নোয়াখালী: ৫ দিনের বৃষ্টিতে ভেসে গেল কৃষকের স্বপ্ন

টানা পাঁচ দিনের বৃষ্টিতে নোয়াখালী জেলায় সাত হাজার ৩১৬ হেক্টর ফসলি জমির আউশধান, আমন ধানের বীজতলা ও শাক-সবজির খেত তলিয়ে গেছে। এতে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার সদর, সুবর্ণচর, কবিরহাট, কোম্পানিগঞ্জ, সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ি ও চাটখিল উপজেলায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির পানি ধীরগতিতে নামার কারণে এই সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করছে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
নোয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় জানায়, বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত সাত হাজার ৩১৬ হেক্টর জমির মধ্যে আউশ ধান তিন হাজার ৫৯২ হেক্টর, আমন ধানের বীজতলা (ধানের চারা) এক হাজার ১৭৩ হেক্টর, গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজি এক হাজার ৮০০ হেক্টর, শরৎকালীন শাক-সবজি ৭২৫ হেক্টর, গ্রীষ্মকালীন টমেটো এক হেক্টর, অসময়ের তরমুজ দুই হেক্টর, মরিচ ১৬ হেক্টর ও পাট দুই হেক্টরসহ অন্যান্য ফসল রয়েছে।
সদর উপজেলার ফাজিলপুর গ্রামের কৃষক আব্দুস শহীদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তিন একর জমিতে আউশ ধান চাষ করেছি। ওই জমিতে ৩০ কেজি ধানের বীজতলাও করেছিলাম। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সব পানিতে তলিয়ে গেছে।'
'আশা ছিল, এবারের আউশ ধান ঘরে তুলে পরিবারের খাবারের জন্য রেখে বাকি ধান বিক্রি করে ঋণ শোধ করব। তা আর হলো কই। সর্বনাশা বৃষ্টি সব স্বপ্ন ভাসিয়ে নিলো। আমি এখন দিশেহারা', বলেন তিনি।
এলাকার অপর কয়েকজন কৃষক আব্দুর রহিম, আবুল কাশেম, আহাম্মেদ করিম ও নুরুজ্জামানের মুখেও একই ধরনের আক্ষেপ শোনা গেল।
মুকিমপুর গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম জানান, তার দেড় একর জমির আউশ ধান, বস্তায় চাষ করা ১০০ বস্তা আদা, পেঁপে বাগান ও ৩০ শতক জমির আমন বীজতলা ৪-৫ ফুট পানির নীচে তলিয়ে আছে।
এতে পাঁচ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

এই কৃষক বলেন, 'ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করেছিলাম। বৃষ্টিতে আমার আশায় গুঁড়ে বালি হয়েছে। এখন ঋণ শোধ করব কীভাবে, পরিবারকে খাওয়াবো কীভাবে?'
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মসরিকুল হাসান জানান, উপজেলায় ৫১০ হেক্টর আমন বীজতলা, দুই হাজার ২২০ হেক্টর আউশ ধান ও ২৮০ হেক্টর শরৎকালীন শাক-সবজি বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত হয়ে ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সুবর্ণচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুনুর রশিদ জানান, উপজেলায় ৫০০ হেক্টর আউশ ধান ও ৫০০ আমন বীজতলা তলিয়ে গেছে। তবে চরজব্বর ও চরজুবলি ইউনিয়নে বেশি ক্ষতি হয়েছে।
হাতিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল বাসেত সবুজ জানান, উপজেলার তমরুদ্দি, নলচিরা, চরকিং, সুখচর ও নিঝুমদ্বীপে আউশ ধান ও আমন ধানের বীজতলা নিমজ্জিত হয়েছে। ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে কাজ চলছে।
হাতিয়া উপজেলায় বেড়িবাঁধের বাইরে আউশ ধান ও আমনের বীজতলা তলিয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে নোয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মীরা রাণী দাস বলেন, 'আমরা বৃষ্টির মধ্যে মাঠ-পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেছি। জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত ফসল রক্ষায় বিভিন্ন কৌশল ও পন্থা বের করার পরামর্শ দিয়েছি।'
'আজ সকাল থেকে রোদ ওঠায় আশা করা যাচ্ছে নিমজ্জিত ফসলের অনেকাংশ রক্ষা পাবে। ক্ষয়-ক্ষতির চূড়ান্ত হিসাবে আগামী সপ্তাহে দেওয়া যাবে', যোগ করেন তিনি।
Comments