শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বন্দুক তাক করে গুলি করেছে: মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে এই ফ্যাসিবাদী সরকার, গণতন্ত্র হরণকারী সরকার গুলি চালিয়ে আমার ভাই শাওনকে হত্যা করেছে। শাওনের এই আত্মত্যাগ এই দেশের গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করবে।'
আজ শুক্রবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নবীনগর এলাকায় নিহত যুবদলকর্মী শাওন মাহমুদ ওরফে আকাশের বাড়িতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেন, 'এই হত্যাকাণ্ড আন্দোলনকে আরও বেগবান করবে। এই ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার, তারা এ দেশের মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে, গণতন্ত্রের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আমাদের ন্যূনতম যে অধিকার, আমরা আমাদের রাজনৈতিক কথা বলব, জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে তার প্রতিবাদ করব, শান্তিপূর্ণভাবে, গণতান্ত্রিকভাবে, সেই অধিকারটুকু তারা কেড়ে নিয়েছে।'
তিনি বলেন, 'পত্র-পত্রিকায় দেখেছেন একটা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি, সেখানে পয়েন্ট ব্ল্যাংক থেকে বন্দুক তাক করে গুলি করেছে। এটা গণতান্ত্রিক স্বাধীন দেশে চলতে পারে না। আপনারা জানেন, শুধু শাওন না, কয়েকদিন আগে ভোলাতেও একইভাবে আমাদের ছাত্রদল নেতা নুরে আলম, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা রহিমকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।'
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, 'সিরাজগঞ্জ, নেত্রকোনা, নড়াইল, কুমিল্লাসহ আরও অসংখ্য জায়গায় তারা একইভাবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা করেছে। শাওনের যে আত্মত্যাগ, তাকে যেভাবে গণতন্ত্রের কথা বলতে গিয়ে, তার দাবি ও অধিকারের কথা বলতে গিয়ে প্রাণ দিতে হয়েছে। ব্যক্তিগত কারণে প্রাণ দেয়নি। আমাদের জন্য, দেশের মানুষের জন্য, গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য প্রাণ দিয়েছে। এ জন্য আমরা অত্যন্ত ঐক্যবদ্ধভাবে, শান্তিপূর্ণভাবে এই গণতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাব।'
তিনি বলেন, 'আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, যাকে আজকে তারা অন্যায়ভাবে বন্দি করে রেখেছে। আমাদের নেতা তারেক রহমানকে সাজা দিয়ে বিদেশে নির্বাসিত করে রেখেছে। আমাদের ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এই নারায়ণগঞ্জে অসংখ্য নেতাকর্মী আছেন, যারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেন, তাদের নামে মিথ্যা মামলা আছে। এই সরকারকে সরিয়ে একটা গণতান্ত্রিক সরকার যদি আমরা আনতে না পারি তাহলে এদেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব বিনষ্ট হয়ে যাবে। হয়তো থাকবে না। তাই আমাদের এখন দায়িত্ব হচ্ছে কেউ কখনোই উশৃঙ্খল হবেন না, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে শান্তিপূর্ণভাবে আমরা আন্দোলন করবো। আমরা কখনোই বিশৃঙ্খলায় বিশ্বাস করি না। আমরা সন্ত্রাসে বিশ্বাস করি না।'
'আমাদের পুলিশ ভাইদেরকে অনুরোধ করব, আপনারা আমাদের শত্রু না। এদেশের স্বাধীনতা রক্ষা করা আপনাদেরও দায়িত্ব। আপনারাদের অনুরোধ করবো আপনারা কোনো অন্যায় হুকুম মানবেন না। এই যে হত্যা হচ্ছে, এই হত্যার একদিন না একদিন জবাবদিহি করতে হবে। দাঁড়াতে হবে কাঠগড়ায়। আমি আপনাদের অনুরোধ করব এভাবে অন্যায়ভাবে মানুষকে পাখির মতো গুলি করে মারবেন না।'
তিনি বলেন, 'শাওনকে নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন। পুলিশের এসপি সাহেব বলেছেন, সে নাকি যুবদলের কর্মী নয়। সে যুবদলের কর্মী। তা না হলেও একটা মানুষকে গুলি করে হত্যা করার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে। একজন শ্রমিক নেতা, একটা শ্রমিক, যে একটা ওয়ার্কশপে কাজ করেন। একটা যুবদল নেতা তাকে আপনারা গুলি করে হত্যা করেছেন।'
আমি আপনাদের অনুরোধ করবো, 'বার বার করে আহবান জানাব, কোনো রকম অন্যায় হুকুম আপনারা মানবেন না। নিরীহ মানুষের ওপর গুলি করবেন না। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি অবশ্যই আপনারা করতে দেবেন।'
তিনি বলেন, 'আমাদের নেতা তারেক রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে আমরা এখানে এসেছি। আমরা তার মা ও ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করব। আমরা আমাদের একাত্মতা ও সহানুভূতি জানানোসহ আমরা তাদের পাশে আছি।'
বক্তব্য শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও বিএনপি নেতারা নিহত শাওনের মা ও ভাইসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন। তাদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন। সবশেষে নিহত শাওনের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া করেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় নারায়ণগঞ্জ শহরের ২ নম্বর রেল গেইট এলাকায় জেলা ও মহানগর বিএনপির উদ্যোগে বিএনপি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রা বের করে। এতে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হলে পুলিশ টিয়ার সেল ও গুলি ছুড়লে যুবদলকর্মী শাওন নিহত হন।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) এস কে ফরহাদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হাসপাতালে আনার আগেই শাওন মারা যান। তার শরীরে গুলির চিহ্ন ছিল।'
নিহত যুবদলকর্মী শাওন মাহমুদ ওরফে আকাশ (২০) সদর উপজেলার নবীনগর এলাকার শাহেদ আলীর ছেলে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দিনগত রাত দেড়টার দিকে পুলিশি পাহারায় সদর উপজেলার নবীনগর শাহওয়ার আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নামাজে জানাজা শেষে নবীনগর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে শাওনের মরদেহ তার বড় ভাই মিলন প্রধান ও মামা মোতাহার হোসেনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান মোল্লা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রাতে নিহতের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।'
শাওনের বড় ভাই মিলন প্রধান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রাত সাড়ে ১২টায় পুলিশ আমাদের কাছে শাওনের মরদেহ হস্তান্তর করে। পরে আমাদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ সঙ্গে আসে। রাত দেড়টায় নামাজে জানাজা শেষে লাশ দাফন করা হয়।'
Comments