ভুখা মিছিল: ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে দাসত্বের জীবন চাই না’

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার কালিটি চা-বাগানে ভুখা মিছিল করেছেন শ্রমিকরা। ছবি: স্টার

মজুরি বাড়ানোর দাবিতে দেশের চা-বাগানগুলোতে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু হয় গত ৭ দিন আগে থেকে। তবে পুরোদমে কর্মবিরতির আজ দ্বিতীয় দিন। এতোদিন ধরে অন্যান্য চা-বাগানে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়ে আসলেও আজ মঙ্গলবার মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার কালিটি চা-বাগানে ভুখা মিছিল করেছেন শ্রমিকরা।

এদিকে, সমস্যা সমাধানে আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে শ্রীমঙ্গল শ্রম দপ্তর কার্যালয়ে বাংলাদেশ শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরীর সঙ্গে চা-শ্রমিক নেতাদের আলোচনা শুরু হয়েছে।

বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সম্পাদক উত্তম কালোয়ার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শ্রমিকরা এমনিতেই সামান্য মজুরি পান। অন্যদিকে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছেই। তাহলে ভাবুন, শ্রমিকদের কী অবস্থা হতে পারে? ঘরে চাল-ডাল-নুন নেই। উপোষ দিন কাটাতে হচ্ছে। এখন তো ২ হালি ডিমের দামও ১২০ টাকা, অথচ আমাদের মজুরি নিয়ে বাগান কর্তৃপক্ষ সময়ক্ষেপণ করছে।'

'আন্দোলনের আজ ষষ্ঠ দিন চলছে। মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে গত ৪ দিন ধরে ২ ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে। কিন্তু মালিকপক্ষ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা ২ বছর আগ থেকে দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু ১৯ মাস পার হয়ে গেলেও মালিকপক্ষ মজুরি বৃদ্ধির ব্যাপারে গড়িমসি করছে। তারা মাত্র ১৪ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে মাত্র ১৪ টাকা দিয়ে শ্রমিকদের আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না', বলেন তিনি।

ছবি: স্টার

বাগান পঞ্চায়েতের অ্যাডহক কমিটির সাবেক সভাপতি বিশ্বজিৎ দাশের অভিযোগ, 'বাগানে দীর্ঘদিন ধরে নানা সমস্যা চলমান। বেশিরভাগ শ্রমিক জরাজীর্ণ কাঁচাঘরে বাস করেন। এসব ঘর মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। আমরা কোনো উপায় না পেয়ে আজ ভুখা মিছিল করেছি।'

মিছিলে অংশ নেওয়া নারী চা-শ্রমিক গৌরি অলমিক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা ৪ দিন ধরে কর্মবিরতি পালন করছি। কিন্তু কেউ আমাদের এসে আশ্বাস দেয়নি। আমরা এত কষ্ট করে কাজ করি, কিন্তু আমাদের ন্যায্য মজুরি দেওয়া হয় না। চাল-ডাল-তেল-নুনসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে। ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার খরচ আছে, অসুখ হলে চিকিৎসা করাতে হয়। সব কিছুর দাম বাড়লেও আমাদের মজুরি বাড়েনি।'

ছবি: স্টার

বাংলাদেশ চা–শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) নিপেন পাল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের শ্রমিকরা কী কঠিন অবস্থায় আছে, সেটি সরকার ও মালিকপক্ষকে অবশ্যই দেখতে হবে। চা–বাগানের শ্রমিকদের খাদ্যের অভাব, ভালো চিকিৎসার অভাব, ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার অভাব। ঘরে ঘরে শ্রমিকদের কষ্ট। আমরা এর একটি ভালো সমাধান চাই। ২০২২ সালের ডিজিটাল বাংলাদেশে আমরা দাসত্বের জীবন কাটাতে চাই না।'

'আমরা এখন শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরীর সঙ্গে আলোচনা করছি। মিটিংয়ের পরেই বিস্তারিত জানা যাবে', যোগ করেন তিনি।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বিভাগীয় শ্রম দপ্তর শ্রীমঙ্গলের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মহাপরিচালক শ্রীমঙ্গলে এসে প্রথমে বাংলাদেশ চা–শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। পরে চা-বাগান মালিকদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হবে।'

Comments

The Daily Star  | English
bad loans rise in Bangladesh 2025

Bad loans hit record Tk 420,335 crore

It rose 131% year-on-year as of March of 2025

8h ago