পাহাড়ি পতিত জমিতে আশা জাগাচ্ছে কাসাভা

সিলেট, কাসাভা, কুলাউড়া,
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় ২০০ বিঘা জমিতে কাসাভা চাষ হচ্ছে। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

সিলেট অঞ্চলের পাহাড়ি পতিত জমিতে আশা জাগাচ্ছে কাসাভা। ইতোমধ্যে এ অঞ্চলের কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে কাসাভা চাষ শুরু করছেন। কাসাভা চাষ ধীরে ধীরে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক ল্যান্ডস্কেপ পরিবর্তন করছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।

কাসাভা মূলত একধরনের শিকড়জাত আলু। এটি পাহাড়ি, অনাবাদী এবং অপেক্ষাকৃত কম উর্বর জমিতে চাষ হয়। আমাদের দেশে এটি 'শিমুল আলু' নামেও পরিচিত। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও পোশাকশিল্পে ব্যবহৃত স্টার্চের অন্যতম উৎস কাসাভা। অনেক দেশের মানুষের অন্যতম প্রধান খাবার এই কাসাভা। এতে আছে স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট ও ভিটামিন সি। এছাড়া কাসাভা গাছের পাতা জৈব সার বা পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কান্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় ২০০ বিঘা জমিতে কাসাভা চাষ হচ্ছে। কাসাভা চাষ ধীরে ধীরে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক ল্যান্ডস্কেপ পরিবর্তন করছে। প্রতি বছর ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাসাভা তোলা হয়। বীজ বপনের প্রায় ৫ থেকে ৬ মাস পর কাসাভা তোলা যায়। প্রতি বিঘায় ৭ হাজার কেজি পর্যন্ত কাসাভা পাওয়া যায়।

কুলাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল মোমিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই অঞ্চলে কাসাভা চাষ শুরু হওয়ার পর থেকে আমরা সব ধরনের সহায়তা দিয়ে আসছি। দেশে ৩.৫ লাখ টন কাসাভার চাহিদা থাকলেও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয় মাত্র ২ শতাংশ বা প্রায় ৬ হাজার টন। তাই চাষ বাড়ানো এবং আমদানি নির্ভরতা কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।'

পাহাড়ি পতিত জমিতে আশা জাগাচ্ছে কাসাভা
কাসাভা চাষ ধীরে ধীরে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক ল্যান্ডস্কেপ পরিবর্তন করছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

তিনি আরও বলেন, 'গত বছর সিলেট বিভাগে মোট ৬৭৫ একর জমিতে ২ হাজার টন কাসাভা চাষ হয়েছিল। এ বছর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৯০০ একর জমিতে কাসাভা চাষ করা।'

কুলাউড়ার জয়চন্ডী গ্রামের কৃষক পলিট ভর জানান, 'এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া উপযোগী হওয়ায় ফলন ভালো হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় আমি ৩০ বিঘা জমিতে কাসাভা চাষ করেছি। এটি চাষের খরচ খুবই কম। কারণ বীজ বপনের পর অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন হয় না।'

একই উপজেলার ঝুমকি ঝালাই গ্রামের মো. আব্দুল হামিদ বলেন, 'আমি একসময় কাসাভাকে বন্য গাছ মনে করতাম। তবে, কৃষি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এর উপকারিতা জানার পর চাষ শুরু করি।'

স্থানীয় বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম বলেন, 'আগে কাজ পেতে আমার কষ্ট হত, কিন্তু এখন কাসাভা চাষের কারণে সহজেই কাজ পাচ্ছি।'

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, '২০১৪ সাল থেকে প্রাণ কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে কাসাভা চাষে কৃষকদের উৎসাহ দিয়ে আসছে। প্রাণ চাষিদের কাসাভা চাষের প্রশিক্ষণ, আর্থিক প্রণোদনা, কৃষি উপকরণ সহায়তা এবং স্বল্পমূল্যে বীজ দিয়ে কাসাভা চাষে সহায়তা করছে। ফলে, পাহাড়ি অনাবাদী জমিতে কাসাভা চাষে আগ্রহ বাড়ছে। প্রাণের পক্ষ থেকে দেশে কাসাভা চাষের উদ্যোগ নেওয়ার পর এ পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার কৃষক চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।'

পাহাড়ি পতিত জমিতে আশা জাগাচ্ছে কাসাভা
বীজ বপনের প্রায় ৫ থেকে ৬ মাস পর কাসাভা তোলা যায়। ছবি: মিনটু দেশোয়ারা/স্টার

তিনি আরও বলেন, 'মৌলভীবাজার ছাড়াও এ বছর রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, সিলেট, হবিগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুর, কুমিল্লা ও ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলায় প্রাণের সহায়তায় কাসাভা চাষ হয়েছে। এ বছর ৬ হাজার বিঘা থেকে জমি থেকে অন্তত ২০ হাজার টন ফসল পাওয়ার আশা করটি আমরা। প্রাণ কাসাভা সংগ্রহের পর হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে প্রসেস করে স্টার্চ তৈরি করে। এই স্টার্চ থেকে গ্লুকোজ, বার্লি, সুজি, রুটি, নুডলস, ক্র্যাকার্স, কেক, পাউরুটি, বিস্কুট, পাঁপড়, চিপসসহ নানাবিধ খাদ্য তৈরি করা যায়। বস্ত্র ও ওষুধ শিল্পে ব্যাপকভাবে কাসাভার স্টার্চ ব্যবহৃত হয়।'

কান্দাল ক্রপ ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের পরিচালক মোখলেছুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মানুষের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে সুষম ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে জটিল রোগের চিকিৎসার পাশাপাশি আয়ের ক্ষেত্রও বাড়বে। সরকার দেশে কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের খাদ্য উৎপাদনে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। কিন্তু, বাংলাদেশের কাসাভা উৎপাদনের মাত্র ২ শতাংশ স্টার্চ পাউডারের চাহিদা মেটায়। বাকি পাউডার আমদানিতে বছরে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। কাসাভার আবাদ বাড়লে সরকারের এই আমদানি খরচ অনেক কমে আসবে।'

Comments

The Daily Star  | English
US dollar price rises

Explanations sought from 13 banks for higher dollar rate

BB issued letters on Dec 19 and the deadline for explanation ends today

2h ago