নোয়াখালীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ৩ নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে একটি ভবন নির্মাণের জন্য মাটি পরীক্ষা করার সময় লোহার পাইপ পল্লী বিদ্যুতের লাইনের সঙ্গে লেগে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে তিন নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কিসমত করিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন নরোত্তমপুর মহল্লায় এ ঘটনা ঘটে।
চৌমুহনী পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও পৌর প্যানেল মেয়র সাহাব উদ্দিন কাজল দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এ ঘটনায় মারা গেছেন সদর উপজেলার অশ্বদিয়া ইউনিয়নের সোনাপুর (বদরপুর) গ্রামের সিরাজ মিয়ার ছেলে মো. রিয়াজ উদ্দিন (২৩) ও উত্তর ওয়াবদা গ্রামের মো. জালাল মজুমদারের ছেলে শাকিল (২০) এবং কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার ডাগর গ্রামের শাহজাহান মুন্সীর ছেলে কামরুল হাসান (৩০)।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ারুল ইসলাম জানান, আজ সকাল থেকে একটি তিনতলা ভবন নির্মাণের জন্য মাটি পরীক্ষার জন্য কাজ করছিলেন পাঁচ শ্রমিক। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দুই শ্রমিক পার্শ্ববর্তী দোকানে নাশতা করতে যায়। তখন বাকি তিনজন পাইপ দিয়ে মাটি পরীক্ষার কাজ করতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা মাটি থেকে পাইলিংয়ের লোহার পাইপ টেনে তুলতে গেলে উপরে থাকা পল্লী বিদ্যুতের ২২০ ভোল্টের তারে তা লেগে যায়।
নিহত শ্রমিক রিয়াজের বড় ভাই রায়হান বলেন, 'নাস্তা খেয়ে এসে দুই শ্রমিক এই অবস্থা দেখে চিৎকার দিলে এলাকাবাসী এসে তাদের উদ্ধার করে চৌমুহনী বাজারের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাদের দ্রুত বেগমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।'
নিহত কামরুলের স্ত্রী শিউলি আক্তার জানান, এক বছর আগে তাদের বিয়ে হয়েছে। তারা কুমিল্লা বিশ্বরোড এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। চারদিন আগে কামরুল বাসা থেকে কাজ করার জন্য নোয়াখালী এসেছিল।
নিহত রিয়াজের মা আমেনা খাতুন ছেলের শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। বিলাপ করে বলছেন, 'আমার ছেলেকে আমার বুকে ফিরিয়ে দাও।'
রিয়াজের স্ত্রী কোহিনুর আক্তার বলেন, 'আমাদের মেয়ের বয়স ১৮ মাস। এখন ওকে নিয়ে কীভাবে বাঁচব?'
বেগমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অসীম কুমার পাল বলেন, 'দুপুর আড়াইটার দিকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট তিনজনকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। তাদের শরীরে ভিন্ন অংশ ঝলসে গেছে।'
নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মো. জাকির হোসেন বলেন, 'এ ঘটনার জন্য দালানের মালিক দায়ী। তারা বিদ্যুৎ বিভাগকে অবহিত করে কাজ শুরু করলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হতো। কিন্তু তারা বিদ্যুৎ বিভাগকে কিছুই জানায়নি।'
এ ঘটনায় নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান ওসি।
Comments