মেয়েকে খুন করে জামাইয়ের নামে মামলা, ৭ বছর পর ধরা

নিজ মেয়েকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার আ. কুদ্দুছ খাঁ। ছবি: সংগৃহীত

২০১৫ সালে নিজ হাতে মেয়েকে খুন করেছিলেন আ. কুদ্দুছ খাঁ (৫৮)। এরপর মেয়ের জামাইয়ের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা করে বার বার নারাজি দেন তিনি। পরে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করে মেয়েকে হত্যার অভিযোগেও মামলা করেন।

শেষ পর্যন্ত নিজ মেয়েকে খুনের দায়ে আ. কুদ্দুছ খাঁ নিজেই ফেঁসে গেছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের জালে। তার বাড়ি টাঙ্গাইলে। খুনের ঘটনা ঘটেছে জয়পুরহাটে। ধরা পড়েছেন ঢাকা জেলা পিবিআইয়ের তদন্তাধীন মামলায়।

আজ রোববার দুপুরে পিবিআই হেডকোয়ার্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার। তার ভাষ্য, গ্রেপ্তার কুদ্দুছ খাঁ মেয়েকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।

গত শুক্রবার আদালতে ১৬৪ ধারার জবানবন্দীতে এই রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের বিবরণ তুলে ধরেন কুদ্দুছ খাঁ।

বনজ কুমার জানান, এই হত্যাকাণ্ডের পেক্ষাপট তৈরি হয় ২০১২ সালে। সে বছর কুদ্দুছ খাঁর মেয়ে পারুল আক্তার টাঙ্গাইলের কালিহাতির নাছির উদ্দিন ওরফে বাবুকে (১৯) ভালোবেসে ঢাকায় পালিয়ে এসে বিয়ে করেন। এ ঘটনায় কুদ্দুছ খাঁ ২০১২ সালে কালিহাতি থানায় জিডি করেছিলেন।

বিয়ের বিষয়টি ২ পরিবার মেনে না নেওয়ায় পারুল ও বাবু ঢাকার আশুলিয়ার জামগড়ায় বসবাস শুরু করেন। চাকরি নেন একটি তৈরি পোশাক কারখানায়। কিছুদিনের মধ্যে পারিবারিক অশান্তি শুরু হলে পারুল তার বাবাকে ফোন করে বিষয়টি জানান। বাবা কুদ্দুছ খাঁ মেয়ের ভবিষ্যত নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলেন। মেয়ে পালিয়ে বিয়ে করায় এক ধরনের অপমান বোধ ও প্রচণ্ড রাগও ছিল তার। তিনি এক পর্যায়ে মেয়েকে ভালো ছেলে দেখে অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার কথাও বলেন।

পিবিআই প্রধান জানান, ২০১৫ সালের ১৮ জুলাই পারুলের স্বামী নাছির তার নানীকে দেখতে যান। সেই সুযোগে পারুল ১৯ জুলাই বাবাকে ফোন করে টাঙ্গাইলে যান। এ দিনেই নাছির কুদ্দুছ খাঁর বিরুদ্ধে তার স্ত্রীকে বাবার বাড়ি পালিয়ে যেতে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে আশুলিয়া থানায় জিডি করেন।

সেদিন কুদ্দুছ খাঁ পারুলকে নিজের বাড়িতে না নিয়ে প্রথমে ভূঙাপুরে বন্ধু মোকাদ্দেছ মণ্ডলের বাড়িতে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাকে নিয়ে যান জয়পুরহাটের পাঁচবিবি এলাকায় একটি নদীর পাশে। সেখানে রাতের অন্ধকারে পারুলকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে বন্ধু মোকাদ্দেছের সহযোগিতায় গলায় গামছা পেঁছিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন কুদ্দুছ খাঁ।

বনজ কুমার বলেন, 'আসামির ১৬৪ ধারায় দেওয়া বর্ণনা অনুসারে তারা ৩ জন রাতের অন্ধকারে নদীর পাড় ধরে ধরে হাঁটতে থাকেন। এক পর্যায়ে কুদ্দুছ খাঁ মেয়েকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। এরপর মেয়ের ওড়না ২ টুকরা করে এর এক টুকরা দিয়ে তার হাত বাঁধেন। মোকাদ্দেছ আরেক টুকরা দিয়ে পারুলের পা বেঁধে ফেলেন। এ অবস্থায় কুদ্দুছ খাঁ গলায় গামছা পেঁচিয়ে মেয়েকে হত্যা করেন। পরে তার ভিকটিমের লাশ নদীতে ফেলে টাঙ্গাইলে ফিরে আসেন।'

বনজ কুমার জানান, ওই বছরের ৪ আগস্ট পারুলের স্বামী নাছির উদ্দিনের বিরুদ্ধে টাঙ্গাইলের আদালতে মামলা করেন কুদ্দুছ খাঁ। মামলার পর কালিহাতি থানা পুলিশ তদন্ত করে পারুলের প্রেম করে বিয়ে করার সত্যতা পায়। কিন্তু ঘটনাস্থল তাদের এখতিয়ার বহির্ভূত বলে প্রতিবেদন দাখিল করে।

এ অবস্থায় মামলার বাদী কুদ্দুছ খাঁর বারবার নারাজির পরিপ্রেক্ষিতে টাঙ্গাইল সিআইডি ও টাঙ্গাইল পিবিআই তদন্ত করে একই প্রতিবেদন দেয়। শেষ পর্যন্ত আদালত বিচারিক তদন্ত করে প্রতিবেদনে বলেন, বাদী ঢাকার আদালতে মামলা করলে প্রতিকার পেতে পারেন।

এরপর গত বছরের ২৭ নভেম্বর কুদ্দুছ খাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে পারুলকে যৌতুকের জন্য মারপিট করে হত্যার অভিযোগে আরেকটি মামলার আবেদন করেন।

৩০ নভেম্বর আদালত আশুলিয়া থানাকে মামলা গ্রহণ এবং ঢাকা জেলা পিবিআইকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেন। আশুলিয়া থানায় ১১ ডিসেম্বর মামলা দায়ের করা হলে ঢাকা জেলা পিবিআই তদন্ত শুরু করে।

বনজ কুমার জানান, এই মামলার পর পিবিআই পারুলের স্বামী নাছির উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়। ডাকা হয় বাবা কুদ্দুছ খাঁকে। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদে তিনি অসামঞ্জস্যপূর্ণ তথ্য দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে নিজ হাতে মেয়েকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।

এ ঘটনায় কুদ্দুছ খাঁর বন্ধু ও এই হত্যাকাণ্ডে তার সহযোগী মোকাদ্দেছকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান পিবিআই প্রধান।

Comments

The Daily Star  | English
US wants Bangladesh trade plan,

Bangladesh to push for tariff cuts in USTR talks in Washington today

Bangladesh has been engaged in negotiations to sign a tariff agreement with the US

51m ago