সুবর্ণচরে কৃষকের মুখে হাসি ফুটিয়েছে খেসারি

নোয়াখালী, সুবর্ণচর, খেসারি, কলাই,
খেসারির সবুজ মাঠ। ছবি: আনোয়ারুল হায়দার/স্টার

নোয়াখালীর শস্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত সুবর্ণচরে চলতি বছর খেসারি ডালের ব্যাপক ফলন হয়েছে। কৃষকরা আশা করছেন, ভালো ফলনের সঙ্গে তারা ভালো দামও পাবেন।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খেসারি চাষে বীজ ও অল্প সার ছাড়া তেমন কোনো খরচ নেই। তাই তারা খেসারি কলাই চাষে ঝুঁকছেন।

সুবর্ণচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর উপজেলার ১০ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে খেসারি চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ২৬৬ মেট্রিক টন। গত বছর এ উপজেলায় খেসারি উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ৩ হাজার মেট্রিক টন।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে খেসারি চাষ হয়েছে। ২০২১-২২ সালে ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে খেসারি চাষ হয়েছিল।

এবার চর জব্বার ইউনিয়নে ৪৩০ হেক্টর, চারবাটা ইউনিয়নে ৭৮০, চর ক্লার্কে ২৭০, চর ওয়াপদায় ৪৪০, চর জুবলিতে ৫৯০, চর পানা উল্যায় ২৭০, পূর্ব চরবাটায় ৩৮০ ও মোহাম্মদপুর ইউনিয়নে ১ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমিতে খেসারির চাষ হয়েছে।

নোয়াখালী, সুবর্ণচর, খেসারি, কলাই,
খেসারি ডাল চাষে বীজ ও অল্প সার ছাড়া তেমন কোনো খরচ নেই। তাই তারা খেসারি চাষে ঝুঁকছেন। ছবি: আনোয়ারুল হায়দার/স্টার

কৃষি বিভাগ জানায়, গত বছর প্রতি মণ (১ মেট্রিক টন সমান ২৫ মণ) খেসারির দাম ছিল ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা।

চলতি বছর আরও বেশি দাম পাওয়ার আশা করমছেন কৃষকরা।

চরওয়াপদা ইউনিয়নের চর মোখলেছ গ্রামের কৃষক আমির হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতি বছর বর্ষায় মেঘনা নদীর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় পুরো উপজেলার কৃষিজমি। এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পলি জমে জমি ব্যাপক উর্বর হয়। ওই জমিতে অল্প খরচেই খেসারি চাষ করা যায়।'

তিনি বলেন, 'বীজ বপনের পর কোনো খরচ নেই। খেসারি খেতের তেমন পরিচর্যাও করতে হয় না। বীজ বপনের সাড়ে ৪ কিংবা ৫ মাসের মধ্যে ফলন আসে। শীতে খেসারির শাক (স্থানীয় ভাষায় কলই শাক) ব্যাপক জনপ্রিয়। সাধারণত পৌষ-মাঘ মাসে খেসারি বা কলই শাক ভালো দামে বিক্রি হয়।'

এ ছাড়াও, রমজানে পিঁয়াজু-চপ তৈরিতে খেসারি ডালের ব্যাপক চাহিদা থাকে। এসব কারণে তার মতো অনেক কৃষক খেসারি চাষে বেশি মনযোগী হয়েছেন বলে জানান তিনি।

নোয়াখালী, সুবর্ণচর, খেসারি, কলাই,
সুবর্ণচরে চলতি বছর খেসারি ডালের ব্যাপক ফলন হয়েছে। ছবি: আনোয়ারুল হায়দার/স্টার

মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের কৃষক মোছলেহ উদ্দিন ও আলা উদ্দিন ২ ভাই খেসারি চাষ করেছেন। তারা জানান, গত ২ বছরও তারা খেসারি চাষ করেছিলেন। তারা কলই শাক বিক্রি করেও বাড়তি আয় করেছেন।

তারা আরও জানান, শুকনো মৌসুমে গো-খাদ্যের ব্যাপক সংকট দেখা দেয়। তখন খেসারি গাছ গো-খাদ্য হিসেবেও ভালো দামে বিক্রি করা যায়।

কৃষি কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ বলেন, 'চলতি বছর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে গত বছরের তুলনায় ১ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে খেসারি চাষ হচ্ছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাও বেড়েছে ১ হাজার ২০০ মেট্রিক টনের বেশি।'

তিনি আরও বলেন, '২৫ মণ ১ মেট্রিক টন ধরে, প্রতি মণ খেসারির বর্তমান পাইকারি বাজার মূল্য ২ হাজার টাকা। সেই হিসাবে এ বছর ২১ কোটি ৩৩ লাখ টাকার খেসারি উৎপাদনের সম্ভাবনা আছে এ উপজেলায়।'

Comments