‘জীবিকা নির্বাহ নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন’

ছবি: স্টার

সারাদেশে যখন নির্বাচনী প্রচারণা চলছে, তখন কুড়িগ্রাম সদরের দিনমজুর আব্দুর রহিম ও আব্দুল আউয়াল ভোট দিতে যাবেন কিনা এখনো ঠিক করতে পারেননি।

দুজনের বয়সই ষাট পেরিয়েছে। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের ধরলা নদীপাড়ের সারডোবে গ্রামে বসবাস করেন তারা। দুজনই দিনমজুর। গ্রামে মাটি কাটার কাজ করে ৪০০ টাকা দিনমজুরি পান।

গ্রামে তিন হাজারের বেশি মানুষের বসবাস। অধিকাংশ মানুষই কৃষি নির্ভর। তবে গ্রামে নির্বাচনের কোনো আমেজ নেই।

শুধু ধরলাপাড়ের সারডোব গ্রামের এমন দৃশ্য তা নয়। কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলায় অধিকাংশ গ্রামীণ এলাকায় নির্বাচন নিয়ে কোনো আমেজ তৈরি হয়নি। শুধু শহর এলাকাগুলোতে নির্বাচনী আমেজ দেখা যাচ্ছে।

দিনমজুর আব্দুর রহিম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি। কিন্তু তিনি ভোটকেন্দ্রে গিয়েছিলেন। ভোটকেন্দ্রে গিয়ে জানতে পারেন তার ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। এ কারণে জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়ার আগ্রহ কমে গেছে তার। তবে তিনি স্থানীয় নির্বাচনে নিজের ভোট নিজে দিয়েছেন।

জানান, এলাকায় কে কে ভোটে দাঁড়িয়েছে তিনি জানেন না।

'কোনদিন যে ভোট হইবে তাও কবার পাবার নাইকছো না। মুই দিবার যাং কিনা সেটারও কোনো ঠিক নাই,' বলেন আব্দুর রহিম।

'গত দুই বার সরকারি ভোট দিবার পাং নাই। এবারও এমন হইবে। ভোটের দিন মুই কাজোত যাইম,' তিনি বলেন।

আব্দুল আউয়ালও আব্দুর রহিমের মতো অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হামাকগুলাক তো আর ভোট দ্যাওয়া নাগে না। ওমরাগুলাই হামার ভোট মারি নিবো। হামারগুলার কষ্ট করি ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার কি দরকার আছে।'

'এইবার যদি ভোট দিবার পরিবেশ ভাল থাকে তাক হইলে কাজ ফ্যালে দিয়া ভোট দিবার যাইম। মুই এ্যালাং জানোং নাই কাই কাই ভোটত দাঁড়াইছে,' বলেন তিনি।

গ্রামের বেশিরভাগ বাসিন্দা বলেন, তাদের গ্রামে এখনো নির্বাচনী আমেজ সৃষ্টি হয়নি। কোন প্রার্থী তাদের গ্রামে আসেননি ভোট চাওয়ার জন্য। অতীতে জাতীয় নির্বাচন এলে তাদের গ্রামে ভোটের একমাস আগে থেকে আমেজ সৃষ্টি হতো। গ্রামের চায়ের দোকানগুলোতে সকাল থেকে গভীর রাত পযর্ন্ত আড্ডা থাকত। প্রার্থী ও তাদের লোকজন ভোটারদের কাছে আসতেন এবং দোয়া ও ভোট চাইতেন। এখন এসব কিছুই হচ্ছে না।

'এবার ভোট দিতে যাই কিনা সে বিষয়ে এখন সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিইনি, বলেন ৬৭ বছরের কৃষক সলিম উদ্দীন।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তাপাড়ের কালমাটি গ্রামের লুৎফর মিয়া (৫৫) বলেন, তারা গেল দুই বার জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে না পারায় ভোট দেওয়ার আগ্রহ কমে গেছে। শুধু তিনি নন গ্রামের সবার মধ্যে ভোট নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই।

ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চল এলাকায় কর্মরত এনজিও কর্মী নাসের উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, চরাঞ্চলে প্রায় ৬৫-৭০ শতাংশ মানুষের মধ্যে ভোট নিয়ে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। সবচেয়ে বেশি নারী ভোটারদের মাধে নির্বাচন নিয়ে অনাগ্রহ দেখা যাচ্ছে। তবে শহর এলাকায় ভোট দেওয়ার আগ্রহী মানুষের সংখ্যা বেশি।

লালমনিরহাটের তিনটি ও কুড়িগ্রামের চারটি আসনে ৪৫ জন প্রার্থী এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। লালমনিরহাটের তিনটি আসনে ভোটার রয়েছেন ১০ লাখ ৬২ হাজার ৯৪ জন আর কুড়িগ্রামের চারটি আসনে ভোটার রয়েছেন ১৭ লাখ ৮২ হাজার ৩২ জন।

Comments

The Daily Star  | English

US to make history either way

Kamala Harris and Donald Trump launched a final frenzied campaign blitz yesterday, hitting must-win Pennsylvania on the last day of a volatile US presidential race that polls say is hurtling towards a photo finish.

9h ago