‘অপহরণকারীদের কথামতো টাকা দিলে কম নির্যাতন করা হতো’

ইরাকে অপহরণের পর বাংলাদেশে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় ৮ জনকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে পিবিআই। ছবি: স্টার

ঢাকার নবাবগঞ্জের মোসলেম মোল্লা (৩০) জীবিকার তাগিদে ২০১৬ সালে ইরাকে যান। ২০২১ সালে সেখানে সেলিম মিয়া নামের একজনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ভালো বেতনে কাজ দেওয়ার কথা বলে মোসলেমকে একদল অপহরণকারীর হাতে তুলে দেন সেলিম।

অপহরণকারীরা মোসলেমকে একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে তার কাছ থেকে ২ হাজার মার্কিন ডলার ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন। তার ওপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে ভিডিও ধারণ করা হয়। সেই ভিডিও মোসলেম পরিবারের কাছে পাঠিয়ে সাত লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।

মোসলেমের মা খতেজা বেগম বাংলাদেশে অপহরণকারীর পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়দের মোবাইলে ছয় লাখ টাকা দেন। কিন্তু মোসলেমকে ছেড়ে না দিয়ে আরও তিন লাখ টাকা দাবি করে অপহরণকারীরা।

এরপর খাতেজা বেগম বাদী হয়ে নবাবগঞ্জ থানায় মামলা করেন।

মামলাটি তদন্ত করার সময়, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি আগস্ট মাসের মধ্যে বরিশাল, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মাগুরা এবং খুলনা থেকে অপহরণকারীদের আট সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন আলী হোসেন (৪৯), মো. শামীম (২৫), শিরিন সুলতানা (৩৫), মোহাম্মদ ঘরামী (৫১), রবিউল ঘরামী (২৪), শাহিদা বেগম (৫২), শাহনাজ আক্তার লিপি (৩৮), মো. আকবর সরদার (৫৫)।

ঢাকায় পিবিআই সদর দপ্তরে আজ এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার কুদরত-ই-খুদা বলেন, মোসলেমকে অপহরণের পর অপহরণকারীরা ইমো অ্যাপের মাধ্যমে মোসলেমের নির্যাতনের দৃশ্য তার মাকে দেখায়। তাদের কথা অনুযায়ী মোসলেমের মা ১২টি বিকাশ নম্বরে ২৬টি লেনদেনের মাধ্যমে মোট ছয় লাখ টাকা স্থানান্তর করেন।

ইরাকে থাকা অপহরণকারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে বলেও জানান এই পিবিআই কর্মকর্তা। তারা হলেন আনোয়ার, শাহনেওয়াজ, রুহুল আমিন, মনির, হাসিবুর ও সাব্বির।

তিনি বলেন, আপহরণকারীদের পরিবারের সদস্যরা মুক্তিপণ হিসেবে আদায় করা টাকা তাদের ব্যক্তিগত বিকাশ নম্বর থেকে তুলে নেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত মোসলেম বলেন, 'অপহরণকারীরা আমাকে একটি বাড়িতে আটকে রেখেছিল। আমাকে যে ঘরে রাখা হয়েছিল সেখানে আরও তিন জন ছিলেন। মুক্তিপণ আদায়ের জন্য তাদেরকেও অপহরণ করে সেখানে আনা হয়েছিল। সেখানে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখে সবার ওপর নির্যাতন চালানো হতো।

তিনি আরও জানান, অপরহণকারীদের কথা মতো যারা টাকা দিত তাদের ওপর কম নির্যাতন চালানো হতো। শিকল খুলে একদিন তিনি পালাতে সক্ষম হন। পরে তিনি দেশে ফিরে আসেন।

পিবিআই কর্মকর্তা জানান, শাহনেওয়াজ অপহরণকারী চক্রের মূল হোতা। ওই অপরহণকারী চক্রের কয়েকজন আসামির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত আটজনের মধ্যে ছয়জন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh bank reform plan 2025

Inside the 3-year plan to fix banks

Bangladesh has committed to a sweeping overhaul of its troubled financial sector, outlining a detailed three-year roadmap as part of its latest agreement with the International Monetary Fund.

10h ago