সংঘবদ্ধ ধর্ষণ: বিচার না পেয়ে দম্পতির বিষপান, গৃহবধূর মৃত্যু

২৯ মে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ওই গৃহবধূ
dead body
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

গৃহবধূকে প্রায় দুই মাস সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার বিচার না পেয়ে কুড়িগ্রামে এক দম্পতির বিষপানের অভিযোগ উঠেছে। স্বামী বেঁচে ফিরলেও মারা গেছেন ভুক্তভোগী গৃহবধূ। তাদের তিন বছরের একটি সন্তান রয়েছে।

গত ২৪ মে কুড়িগ্রামের চর রাজীবপুর উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে। ২৯ মে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ওই গৃহবধূ।

অভিযোগ আছে পাওনা টাকা ফেরত দিতে না পারায় দিনের পর দিন ওই গৃহবধূকে ধর্ষণ করা হয়, ভয়-ভীতি দেখানো হয় ধর্ষণের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার।

মৃত্যুর আগে এক অডিও রেকর্ডে গৃহবধূ তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা জানিয়ে গেছেন। রেকর্ডের একটি কপি হাতে পেয়েছে দ্য ডেইলি স্টার।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত চার জনের খোঁজ পায়নি পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২৪ মে ওই দম্পতি নিজ বাড়িতে বিষপান করেন। স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে চর রাজীবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। পরে তাদের জামালপুর জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। ২৯ মে দুপুরে গৃহবধূ মারা যান। পরদিন ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ কুড়িগ্রাম জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।

গৃহবধূর স্বামী একজন দিনমজুর। দুই মাস আগে কাজের জন্য এলাকার বাইরে ছিলেন তিনি।

মৃত্যূর আগে গত ২২ মে ভুক্তভোগী গৃহবধূ অডিও রেকর্ডে জানান, বিপদে পড়ে তিনি কিছু টাকা ধার নিয়েছিলেন রাজীবপুর ইউনিয়নের জয়নাল মিয়ার কাছ থেকে। ধারের টাকা শোধ করার জন্য ওই গৃহবধূকে নানাভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছিল। টাকা শোধ করতে না পারায় জয়নাল তাকে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করেন। গোপনে এ ঘটনার ভিডিও ধারণ করা হয়। পরে জয়নাল ও তার তিন সহযোগী শুক্কুর কসাই, আলম কসাই ও সোলেমান মিয়া ধর্ষণের ভিডিও বাইরে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। অভিযুক্ত চার জন প্রায় দুই মাস ধর্ষণ করেন গৃহবধূকে। সংসার ভেঙে যাওয়ার ভয়ে শুরুতে স্বামীকে কিছু জানাতে পারেননি। অসুস্থতা ক্রমশ বাড়তে থাকলে তিনি  স্বামীকে সব জানান।

মৃত্যু থেকে বেঁচে ফেরা গৃহবধূর স্বামী জানান, দিনমজুরের কাজ করার জন্য দুই মাস তিনি টাঙ্গাইলে ছিলেন। ফিরে এসে গত স্ত্রীর কাছে এ ঘটনা জানতে পেরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আনোয়ার হোসেনের কাছে বিচার ও আইনি পরামর্শ চান। কিন্তু ইউপি সদস্য উল্টো তাকে ২০ হাজার টাকা নিয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। পরে ইউপি সদস্য ও অভিযুক্তরা একসঙ্গে হয়ে তাকে গ্রামছাড়ার হুমকি দিতে থাকেন।

'আমরা বিচার পাইনি। নিরুপায় হয়ে আমি ও আমার স্ত্রী একসাথে বিষপানে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিই,' বলেন তিনি।

স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায় ভুক্তভোগী গৃহবধূ ৪০ হাজার টাকার মতো ধার করেছিলেন। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু জানা যায়নি।

অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক নয়। তার সঙ্গে ওই পরিবারের কারও দেখা হয়নি। স্বামী-স্ত্রী বিষপান করার আগে তিনি বিষয়টি জানতেন না। পরে এলাকাবাসীর কাছ থেকে তিনি ঘটনা শুনেছেন।

এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত জয়নাল মিয়ার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কয়েকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ ঘটনার পর জয়নাল ও তার তিন সহযোগী এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে চর রাজীবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিকুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গৃহবধূর মৃত্যুর ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। তবে অডিও রেকর্ডে তিনি যে অভিযোগ তুলেছেন সে ধরনের কোনো অভিযোগ থানায় আসেনি।

'আমরা ঘটনাটিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এখনো পাওয়া যায়নি। মৃত্যুর কারণ উদঘাটন করা হবে খুব শিগগিরই। এ ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে,' বলেন তিনি।

Comments