যেভাবে মালটা চাষে সফল হলেন

বরগুনা মালটা চাষ
মালটার পরিচর্যায় হাবিবুর রহমান। ছবি: স্টার

বরগুনার আমতলী উপজেলায় কুকুয়া ইউনিয়নের কেওয়াবুনিয়া গ্রামে ১৫ বিঘা জমিতে মালটা চাষে সাফল্য পেয়েছেন বিদেশফেরত মো. হাবিবুর রহমান মাতুব্বর।

এ ছাড়াও, হাবিবুরের বাগানে আছে বিভিন্ন জাতের আম, লিচু, লেবু, কলা ও পেঁপে। পুকুরে রয়েছে নানা প্রজাতির মাছ।

তার সমন্বিত খামারটি বিশেষ করে মালটা চাষ দেখতে প্রতিদিনই স্থানীয় কৃষকরা ভিড় করছেন। এলাকায় তার সাফল্য অন্যদের অনুপ্রাণিত করছে।

হাবিবুর রহমান প্রায় ২০ বছর সৌদি আরবে প্রবাস জীবন কাটিয়ে ২০১৫ সালে দেশে ফেরেন। সেসময় ইউটিউবে মালটা চাষে এক চাষির সফলতার গল্প শুনে তিনি অনুপ্রাণিত হন। পরে আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিএম রেজাউল করিমের পরামর্শ ও সহায়তায় ১৫ বিঘা ধানের জমি মাটি দিয়ে উঁচু করে সেখানে ৫ হাজার মালটার চারা রোপণ করেন।

বরগুনা মালটা চাষ
ছবি: স্টার

এক বছরের মধ্যে অল্প কিছু মালটা এলে তিনি তা প্রায় লাখ টাকায় বিক্রি করেন। এরপর প্রতি বছর ফলন বাড়তে থাকে, বাড়তে থাকে আয়। একই সঙ্গে বাগানে বাড়তে থাকে মালটা গাছের সংখ্যা।

মো. হাবিবুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ৪ বছরে কমপক্ষে ১২ লাখ টাকার মালটা বিক্রি করেছি। চলতি বছর যে ফলন হয়েছে তাতে ৪-৫ লাখ টাকার মালটা বিক্রির আশা করছি।'

মালটার পাশাপাশি হাবিবুরের বাগানে কাগজী লেবু, সবরি কলা, পেঁপে ও বোম্বাই জাতের লিচু রয়েছে। এ সব ফল থেকে তিনি বছরে ৩-৪ লাখ টাকা আয় করেন।

তার ৩ বিঘার ২ পুকুরে রুই, কাতলা, মৃগেল, চিংড়িসহ নানা প্রজাতির মাছ রয়েছে। এ থেকে তিনি প্রায় ৩-৪ লাখ টাকা আয় করেন। তবে মালটাই তার আয়ের প্রধান উৎস।

মালটা চাষে স্বাবলম্বী হাবিবুর রহমান এলাকায় একজন সফল চাষি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। সবাই তাকে আদর্শ কৃষক হিসেবে কদর করছেন। কৃষি কাজের জন্য প্রতিবেশীরা তার পরামর্শ নেন। তার সাফল্য দেখে নিজ গ্রামসহ আশ-পাশের গ্রামের অনেকেই বাড়ির আঙিনায় মালটা, পেঁপে, পেয়ারা, কলাসহ নানা জাতের ফল চাষ করে পরিবারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করছেন।

হাবিবুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিদেশে ছিলাম। মাত্র ৫ বছরের ব্যবধানে এখন আমি সফল মালটা চাষি হয়ে বছরে কয়েক লাখ টাকা আয় করছি। মালটাসহ নানা জাতের ফল ও পুকুরে মাছ চাষ করে আমি সফল এবং আদর্শ কৃষক হয়েছি। এ কাজে আমি গর্ববোধ করছি।'

কৃষক হারুন অর রশিদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হাবিবুর রহমান দেশে এসে মালটা চাষ করে সফল কৃষক হয়েছেন। তার সাফল্য দেখে গ্রামের অনেকেই মালটাসহ অন্যান্য ফল চাষ করছেন।'

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিএম রেজাউল করিমসহ কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা প্রায়ই হাবিবুরের খামার দেখতে আসেন। সিএম রেজাউল করিম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হাবিবুর রহমানের সফলতায় কেওয়াবুনিয়া গ্রামসহ আশ-পাশের অনেক কৃষক তাদের আঙ্গিনায় মালটা, পেয়ারা, পেঁপে, লিচুসহ নানা জাতের ফল চাষ করছেন।'

বরগুনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. বদরুল আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মালটা চাষ লাভজনক। সারা দেশে এর চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় কৃষকরা মালটা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।'

বরগুনায় চলতি বছর ২০ হেক্টর জমিতে মালটা চাষ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, প্রতি বছর মালটা চাষ বাড়ছে।

Comments