তদন্ত কর্মকর্তার ‘গাফিলতি’, প্রবাসী হত্যা মামলার ১২ আসামি খালাস

চট্টগ্রাম আদালত। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় একটি হত্যা মামলার ১২ আসামির সবাইকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। 

মামলার এমন পরিণতির জন্য তদন্ত কর্মকর্তাকে (আইও) দায়ী করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

পাশাপাশি অভিযোগ প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর ব্যর্থতার কথাও আদালতের পর্যবেক্ষণে এসেছে। 

আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ হালিম উল্লাহ চৌধুরী এ নির্দেশ ও পর্যবেক্ষণ দেন। 

ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অশোক কুমার দাশ দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

খালাস আসামিরা হলেন-আজগর আলী (৫২), টিপু (২৮), মামুন (৩৩), আলী আকবর (৪৩), মাহবুবুল আলম (৩৩), সাগর খান (২২), মোমিন (২০), আলমগীর (৪০), আয়ুব আলী খান (৫৪), মোহসিনুল হক (৫৫), আবু তালেব (৩৮), আবু বক্কর (৫১) ও নেজাম উদ্দিন নাজু (১৭)। 

আসামিদের মধ্যে নেজাম উদ্দিন ছাড়া বাকি ১১ জন আজ আদালতে উপস্থিত ছিলেন বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।

মামলার এজাহার অনুযায়ী, ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর রাঙ্গুনিয়ার রাজানগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এম আবু তৈয়ব তালুকদার সদস্য নির্বাচিত হন। 

ওই নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী আজগর আলী ও তার সমর্থকদের সঙ্গে তৈয়বের বিরোধ হয়। এর জেরে ২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তৈয়বের বড় ভাই ইউসুফ আলী বিদেশ থেকে ফিরলে তার ওপর হামলা হয়।

আহত ইউসুফ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ দিন পর ১২ ফেব্রুয়ারি তিনি মারা যান। এ ঘটনায় ইউসুফের স্ত্রী শাহিনুর আক্তার বাদী হয়ে আজগর আলীসহ ১২ জনের নামে মামলা করেন।

মামলার তদন্ত শেষে রাঙ্গুনিয়া থানার তৎকালীন পরিদর্শক (তদন্ত) খান নুরুল ইসলাম ২০২২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

পাবলিক প্রসিকিউটর অশোক কুমার দাশ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মামলার ২৩ সাক্ষীর মধ্যে ১৬ জনের সাক্ষী নেন আদালত। সাক্ষীদের মধ্যে পুলিশ আছেন, এছাড়া বাকিরা পরস্পর আত্মীয়।'

তিনি বলেন, 'গত ২৯ মে যুক্তিতর্ক শেষ হয় এবং আজ রায় ঘোষণার তারিখ ছিল। কিন্তু আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় সবাইকে বেকসুর খালাস দেন আদালত।'

তিনি আরও বলেন, 'পুলিশের জব্দ আলামত ও তদন্তের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যার কথা উল্লেখ করে আদালত সবাইকে খালাস দিয়েছেন। আমরা ১৬ জন সাক্ষী উপস্থাপন করেছিলাম। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীরা সবাই নিহতের পরিবারের। তদন্ত কর্মকর্তা ঠিকঠাক আলামত জব্দ করতে পারেননি। তার তদন্তে গাফিলতি ছিল। এছাড়া যে মোটরসাইকেলের কথা বলা হয়েছে সাক্ষীদের ভাষ্যে তিনি সেটিও জব্দ করতে পারেননি।'

'আদালত তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন,' বলেন পিপি অশোক কুমার দাশ।

আসামিপক্ষের আইনজীবী উজ্জ্বল সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তদন্ত কর্মকর্তা যে জব্দ তালিকা আদালতে উপস্থাপন করেছেন, এর সঙ্গে তার বক্তব্যের কোনো মিল ছিল না। ঘটনায় রক্তের দাগ ছিল না কারও কাপড়ে। ঘটনাস্থলে হাজির হওয়া এবং জব্দ তালিকা তৈরির সময়ে গড়মিল পাওয়া যায়। আমরা আদালতে সেটা নজরে এনেছি।'

তিনি আরও বলেন, 'আদালত তদন্ত কর্মকর্তাকে পুলিশ বিভাগের কলঙ্ক বলেছেন। বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।'

আজ আদালতে রায় ঘোষণার পর আদালতে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহতের স্ত্রী ও মামলার বাদী শাহিনুর আক্তার।

Comments

The Daily Star  | English

ACC to investigate irregularities in 11th National Election

A five-member team has been formed to investigate these allegations

33m ago