যুবদল কর্মী শাওন হত্যার ২ বছর পর সাবেক ডিসি-এসপি-এমপিদের আসামি করে আরেক মামলা

নারায়ণগঞ্জে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মিছিলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে যুবদল কর্মী শাওন আহম্মেদ নিহতের ঘটনায় আরেকটি মামলা হয়েছে। ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বরের এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামি করা হয়েছে তৎকালীন জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি) ও সাবেক পাঁচ সংসদ সদস্যসহ (এমপি) ৫২ জনকে।

নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জানান, আজ সোমবার সকালে নিহত শাওনের বড় ভাই মো. মিলন মিয়া বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

এর আগে এ ঘটনায় ২০২২ সালের ২ সেপ্টেম্বর একই থানায় মামলা করেছিলেন মিলন। ওই মামলায় বিএনপির পাঁচ হাজার অজ্ঞাত নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়।

মিলন প্রথম মামলা হওয়ার পর সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছিলেন, 'এই মামলার বিষয়ে আমি বা আমার পরিবারের কেউ কিছু জানি না। পুলিশ আমাদের কাছে একটি সাদা কাগজে সই নিয়েছে।'

আজ দায়ের করা মামলায় সদ্য সাবেক পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেলকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া, তৎকালীন জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ, আওয়ামী লীগের সাবেক তিন সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান, নজরুল ইসলাম বাবু ও গোলাম দস্তগীর গাজী, জাতীয় পার্টির সাবেক দুই সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান ও লিয়াকত হোসেন খোকা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনকেও আসামি করা হয়েছে।

মামলাটিতে সাবেক এসপি ছাড়াও ৩৭ পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যসহ ১০০-১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর দলীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির মিছিলে পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষ শুরু হয়। ওই সময় পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। তৎকালীন ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক মাহফুজুর রহমান কনকের হাতে থাকা 'চাইনিজ রাইফেল' থেকে ছোড়া গুলি যুবদল কর্মী শাওনের শরীরে বিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ওই সংঘর্ষে বিএনপির প্রায় ৩০০ নেতাকর্মী আহত হয়েছিলেন বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়।

এজাহারে আরও বলা হয়েছে, 'নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের পর পুলিশি পাহারায় দাফন করা হয়। জানাজা ও দাফনের সময় নিহতের পরিবার ও দলীয় নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি। তৎকালীন পুলিশ ও সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকায় আমার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের ওপর তৎকালীন প্রশাসনের প্রচণ্ড চাপ ছিল এবং আমরা ছিলাম ভীত-সন্ত্রস্ত। তখন আমিসহ আমার পরিবারের পুরুষ সদস্যদের জিম্মি করে সাদা কাগজে আমার স্বাক্ষর নিয়ে বিএনপির অজ্ঞাতনামা পাঁচ হাজার লোকের নামে মিথ্যা মামলা করতে বাধ্য করা হয়। পরে আদালতে এই মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট দিলে তাতে আমার আপত্তি নেই মর্মে জোরপূর্বক জবানবন্দি দিতেও বাধ্য করা হয়।'

যোগাযোগ করা হলে মামলার বাদী মিলন মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওইদিনের ঘটনা সবাই স্পষ্ট দেখেছে। তারপরও আমাকে দিয়ে মিথ্যা মামলা করানো হয়েছিল। প্রশাসন আমাকে জোর করে সই নিয়েছিল। আমাকে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছিল কয়েকঘণ্টা। সেখান থেকে এসপি অফিসে নিয়ে ১০-১২ ঘণ্টা জিম্মি করে রেখেছিল। এমনকি আমাকে ভাইয়ের মরদেহটাও বুঝিয়ে দেয়নি। পুলিশি পাহারায় মাঝরাতে আমার ভাইয়ের দাফন হয়েছিল। ওই ঘটনার পর থেকে আমরা অনেকদিন পালিয়ে ছিলাম।'

ঘটনার তিনদিন পর ২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নারায়ণগঞ্জের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি হত্যা মামলার পিটিশন দাখিল করেন। যদিও পরবর্তীতে আবেদনটি খারিজ করে দেয় আদালত।

আদালত মামলাটি খারিজ করে দেওয়ার পেছনেও তৎকালীন পুলিশ, প্রশাসন, সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের 'নগ্ন হস্তক্ষেপ' ছিল বলে মামলার এজাহারে অভিযোগ করেছেন মিলন।

Comments

The Daily Star  | English

Postgrad doctors block Shahbagh demanding stipend hike

The blockade resulted in halt of traffic movement, causing huge suffering to commuters

1h ago