ধানে ব্লাস্ট রোগ: ক্ষতিতে হাওরের কৃষক

কাউয়াদিঘি ও হাকালুকি হাওর এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়—খেতে পাকা ধান বাতাসে দুলছে। কিন্তু ব্রি২৮ চাষ করা অধিকাংশ কৃষকেরই এই ধান কাটার আগ্রহ নেই। কেউ কেউ গবাদি পশুর খাবারের জন্য ধান কাটছেন। আবার কেউ জমি পরিষ্কার করার জন্য ধান কেটে খালে ভাসিয়ে দিচ্ছেন।

হাওর অঞ্চলে বোরো ধান কাটা ও মাড়াই উৎসব হওয়ার কথা থাকলেও ধানের ব্লাস্ট রোগে উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন অনেক কৃষক। বোরো জাত ব্রি২৮ যেমন ব্লাস্টে ক্ষতিগ্রস্ত, তেমনি ব্রি২৯ ও ৮৮ এরও কিছু ক্ষতি হয়েছে।

মৌলভীবাজার কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ৬০ হাজার ৫৭ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ব্রি২৮ জাতের ধান লাগানো হয়েছে ৯ হাজার হেক্টর জমিতে।

শ্রীমঙ্গল উপজেলার নোয়াগাঁও, ইছবপুর, রাজাপুর, সিরাজনগর, লামুয়া, উত্তর লামুয়া ও কালাপুর গ্রামে ব্রি২৮ ধানে ব্লাস্ট রোগ দেখা গেছে।

কাউয়াদিঘি ও হাকালুকি হাওর এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়—খেতে পাকা ধান বাতাসে দুলছে। কিন্তু ব্রি২৮ চাষ করা অধিকাংশ কৃষকেরই এই ধান কাটার আগ্রহ নেই। কেউ কেউ গবাদি পশুর খাবারের জন্য ধান কাটছেন। আবার কেউ জমি পরিষ্কার করার জন্য ধান কেটে খালে ভাসিয়ে দিচ্ছেন।

কুলাউড়া উপজেলার হাকালুকি হাওরের পালেরমুড়া এলাকার কৃষক অনিল দাস দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রায় ১০৫ শতক জমিতে ধান লাগিয়েছি। সব ধান ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত।'

ধানে ব্লাস্ট রোগ
ব্রি২৮ চাষ করা অধিকাংশ কৃষকেরই এই ধান কাটার আগ্রহ নেই। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

'হাকালুকি হাওরে ব্লাস্ট রোগে তার ব্রি২৮ ধান ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত ও ৬০ শতক জমির ৯৫ শতাংশ ধান নষ্ট হয়েছে,' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'এই ধান উচ্চ ফলনশীল। এর চাল ছোট হয়। তাই আমরা এটা রোপন করেছি।'

তিনি আরও বলেন, 'ধান লাগানোর পর ফলন ভালো হয়েছিল। ধান কাটার প্রস্তুতিও নিয়েছিলাম। সম্প্রতি ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়। ঋণ নিয়ে ধান চাষ করায় চরম দুশ্চিন্তায় আছি।'

এ ঘটনার জেরে হাইল হাওড় এলাকার কৃষকরা গত ৮ এপ্রিল শ্রীমঙ্গলে সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে অংশ নেন উত্তর লামুয়া গ্রামের কৃষক ওমর ফারুক, রাজাপুর গ্রামের কৃষক কাওছার মিয়া, নোয়াগাঁও গ্রামের এরশাদ মিয়া, উত্তর লামুয়া গ্রামের কৃষক তাহির মিয়া প্রমুখ।

লামুয়া গ্রামের শুভেতারা বেগম ও নোয়াগাঁও গ্রামের কৃষক অঞ্জু কর গণমাধ্যমকে জানান, হাইল হাওরের অধিকাংশ মানুষের জীবিকার প্রধান মাধ্যম বোরো ফসল। কেউ আউশ ও আমন চাষ করলেও এর পরিমাণ খুবই কম। প্রতি বছরের বোরো ধানই পরিবারের খাবারের একমাত্র উৎস। কিন্তু এবার হাওরাঞ্চলের প্রায় সব ধান ব্লাস্ট রোগে নষ্ট হয়ে গেছে।

তারা আগামী মৌসুমে চাষাবাদের জন্য আউশ, আমন ও বোরো মৌসুমে বীজ, সারসহ অন্যান্য সহায়তা দেওয়ার দাবি জানান।

তবে কৃষিবিভাগ বলছে কৃষকদের ব্রি২৮ রোপণে নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল। তারপরও চাষিরা এই ধান রোপণ করেছেন।

ধানে ব্লাস্ট রোগ
হাকালুকি হাওরের পালেরমুড়া এলাকায় ব্রি২৮ ধান ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মহিউদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্রি২৮ অনেক পুরোনো জাত। চাষিদের এই ধান আবাদে নিরুৎসাহিত করি। এর পরিবর্তে ব্রি৮৮ বা ব্রি৮৯ চাষের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।'

'তবুও কৃষকরা ১১ হাজার ৪৫১ হেক্টরের মধ্যে ২ হাজার ৬৫১ হেক্টর জমিতে ব্রি২৮ রোপণ করেছেন' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'সেখান থেকে কিছু ধান রোগাক্রান্ত হয়েছে। আমরা ২ রাউন্ড ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে বলেছি। অনেকে তা করেননি। আবার বৃষ্টির কারণে অনেকের ওষুধ কার্যকর হয়নি।'

'ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা হচ্ছে। তাদের কীভাবে সহায়তা বা প্রণোদনা দেওয়া যায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে,' যোগ করেন তিনি।

মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ধানের ব্লাস্ট ছত্রাকজনিত ক্ষতিকর রোগ। বোরো ও আমন মৌসুমে সাধারণত এ রোগ হয়ে থাকে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা হবে। সরকারি বরাদ্দ এলে তাদের সহযোগিতা করা হবে।'

তিনি বলেন, 'মোট ৭০ হেক্টরে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। এর বিস্তার বাড়তে পারে। ব্লাস্ট রোগ দিনে গরম ও রাতে ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে হয়ে থাকে।'

তিনি আরও বলেন, 'যে কৃষকদের ধান পুরোপুরি নষ্ট হয়েছে তাদের হিসাব রাখছি। কিন্তু যে কৃষকের ক্ষতি হয়েছে ৩০ শতাংশ বা ৪০ শতাংশ তাদেরটা রাখা হয়নি। তবে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়ার আশঙ্কা আছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Political parties want road map to polls

Leaders of major political parties yesterday asked Chief Adviser Professor Muhammad Yunus for a road map to the reforms and the next general election.

59m ago