয়ারুল হক বলেন, 'আমরা এখনকার মতো কখনও আশ্বিনা আমের যত্ন নেইনি।'

তিনি গত ১৫ বছর ধরে আম চাষ করছেন। তিনি বলছিলেন, কৃষক আশ্বিন মাসের আগে আর এই আম পাড়ে না। কারণ, তারা মৌসুমের শুরুতেই মণ প্রতি কমপক্ষে ৮ হাজার টাকা দাম পেতে শুরু করেন।

'মৌসুমের শেষে দাম দ্বিগুণ হয়ে যায়', তিনি যোগ করেন।

সম্প্রতি রাজশাহীর বানেশ্বর বাজারে মণ প্রতি ৮ হাজার টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে আশ্বিনা আম।

উৎপাদনকারীরা এখন এমনও বলেন যে আশ্বিনা আমের রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে।

কিছু রপ্তানি পরীক্ষামূলকভাবে হলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেপ্টেম্বরের শেষে এই জাতের আমের দূরবর্তী দেশে পাঠানোর সময় কীটপতঙ্গের আক্রমণে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই কারণে, এই আমের রপ্তানি সাধারণত উৎসাহিত করা হয় না।

'তবে সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারলে অন্যান্য জাতের মতো এই আমও রপ্তানি করা যাবে', বলেন সরফ উদ্দিন।

অন্যদিকে টিপু বলেন, অনেক রপ্তানিকারক গত ৩ বছর ধরে কানসাট বাজার থেকে আশ্বিনা আম সংগ্রহ করে বিনা সমস্যায় রপ্তানি করে আসছেন।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

8h ago